মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিমন
মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিমন

১৭২ রানে থামল বাংলাদেশের ঘটনাবহুল ইনিংস

প্রথম সেশনে ৪ উইকেট, দ্বিতীয় সেশনেও তা–ই। দিনের শেষ সেশনে এসে বাকি ২ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানে অলআউট বাংলাদেশ দল। মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংসটা ছিল ঘটনাবহুল, তা তো এতেই বোঝা যায়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট প্রত্যাশিতভাবেই স্পিনারদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

যা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে দুবার ধস নামায় নিউজিল্যান্ড দল। দুবারই দ্রুত চারটি করে উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে লড়াই করার মতো রান করার যা একটু সম্ভাবনা ছিল, সেটিও হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৬৬.২ ওভার। বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৫ রান এসেছে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে।

বাংলাদেশ দল আজ যখন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মেঘলা মিরপুর স্টেডিয়ামে জ্বলছে ফ্লাডলাইট। দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান ও জাকির হাসান ২৯ রানের জুটি গড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের পর দুই প্রান্ত থেকে কিউই স্পিনাররা বোলিংয়ে আসায় তালগোল পাকিয়ে বসে জাকির-মাহমুদুল জুটি।

কিছু বল টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিছু একই জায়গা থেকে সোজা হয়ে প্যাড ধেয়ে আসছিল। প্রথাগত ফরওয়ার্ড ডিফেন্স, ব্যাকফুট ডিফেন্সে যা সামলানো কঠিন। এমন উইকেটে ব্যাটসম্যানরা উপায় না দেখে মেরে খেলার পথটাই বেছে নেন। কখনো সেটা কাজে দেবে, কখনো নয়। কিন্তু টেস্ট জিততে হলে তো রান করতে হবে। বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে আজ সেটাই করতে চেয়েছেন।

১১তম ওভারে এসে নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন জাকির। তবে আক্রমণাত্মক শট খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। সিলেটে দুটি ইনিংসে বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের বলে আউট হওয়ার পর আজ তিনি উইকেট দিয়ে আসেন আরেক বাঁহাতি মিচেল স্যান্টনারকে। ভালো লেংথের বলে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে মিড অনে থাকা কেইন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তোলা জাকির ২৪ বলে ১ বাউন্ডারিতে করেছেন ৮ রান। আরেক ওপেনার মাহমুদুল আউট হন এজাজের স্পিনে। ১২তম ওভারেই শর্ট লেগে থাকা টম ল্যাথামের হাতে ধরা পড়েন ৪০ বলে ১৪ রান করা মাহমুদুল।

মুমিনুলের ইনিংস থেমে যায় ৫ রানে

সেখানেই শেষ নয়। চারে নামা মুমিনুল হকের (১০ বলে ৫ রান) ইনিংসও লম্বা হয়নি। ১৪তম ওভারে এসে তিনি কট বিহাইন্ড হয়েছেন এজাজের বলে ব্যাকফুট ড্রাইভ খেলতে গিয়ে। অথচ ক্রিজে এসেই দুবার একই শট খেলে দৌড়ে চার রান বের করেছিলেন মুমিনুল। তৃতীয় চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন এই বাঁহাতি। বাংলাদেশ দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৪১। দুই ওপেনারের পর স্পিনে আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেনও। ১৪ বল খেলে ১ বাউন্ডারিতে ৯ রান করে স্যান্টনারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন নাজমুল।

সে ধাক্কাটা অবশ্য মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসেনের জুটিতে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ৫৭ রানের জুটি গড়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে আরও একটি ধসের শুরু হয় মুশফিকের ভুলে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৪০.৪ ওভারে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হন মুশফিক। কাইল জেমিসনের করা সেই ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাকফুটে খেলেছিলেন ৩৫ রানে ব্যাট করা মুশফিক। বল ব্যাটে লেগে মাটিতে পড়ে অফের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

মুশফিক ইচ্ছাকৃতভাবে বলটি ডান হাত দিয়ে ধরেন

মুশফিক ইচ্ছাকৃতভাবে বলটি ডান হাত দিয়ে ধরেন। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা এতে আউটের আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লে দেখে মুশফিককে আউট ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হলেন মুশফিক।

উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন শাহাদাতও। ১০২ বল ক্রিজে থাকার পর গ্লেন ফিলিপসের লেগ স্টাম্পের বাইরের নিরীহ বলে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ রান। ফিলিপসের অফ স্পিনে মারতে গিয়ে উইকেট খুইয়েছেন নুরুল হাসানও (৭)। তবে মিরাজের ব্যাটে একটু একটু করে এগোচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোর।

মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনটি ভালোই কেটেছে নিউজিল্যান্ডের

সেই মিরাজও দ্বিতীয় সেশনের শেষে এসে স্যান্টনারের বলে স্লিপে ক্যাচ তোলেন। ৪২ বলে ২০ রানে থামে মিরাজের ইনিংস। নাঈম হাসান শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে বাংলাদেশের রানটাকে নিয়ে যান ১৭২ রানে। তাইজুল (৬) ও শরীফুলের (১০) সঙ্গেও ছোট ছোট জুটি গড়েন তিনি। নাঈম ৪৩ বল খেলে ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন স্যান্টনার ও ফিলিপস।