২০২০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন লাসিথ মালিঙ্গা। আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেট দিয়েই, তবে ৩০ টেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০১০ সালে। এরপরও আরও ১০ বছর সক্রিয় ছিলেন সাদা বলের ক্রিকেটে। মালিঙ্গার মতোই অ্যাকশন, বোলিংয়ের ধরনেও মিল আছে মাথিশা পাতিরানার। তরুণ শ্রীলঙ্কান পেসারের টেস্ট ক্রিকেট বা লাল বলের ক্রিকেটের ধারেকাছেও যাওয়া উচিত নয়, মহেন্দ্র সিং ধোনি এমন মন্তব্য করলে তাই হয়তো এখনকার বাস্তবতায় খুব বেশি বিরোধিতা করবেন না আপনি। তবে বিরোধিতা করছেন পাতিরানার এখন পর্যন্ত উঠে আসার পেছনে যাঁর অনেক বড় অবদান, খোদ সেই মালিঙ্গাই!
চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে এবারের আইপিএলে পাতিরানা আলো ছড়াচ্ছেন, মালিঙ্গার সঙ্গেও তুলনা হচ্ছে হরহামেশাই। ডেথ ওভারে একটা নির্দিষ্ট ভূমিকায় চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি তাঁকে ব্যবহার করছেন দারুণভাবে। গত আগস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি খেলা পাতিরানাকে নিয়ে ধোনি বলেছিলেন, এই পেসারের শুধু আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলা উচিত। লাল বলের ক্রিকেটের ধারেকাছেও যাওয়া ঠিক হবে না।
তবে মালিঙ্গা এর সঙ্গে মোটেই একমত নয়। যা তিনি বলেছেন ক্রিকইনফোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে, ‘এমএস ধোনি বলছে, তার (পাতিরানার) শুধু আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলা উচিত। আমি জানি না, সে মজা করেই এমন বলেছে কি না। (কারণ) জাতীয় দলের হয়ে খেললে এমন করাটা কঠিন।’
তবে ধোনি কেন এমন বলেছেন, সেটির একটা ব্যাখ্যা আছে মালিঙ্গার কাছে, ‘আমার মনে হয়, কেউ যদি তাকে লাল বলের ক্রিকেট খেলতে নিষেধ করে, এর পেছনের কারণ তার চোটে পড়ার শঙ্কা। তবে আমি প্রথমে লাল বলের ক্রিকেটই খেলেছি। কেউ আমাকে অমন কিছু বলেনি। ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমি লাল বলে খেলেছি, কিন্তু আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ১৬ বছরের, আইপিএল ও বিগ ব্যাশসহ অন্যান্য লিগ খেলেছি। এই সময়ে আমি কখনো হ্যামস্ট্রিং বা কুঁচকি বা পিঠ বা পায়ের মাংসপেশির চোট নিয়ে মাঠ ছাড়িনি। হয়তো অনেকেই আমার কথার বিরোধিতা করবেন, তবে আমার মনে হয় না সে চোটে পড়বে এটি ধরে নেওয়া উচিত। আমি এভাবেই খেলেছি, তার মতোই বোলিং করতাম। ফলে চ্যালেঞ্জটা আমি জানি।’
টেস্ট ক্রিকেট তাঁকে কীভাবে সহায়তা করেছে, মালিঙ্গা মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘আপনার হাড়ের চোট হতেই পারে, কারণ সেটি নির্ভর করছে প্রতিটি বলে আপনি কতটা জোর দিচ্ছেন। তবে আমি তাকে বলব—টেস্ট ক্যাপটা নিতে। হয়তো একটাই খেলবে, হয়তো ১০টা খেলবে, হয়তো ১০০টি খেলবে—কে জানে! সে যখন ১৫-২০টি টেস্ট খেলবে, তার বোলিং ফিটনেস ও স্কিলের উন্নতিই হবে। সে বুঝবে কীভাবে ব্যাটসম্যানকে ‘সেট-আপ’ করে আউট করতে হয়, কীভাবে একটা স্পেল সাজাতে হয়। এটা আপনি তাকে বলে বোঝাতে পারবেন না। বুঝতে গেলে তাকে এটা করতে হবে। যদি টেস্ট খেলা শুরুর পর তার শরীরের প্রতিক্রিয়া বাজে হয়, তখন তো আপনি পুনর্বিবেচনা করতেই পারেন।’
পাতিরানা প্রথম নজর কাড়েন ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। মালিঙ্গা অবশ্য তাঁর কথা আলাদা করে জানেন সেই বিশ্বকাপের পর। সেই সময় শ্রীলঙ্কা দলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা মাহেলা জয়াবর্ধনে মালিঙ্গাকে জানান, ‘মালি, ক্যান্ডির একটা ছেলে আছে, তোমার মতোই বল করে, জোরেও করে। তবে তাকে ম্যাচ খেলানো মুশকিল। কারণ, সে উইকেটের দুদিকেই বল করে, নিয়ন্ত্রণ নেই। তুমি কি কিছু করতে পারবে?’
এরপরই পাতিরানার সঙ্গে কাজ করেন মালিঙ্গা। অ্যাকশন থেকে স্লোয়ার—সবকিছু নিয়েই। পাতিরানার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ‘গুরু’ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি গর্ব হওয়ার কথা মালিঙ্গার। সেদিক থেকে পাতিরানাকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রেও হয়তো অনেক বড় ‘অধিকার’ তাঁরই। সেই মালিঙ্গা বলছেন, পাতিরানা তাঁর চেয়েও ভালো হোন, এটাই তাঁর চাওয়া। তবে এ জন্য টেস্ট খেলার তেমন বিকল্পও দেখছেন না তিনি, ‘আমার মনে হয়, ঠিক পরের টেস্ট সফরেই তাকে সম্পৃক্ত করা উচিত। কিছু ওয়ানডে খেলানো উচিত। সে পরের তিন বছরে কেমন করে, সেটি দেখে ভবিষ্যতের করণীয় ঠিক করা যাবে। যদি পরের তিন বছরে ১০-১৫টি টেস্ট খেলে, তাহলে এটি তার উন্নতিতে অমূল্য হবে।’
মালিঙ্গা এরপর একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘যেমন ধরুন, একই সঙ্গে যে বল ডিপ ও রিভার্স করানো যায়, আমি সেটি ২০১০ সালে আমার শেষ টেস্ট ম্যাচে এসেই শিখেছি। গলে সাধারণত আমাকে ফোর্ট প্রান্ত থেকে করানো হতো, সে প্রান্ত থেকে বাতাসের কারণে বল রিভার্স করানো সহজ ছিল। ছয় বছর পর আমি অবশেষে প্যাভিলিয়ন প্রান্ত থেকে একটা ভালো স্পেল করি, সেখানেই শিখি কীভাবে বল ডিপ ও রিভার্স করাতে হয়। মাথিশা তার বোলিং নিয়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কবে করবে, সেটি তো কেউই বলতে পারে না। আমরা তাকে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলার জন্য বাঁচিয়ে রাখার কথা বলছি, যখন সে শ্রীলঙ্কার হয়ে ঠিকঠাক খেলেইনি। তার বয়স মাত্র ২০ বছর।’
তার বোলিং–বুদ্ধিমত্তা দরকার হবে, কারণ কয়েক ম্যাচ পরই প্রতিপক্ষ ওকে পড়ে ফেলবে। এরপর তো টিকে থাকা শিখতে হবে। আমার মনে হয় এর সেরা উপায় হচ্ছে ১০টি টেস্ট খেলা। এতেই বোলিং ফিটনেস গড়ে উঠবে।পাতিরানার প্রতি মালিঙ্গার পরামর্শ
পাতিরানার মতো অপ্রথাগত বোলারের ক্ষেত্রে শুরুটা অনেক সময়ই হয় চমক জাগানিয়া। তবে একটা সময় তাঁদের খেলার কৌশল বের করে ফেলেন ব্যাটসম্যানরা। আইপিএলে ধোনি তাঁকে শুধু ডেথ ওভারে স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষেই ব্যবহার করছেন, এটা মনে করিয়ে দিয়ে মালিঙ্গা বলেছেন, ‘তার বোলিং–বুদ্ধিমত্তা দরকার হবে, কারণ কয়েক ম্যাচ পরই প্রতিপক্ষ ওকে পড়ে ফেলবে। এরপর তো টিকে থাকা শিখতে হবে। আমার মনে হয় এর সেরা উপায় হচ্ছে ১০টি টেস্ট খেলা। এতেই বোলিং ফিটনেস গড়ে উঠবে। আমি ৩০টি টেস্ট খেলেছি, এটিই আমার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বোলিং ফিটনেস গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। কারণ, এক ইনিংসে ২৫-৩০ ওভার বোলিং করতে গেলে আপনার নিজের স্কিল ধরে রাখতে হবে স্পেলজুড়েই।’