ঊরুর চোট ভুগছেন সাকিব
ঊরুর চোট ভুগছেন সাকিব

সাকিবের চোট আর ব্যাটিং–দুশ্চিন্তা নিয়ে পুনেতে বাংলাদেশ দল

চেন্নাই থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দূরের পুনেতে উড়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ দল কী নিয়ে গেল সঙ্গে? শুধু চেন্নাইয়ের কথা বললে অবশ্যই আরেকটা পরাজয়। একটু পিছিয়ে ধর্মশালাকেও যোগ করে নিলে বাংলাদেশের খেরোখাতায় তিন ম্যাচে দুই পরাজয়ের পাশে একটি মাত্র জয়।

রাউন্ড রবিন লিগের বিশ্বকাপ অনেক লম্বা পথ। যদিও ম্যাচের হিসাবে বললে এর এক–তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য চিন্তা করলে বেশ দ্রুতই। মাত্র সাত দিনে প্রথম তিনটি ম্যাচ। পরের ৬টি ম্যাচ হবে যেখানে ২৮ দিনে। বোঝাই যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে দুই ম্যাচের মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি পড়বে। সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতিটা এবারই। পুনেতে বাংলাদেশ পরের ম্যাচ খেলবে ভারতের বিপক্ষে। সেটি ১৯ অক্টোবর। চেন্নাই আর পুনের দুই ম্যাচের মাঝখানে পাঁচ দিন।

জয়-পরাজয়ের হিসাবটা দিতে গিয়ে মনে হলো, বিশ্বকাপে কত আজব সব ঘটনাই না ঘটে! এখানেও যেমন বিস্ময়কর একটা তথ্য চাইলে মনে করিয়ে দেওয়া যায়। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে একটা ম্যাচ বেশি জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথম তিন ম্যাচে বাংলাদেশের একটা জয় অনুমিতভাবেই এই বিশ্বকাপের আলোচনায় বুদ্‌বুদও তুলতে পারছে না। যা তুলছে প্রথম দুই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার অমন অসহায় আত্মসমর্পণ। এটা ভেবে তৃপ্তি বোধ করবেন কি না, এটা অবশ্য আপনার ব্যাপার।

বাংলাদেশের জন্য টানা দুই ম্যাচে পরাজয় মোটেই অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। বিশ্বকাপে কোনো না কোনো সময় পরাজয়ের মিছিল এর চেয়েও দীর্ঘ হবে, এটা তো জানাই ছিল। তবে অধিনায়কের চোটে পড়ে যাওয়াটা অবশ্যই ‘হতে পারে’র তালিকায় ছিল না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ ৮ উইকেটে পরাজয়ের চেয়েও বড় ওই দুশ্চিন্তা উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চাপে বাংলাদেশ

বাঁ ঊরুতে সমস্যাটা বোধ করেছিলেন ব্যাটিংয়ের সময়ই। সেই ব্যথা সামলেই ১০ ওভার বোলিং করেছেন। তবে স্লিপে দাঁড়াতে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সাকিব আল হাসানের দৌড়াতে অসুবিধা হচ্ছে। অদ্ভুত এক ম্যাচ, যেটি শেষ হওয়ার পরই দুই দলের অধিনায়ককে হাসপাতালে যেতে হয়েছে স্ক্যান করতে। একজনের পা, আরেকজনের হাত। কেইন উইলিয়ামসনের ঘটনাটাই বেশি মর্মান্তিক।

ছয় মাসের বেশি কষ্টকর পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শেষ করে এই ম্যাচ দিয়েই ফিরেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। যে কাজটা ঘুমের মধ্যেও করতে পারেন বলে কখনো কখনো ভুল হয়, সেই রানও করেছেন। নাজমুলের থ্রোটা বাঁ হাতে না লাগলে হয়তো সেঞ্চুরি করেই বেরোতেন। উল্টো আবার খেলার বাইরে ছিটকে পড়েছেন উইলিয়ামসন। হাতের হাড়ে চিড় ধরা পড়েছে। বিশ্বকাপে আবার কবে মাঠে নামতে পারেন, ঠিক নেই।
উইলিয়ামসনের ঘটনাটা বেশি মর্মান্তিক বলা এত দিন পর মাত্রই ফিরেছিলেন বলে।

তবে একদিক থেকে সাকিবের চোটের তাৎপর্য আরও বেশি। নিউজিল্যান্ডও উইলিয়ামসনকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে। তবে তা নিউজিল্যান্ড দলকে একেবারে পথে বসিয়ে দেবে না, সাকিবকে হারালে যা দেবে বাংলাদেশকে। উইলিয়ামসনকে ছাড়াও তো বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ দাপটেই জিতেছে নিউজিল্যান্ড।

উইলিয়ামসনের চোটের ব্যাপারে যেমন পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, সাকিবের ক্ষেত্রে তা নয়। প্রাথমিকভাবে দলের ফিজিও-চিকিৎসকেরা ধারণা করেছিলেন, এই চোট থেকে সেরে উঠতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে। এমআরআই স্ক্যান রিপোর্টে কী এসেছে, তা স্পষ্টভাবে না জানিয়ে সাকিবকে প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে আজ বিকেলে। এক সপ্তাহের ওই অনুমান যদি সত্যি হয়, তাহলে তো পরের ম্যাচের আগে লম্বা বিরতিটাও কম হয়ে যাচ্ছে। চিন্তাটা এমনই অস্বস্তিকর যে বাংলাদেশ দল এ নিয়ে আপাতত ভাবতেও চাইছে না। সাকিব নিজেও নিশ্চয়ই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা কোনোভাবেই মিস করতে চাইবেন না। সবকিছু তাঁর নিজের হাতে থাকবে কি না, এটাই হলো প্রশ্ন।

বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা

সাকিবের চোটে কিছুটা হলেও আড়ালে চলে গেছে, নইলে চেন্নাই থেকে পুনে উড়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ দলের সঙ্গী যে দুশ্চিন্তার কথা বলছিলাম, তা হলো ব্যাটিং। টার্নিং উইকেটের বদলে চেন্নাই এমন দারুণ ব্যাটিং উইকেট দিয়েছিল, অথচ সেখানেও কোনোমতে ২৪৫ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। টপ অর্ডার নিয়ে অনেক দিনের ভোগান্তি তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে এই ম্যাচেও। কিছু সমস্যা নিজেদের সৃষ্টি বলেও মনে হচ্ছে। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষা–নিরীক্ষায় একটু বিভ্রান্তই লাগছে ব্যাটসম্যানদের। নিউজিল্যান্ড ম্যাচ শেষে নাজমুল হাসান এ নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্নে দাবি করে গেলেন, এ নিয়ে ব্যাটসম্যানদের কারও কোনো সমস্যা নেই। যে কেউ যেকোনো জায়গায় খেলতে প্রস্তুত।

বললেই হলো! তা-ই যদি হতো, তাহলে কোন পজিশনে কোন ব্যাটসম্যান সবচেয়ে ভালো, এ নিয়ে ক্রিকেটে এত গবেষণা হতো না। যদিও গবেষণার কথা বললে এতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। বরং বলতে পারেন, তা একটু বেশিই হচ্ছে। গত দুই বছর অনেক ঝড়ঝাপটার পর তিন নম্বরে নাজমুলের মধ্যে একটা নির্ভরতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। সেই নাজমুল লেফট হ্যান্ড-রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশনের আজব যুক্তিতে তিন ম্যাচের দুটিতেই চারে নেমেছেন। মিরাজকে যেখানে খুশি তুলে দেওয়ায় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিককে নামতে হচ্ছে পরে। পাঁচ নম্বরে নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া তাওহিদ হৃদয়ই যেমন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেমেছেন সাত নম্বরে। মাহমুদউল্লাহ আটে। যিনি সর্বশেষ এত নিচে ব্যাটিং করেছিলেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, সেই ২০১০ সালে।

যা দেখে অনিল কুম্বলে রীতিমতো অবাক। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নেওয়ার বদলে তরুণদের কেন সামনে ঠেলে দেওয়া হবে, এটা মাথায়ই ঢুকছে না সাবেক ভারতীয় লেগ স্পিনারের। সবার জানা কথাটা মনে করিয়ে দিয়েছেন আবারও। বিশ্বকাপ এক্সপেরিমেন্টের জায়গা নয়।

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, আপনি কি শুনছেন?