হার্দিক পান্ডিয়া যখন আবার ‘সেরা অবস্থানে’ ফিরবেন, তখন সবাই তাঁর জয়গান গাইবেন, আর তিনি বসে বসে তা উপভোগ করবেন। এমন আশা মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ব্যাটিং কোচ কাইরন পোলার্ডের।
মুম্বাইয়ের নতুন অধিনায়ক পান্ডিয়ার সময়টা যে সুবিধার যাচ্ছে না, তা এখন জানা কথাই। সর্বশেষ গতকাল রাতে চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে ২০ রানে হেরেছে পান্ডিয়ার দল। শেষ ওভার করতে এসে ২৬ রান গুনেছেন পান্ডিয়া, পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ বলে ২ রান করে আউট হয়েছেন। যাঁকে সরিয়ে পান্ডিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুম্বাইয়ের, সেই রোহিত শর্মার অপরাজিত ১০৫ রানের ইনিংসও যথেষ্ট হয়নি আইপিএলের ইতিহাসে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা দলটির।
অধিনায়ক হিসেবে পান্ডিয়ার সমালোচনাও কম হচ্ছে না। ম্যাচের মাঝপথেই গতকাল সুনীল গাভাস্কার বলেছেন, ‘অনেক দিন পর এত বাজে ডেথ বোলিং দেখলাম। সাদামাটা বোলিং, সাদামাটা অধিনায়কত্ব। চেন্নাইকে ১৮৫ রানের মধ্যে আটকে রাখা উচিত ছিল।’
৩৮ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলা শিবম দুবে ব্যাটিংয়ের সময় কোনো স্পিনারকে আনেননি পান্ডিয়া। তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। স্টার স্পোর্টসে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেভিন পিটারসেন পান্ডিয়ার অধিনায়কত্ব নিয়ে বলেছেন, ‘আমি এমন একজন অধিনায়ককে দেখেছি, যার পাঁচ ঘণ্টা আগে টিম মিটিং থেকে পাওয়া “প্ল্যান এ” ছিল। এমন একজন অধিনায়ককে দেখেছি, যে “প্ল্যান বি”-তে যেতে চায়নি, যখন তার “প্ল্যান বি”-তে যাওয়া উচিত ছিল। মানে যখন পেসাররা ওভারে ২০ রান করে দিচ্ছে, তখনো কীভাবে আপনি কোনো স্পিনারকে আনেন না? ব্রায়ান লারা বলছিল, “দয়া করে কি একজন স্পিনারকে আনা যায়?” কাউকে তো বোলিং করতে হবে। আপনাকে ম্যাচের গতি বদলাতে হবে।’
তবে এমন সমালোচনার মধ্যেও নিজের সাপোর্ট স্টাফকে পাশেই পাচ্ছেন পান্ডিয়া। পোলার্ড যেমন কাল বলেছেন, ‘এটি তার আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলবে কি না, জানি না। সে আত্মবিশ্বাসী মানুষ, এ দলে দারুণ একজন। ক্রিকেটে আপনার ভালো দিন আসবে, খারাপ দিনও আসবে। আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখছি, যে নিজের স্কিলের উন্নতিতে অনেক খাটছে।’
টানা ৩ ম্যাচ হেরে মৌসুম শুরু করার পর টানা ২ ম্যাচ জিতেছিল মুম্বাই—গতকালের হারে সে জয়ের ধারায় ছেদ পড়েছে আবার। দলের পারফরম্যান্সের জন্য শুধু অধিনায়ককে দায় দিতে মোটেও রাজি নন মুম্বাইয়ের হয়ে ১৮৯টি ম্যাচ খেলা পোলার্ড, ‘একজনকে চিহ্নিত করার ব্যাপারটি নিয়ে আমি বিরক্ত। ক্রিকেট দিন শেষে দলীয় খেলা। ছয় সপ্তাহও নেই, এই মানুষটা তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। সবাই তখন তাকে উৎসাহ দেবে, সে যাতে ভালো করে সেটি চাইবে। ফলে তাকে উৎসাহ দেওয়ার এখনই সময়। এসব খোঁচাখুঁচি বাদ দিয়ে দেখা উচিত, ভারতের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের সেরাটি দেখা যায় কি না। সে ব্যাটিং করতে পারে, বোলিং করতে পারে। তার একটা এক্স-ফ্যাক্টর আছে।’
তবে সেই পান্ডিয়া এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও নিষ্প্রভ। ৬ ম্যাচে ১৪৫.৫৫ স্ট্রাইক রেটে ১৩১ রান করেছেন, বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন ১২ ইকোনমি রেটে বোলিং করে। মুম্বাইয়ে ২০১৫ থেকে ২০২১ সালে প্রথম দফা তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৩.৯১, গড় ছিল ২৭.৩৩। মাঝে গুজরাট টাইটানসের হয়ে দুই মৌসুমে মিডল অর্ডারে খেলা পান্ডিয়ার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৩৩.৪৯, তবে ৩৭.৮৬ গড় দিয়ে সেটি পুষিয়ে দিয়েছিলেন নিজের দায়িত্বটা পালন করে। তাঁর নেতৃত্বে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন গুজরাট পরের মৌসুমেও খেলেছিল ফাইনাল।
পান্ডিয়া মুম্বাইয়েও সামনে ভালো করবেন, সে ব্যাপারে আশাবাদী পোলার্ড, ‘হৃদয়ের অনেক গভীর থেকে আমি জানি, সে যখন সেরা ফর্মে ফিরবে, তখন আমি বসে বসে সবাই তার জয়গান গাইছে—সেটি দেখব।’
পোলার্ড এরপর বলেন, ‘আমি যা দেখছি, সে ক্রমাগত বদলাচ্ছে। আমরা হয়তো নির্দিষ্ট কিছু জিনিস দেখতে চাই, কিন্তু ক্রিকেটে সব সময় সেগুলোর চাহিদা থাকে না। যাত্রাপথে খেলোয়াড়েরা ভুল করবেই, আমরা সবাই করেছি। সে পরিশ্রম করেছে, পরিশ্রমের ফল পাওয়া যায়। ফলে সময় এলেই আমরা সবাই তার গুণগান করব।’