১২১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন কেইন উইলিয়ামসন
১২১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন কেইন উইলিয়ামসন

৭৫ বছর পর শেষ বলে টেস্ট জয় দেখল ক্রিকেট বিশ্ব

আসিতা ফার্নান্দোর শর্ট বলটিতে পুল করতে চেয়েছিলেন কেইন উইলিয়ামসন। বল ব্যাটে না লাগলেও ছুটলেন রানের জন্য। জিততে হলে এই বলে যে ১ রান নিতেই হবে!

উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলা বল হাতে নিয়ে স্ট্রাইক প্রান্তে স্টাম্প ভাঙতে চাইলেন, হলো না। বোলার আসিতা বল তুলে নিয়ে থ্রো করলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। সরাসরি থ্রোয়ে ভেঙে গেল স্টাম্প।

উইলিয়ামসন কি পৌঁছাতে পেরেছেন, নাকি সেন্টিমিটার বা মিলিমিটারের ব্যবধানে আটকে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন? ম্যাচ কি টাই, না কিউইদের জয়?

মাঠের আম্পায়ার সাহায্য চাইলেন টিভি আম্পায়ারের। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর তৃতীয় আম্পায়ার জানালেন, উইলিয়ামসন আউট হননি। স্কোরবোর্ডে যোগ হলো নিউজিল্যান্ডের ১ রান। যে রানে পঞ্চম দিনের শেষ বলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটে জয় তুলেছে নিউজিল্যান্ড

৭৫ বছর পর টেস্ট ক্রিকেট দেখল শেষ বলে ম্যাচ জয়। ১৯৪৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ড শেষ বলে টেস্ট জিতেছিল। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে শেষ বলে টেস্ট জয়ের দ্বিতীয় ঘটনা এটি।

স্টাম্প ভেঙে গেছে, উইলিয়ামসন রান আউটের সম্ভাবনায় উল্লাস শ্রীলঙ্কা ফিল্ডারদের

শেষ বলে ম্যাচ হেরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার সুযোগ শেষ শ্রীলঙ্কার। জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট শিরোপার লড়াইয়ে খেলবে রোহিত শর্মার ভারত।

ক্রাইস্টচার্চে শেষ ঘণ্টায় নাটকীয়তা উপহার দেওয়া টেস্টের পঞ্চম দিনের শুরুটা ছিল ভিন্ন রকম। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৮৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১ উইকেটে ২৮ রান তুলে চতুর্থ দিন শেষ করে নিউজিল্যান্ড। শেষ দিনে জয়ের জন্য স্বাগতিকদের দরকার ছিল ২৫৭ রান, সফরকারীদের ৯ উইকেট।

জয়ের পথে ১২১ রান করে অপরাজিত থাকেন কেইন উইলিয়ামসন

দুই দলকে হতাশ করে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন খেয়ে ফেলে প্রকৃতি। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া আউটফিল্ড শুকিয়ে যখন খেলা শুরু হয়, ততক্ষণে ৩৭ ওভার নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৫৩ ওভারে আড়াই শর বেশি রান বা ৯ উইকেট তোলা—কোনোটিই সহজ বলে মনে হচ্ছিল না।

তবে বাঁহাতি স্পিনার প্রবাথ জয়াসুরিয়া দ্রুত টম ল্যাথাম (২৫) ও হেনরি নিকোলসকে (২০) তুলে নিলে ম্যাচে কিছুটা আশা দেখতে পায় শ্রীলঙ্কা। খানিকটা পিছিয়ে থাকা ওই সময়েই ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন উইলিয়ামসন।

উইলিয়ামসন–মিচেল চতুর্থ উইকেটে আসে ১৪২ রান

উইলিয়ামসনের আক্রমণ বলতে সিঙ্গেল–ডাবলসে রানের চাকা সচল রেখে এক প্রান্ত আগলে রাখা। আক্রমণাত্মক খেলেছেন মূলত মিচেল। এ দুজনের শতরানের জুটিতে ভর করে শেষ বিকেলে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে কিউইরা।

নিউজিল্যান্ডের যখন ৫০ বলে মাত্র ৫৩ রান দরকার, তখনই দৃশ্যপটে হাজির আসিতা। ডানহাতি এ পেসার প্রথমে মিচেল, এরপর টম ব্লান্ডেল ও মাইকেল ব্রেসওয়েলকে তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন।

৩ চার ৪ ছয়ে ৮৬ বলে ৮১ রান করে আউট হন মিচেল। তবে এক প্রান্ত আগলে ছিলেন উইলিয়ামসন। ১৭৭ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ধীরে ধীরে দলকে নিয়ে যান জয়ের দিকে।

নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে শেষ বলে জয়ের পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারদের উদ্‌যাপন

আসিথার করা দিনের শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান। প্রথম দুই বলে সিঙ্গেলের পর তৃতীয় বলে ঝুকিপূর্ণ ডাবলস নিতে গিয়ে রানআউট হন হেনরি। চতুর্থ বলে ৪ মেরে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান উইলিয়ামসন (১২১*)।

তবে পঞ্চম বলে বাউন্সারে ডট গেলে ম্যাচ গড়ায় শেষ বলে। যে বলের নাটকীয়তা তৃতীয় আম্পায়ার পর্যন্ত গড়ানোর পর দারুণ জয়ের উৎসব করেছে নিউজিল্যান্ড।