প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা জাস্টিন গ্রিভস ম্যাচসেরা হয়েছেন
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা জাস্টিন গ্রিভস ম্যাচসেরা হয়েছেন

অ্যান্টিগা টেস্ট

আংশিক রঙিন ক্রিকেট খেলে মিরাজদের বড় হার

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট মানেই বাংলাদেশের বিশাল হার। অ্যান্টিগায় আজ ২০১ রানের হারে সে ধারাবাহিকতাই বজায় থাকল।

কিন্তু টেস্টটাকে কি শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবেন? একটু বাংলাদেশের ডাগআউট থেকেও দেখুন না! হারের অংশটুকু বাদ দিলে সিরিজের প্রথম টেস্টে কিছু চমক বাংলাদেশও তো দেখিয়েছে।

শেষ ৩ উইকেটের ব্যাটিং বাদ দিলে কী নড়বড়েই না ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস! বাংলাদেশের বোলারদের সামনে ২৬১ রানে পড়ে গিয়েছিল ৭ উইকেট।

এরপর যে অষ্টম উইকেটে সেঞ্চুরিয়ান জাস্টিন গ্রিভস আর কেমার রোচ মিলে ১৪০ রানের জুটি গড়ে ফেললেন, সেই সুবাদে ৯ উইকেটে ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণার আগে শেষ ৩ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যোগ করল ১৮৯ রান; সেগুলো তাদের সাফল্যের খাতায় অলংকার হবে হয়তো। তাই বলে বাংলাদেশের বোলারদের প্রাপ্তিটাকে ভুলে যাবেন!

বাংলাদেশের ১৮ উইকেট নিয়েছেন এই পাঁচ পেসার—(বাঁ থেকে) শামার জোসেফ, আলজারি জোসেফ, কেমার রোচ, জেইডেন সিলস ও জাস্টিন গ্রিভস

নিজেদের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়েও ‘চমক’ উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯ উইকেটে ২৬৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। পরদিন সকালে কী পরিকল্পনা প্রত্যাশিত ছিল? শেষ দুই ব্যাটসম্যান উইকেট আঁকড়ে পড়ে থেকে যতটা সম্ভব সময়ক্ষেপণ করবেন, সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনবেন—এ–ই তো! কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে দেখা গেল, স্কোর ওই ২৬৯/৯-এ রেখেই ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছেন মিরাজ!

পরে জানা গেল, বোলাররা যেন চতুর্থ দিন সকালের কন্ডিশনের সুবিধা নিতে পারেন, সে জন্যই মিরাজের অমন সিদ্ধান্ত। বিলক্ষণ ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তও।

মিরাজ আরও বাহবা পাবেন এই কারণে যে তাঁর সিদ্ধান্তকে উদ্‌যাপন করতে গোলাপের মতো একটার পর একটা উইকেট এনে দিয়েছেন বোলাররা। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ; দুর্দান্ত বোলিংয়ে আগুন ঝরালেন যেন! ৬৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংই করে ফেললেন অ্যান্টিগায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস ধসে পড়ল ১৫২ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে

এরপরও জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩৪ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের এমন কোনো অতীত নেই যে এই অসাধ্যসাধনের আশা তারা করবে। উল্টো দ্বিতীয় ইনিংসটা ভেঙে পড়ল তাসের ঘরের মতো।

কাল চতুর্থ দিন শেষেই উঁকি দিচ্ছিল হারের দিগন্ত। ৩১ ওভার ব্যাটিং করে দিন শেষ ৭ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে। ১৫ রান করা জাকের আলীর সঙ্গে থাকা হাসান মাহমুদ তখনো প্রথম রানের দেখা পাননি।

পঞ্চম ও শেষ দিনে তাঁরা জাস্টিন গ্রিভস-কেমার রোচ হতে পারেননি। বাংলাদেশও পারেনি শেষ ৩ উইকেট নিয়ে লড়াইটাকে দীর্ঘ করতে। ৭ ওভার ব্যাটিং করেই ১৩২ রানে শেষ।

তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও বাংলাদেশকে ‘অলআউট’ বলা যাচ্ছে না। ৩৭তম ওভারের পঞ্চম বলে আলজারি জোসেফের বাউন্সারে ডাক করেও কাঁধে চোট পাওয়া এড়াতে পারেননি শেষ ব্যাটসম্যান শরীফুল ইসলাম। এরপর আর ১ ওভার ব্যাটিং করেই ‘আহত অবসর’ তিনি, ওখানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংসও।

তাসকিনের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং বাংলাদেশের কোনো কাজে আসেনি

দুই ইনিংসে একবারও অলআউট হয়নি বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আংশিক ও দ্বিতীয় ইনিংসে পুরোই ধসে পড়া, তাসকিনের বিধ্বংসী বোলিং—এত কিছুর পরও অ্যান্টিগা টেস্টের ফলাফল ‘বাংলাদেশ ২০১ রানে পরাজিত’। কারণটা তো বুঝতেই পারছেন। টেস্ট ক্রিকেটে ফলটা নিজেদের দিকে আনতে হলে আংশিক রঙিন ক্রিকেট খেললে হয় না, খেলতে হয় সম্পূর্ণ রঙিন ক্রিকেটই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৫০/৯ (ডি.) ও ১৫২

বাংলাদেশ: ২৬৯/৯ (ডি.) ও ৩৮ ওভারে ১৩২

(মিরাজ ৪৫, জাকের ৩১, লিটন ২২; রোচ ৩/২০, সিলস ৩/৪৫, আলজারি ২/৩২)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাস্টিন গ্রিভস।

সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।