ফখর জামানের ফর্ম পাকিস্তানের জন্য বড় দুশ্চিন্তা
ফখর জামানের ফর্ম পাকিস্তানের জন্য বড় দুশ্চিন্তা

নড়বড়ে পাকিস্তান, রোমাঞ্চিত ডাচরা

হায়দরাবাদে আজ পাকিস্তান সামনে পাচ্ছে নেদারল্যান্ডসকে। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৬ ওয়ানডেতে জয় নেই ডাচদের।

ভারতের আতিথেয়তা, হায়দরাবাদি বিরিয়ানি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা এখন শেষ। পাকিস্তানের জন্য এবার শুরু ১৯৯২ বিশ্বকাপ–জ্বরে ভোগা। বিশ্বকাপ ক্রিকেট এলেই দেশটা আক্রান্ত হয় এই জ্বরে। ফিরে ফিরে আসে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ের সুখস্মৃতি।

সব বিশ্বকাপকেই কোনো না কোনোভাবে মিলিয়ে ফেলা হয় পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ওই সাফল্যের সঙ্গে। এবারও সে রকমই হচ্ছে। সেবার টুর্নামেন্টের আগে চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন তরুণ ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিস, এবার নাসিম শাহ। প্রস্তুতি ম্যাচের ফল, টুর্নামেন্টের ফরম্যাট—মিল আছে আরও। এসব মিল থেকে আশাবাদী হয়েই এবার পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শুরুর পালা। হায়দরাবাদে আজ তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ ১২ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরা নেদারল্যান্ডস।

টুর্নামেন্টের শুরুতে কাগজে-কলমে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দলটিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়া হয়তো সুবিধাই। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের টিম ডিরেক্টর মিকি আর্থারও বললেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের স্কিল নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তাদের স্কিল দুর্দান্ত। তাদের মধ্যে কারও কারও একটু আত্মবিশ্বাস আর ভালো পাফরম্যান্স দরকার। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে একটা পারফরম্যান্সই দরকার শুধু। আশা করি, কাল (আজ) সেটি পেয়ে যাব।’

পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা মূলত বোলার ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ফর্ম নিয়ে। নাসিম ছিটকে যাওয়ায় চাপ বাড়বে শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফদের ওপর। সঙ্গে আছে স্পিনারদের নিয়ে দুশ্চিন্তা। ভারতের মতো কন্ডিশনে নামার আগে যে ফর্ম খুঁজে ফিরছেন দলের সহ-অধিনায়ক ও লেগ স্পিনার শাদাব খান! আর্থার আলাদা করে বলেছেন শাদাবের কথাও, ‘তার প্যাকেজের দিকে তাকান—বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ। আলাদা করে বোলিংয়ের দিকে তাকালে একটু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাবে। তবে সে বল ঘোরানোর সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেনি। তারও একটামাত্র পারফরম্যান্সই দরকার।’

হায়দরাবাদে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের উইকেট দেখছেন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডয়ার্ডস

সে পারফরম্যান্সটা যে নেদারল্যান্ডস দলের বিপক্ষে আশা করছেন আর্থার, সেই ডাচদের লক্ষ্যটা আবার একটু আলাদাই। দলটির পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছে, সেমিফাইনালের লক্ষ্য নিয়ে ভারতে গেছে তারা। গতকালও তা আলাদা করে বললেন দলের অলরাউন্ডার বাস ডি লিডিও, ‘আমরা সেমিফাইনাল খেলতে চাই। তা করতে গেলে আমাদের চার-পাঁচটি ম্যাচ জিততে হবে। কাজেই অন্তত একটা বড় দলকে হারাতে হবে। সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

সেই বড় দলটা কি হবে পাকিস্তানই? এখন পর্যন্ত দুই দল খেলেছে মাত্র ৬টি ম্যাচ, ডাচদের জয় নেই একটিও। দুই দলের প্রথম দেখা হয় ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। যে ম্যাচে আবার খেলেছিলেন বাস ডি লিডির বাবা টিম ডি লিডি। অবশ্য বিশ্বকাপ সুপার লিগে গত বছর একটি সিরিজ খেলেছে তারা। পাকিস্তান তাতে ৩-০-তে জিতলেও দুটি ম্যাচে ব্যবধান ছিল মাত্র ১৬ ও ৯ রানের। এবার যে নেদারল্যান্ডস ও রকম আফসোসে পুড়তে চায় না, তা তো আর না বললেও চলে।

তবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পর নেদারল্যান্ডস এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেনি, তার ওপর বৃষ্টিতে ভেসে গেছে তাদের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচই। তাতে অবশ্য ডাচদের রোমাঞ্চ কমছে না। ডি লিডি যেমন বললেন, ‘আমরা সবাই রোমাঞ্চিত। মনে হচ্ছে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার জন্য ঠিক অবস্থানেই আছি। আশা করি, হারাতে পারব তাদের।’

ডিরেক্টর মিকি আর্থারের সঙ্গে পাকিস্তানের পেস তারকা শাহিন আফ্রিদি

এ ম্যাচ নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটে নিয়ে আসছে অন্য রকম এক উপলক্ষ। সেমিফাইনালের লক্ষ্য ঠিক করলেও বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়াটাই তো বড় অর্জন তাদের কাছে। গত চার বছরে এবারই প্রথম দেশটির জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হবে নেদারল্যান্ডস দলের কোনো ক্রিকেট ম্যাচ। তাদের লক্ষ্য সেমিফাইনাল, তবে সে পর্যন্ত যেতে না পারলেও নিজেদের নিয়ে গর্বিতই হবে ডাচরা। এখন শুধু সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেওয়ার পালা। পাকিস্তান ১৯৯২ সালের জ্বর ভুগলেও ডাচরা আছে নিজেদের ঘোরে। বিশ্বকাপ রোমাঞ্চের ঘোর।