ওভালে টসে জিতে জস বাটলার নিলেন ফিল্ডিং। বাবর আজমও নাকি সেটিই করতেন। বৃষ্টি হয়েছে, মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশন। টসে জিতে অধিনায়কের সিদ্ধান্ত অনুমিতই। এরপর পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামার সময় দেখা গেল সেই চেনা দৃশ্যটা—ওপেনিংয়ে নামছেন বাবর, সঙ্গী মোহাম্মদ রিজওয়ান।
পাকিস্তান ক্রিকেটে দৃশ্যটি অতি পরিচিত হলেও এ বছর এমন দেখা গেল এই প্রথমবার। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে তাহলে আবারও সেই বাবর-রিজওয়ানের ওপেনিং জুটিতেই ফিরে গেল পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসাবে সবচেয়ে সফল জুটি বাবর-রিজওয়ানের। এখন পর্যন্ত যে জুটিতে উঠেছে ২৪৫৯ রান। আর কোনো ওপেনিং জুটির ২ হাজার রানই নেই। তবে যে কটি জুটি কমপক্ষে ১৫০০ রান তুলেছে, সেগুলোর মধ্যে রান তোলার হার সবচেয়ে কম বাবর-রিজওয়ানের—৭.৯৬।
বাবর-রিজওয়ান শুরুতে বল খেলে ফেলছেন বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী রান তুলতে পারছেন না—এমন আলোচনা বেশ পুরোনোই। এ বছরের শুরুতে নতুন অধিনায়ক হিসেবে আসেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বাবর ও রিজওয়ানের ওপেনিং জুটি ভাঙে আফ্রিদির অধিনায়কত্বেই।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সাইম আইয়ুবের সঙ্গে ৩ ম্যাচের পর হাসিবুল্লাহ খানকে নিয়ে এক ম্যাচে ওপেন করেন রিজওয়ান। সে সিরিজে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ ২৩ রান তুলতে পেরেছিল পাকিস্তান।
এরপর দেশের মাটিতে একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে রিজওয়ানকে নামিয়ে ওপেনিংয়ে আসেন বাবর। সঙ্গী সেই সাইম। দুজনের অবশ্য একটা ৫৫ রানের জুটি ছিল। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ড সফরের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টনেও ফেরানো হয় রিজওয়ান ও সাইমের জুটি।
তবে সাইম ব্যর্থ হন বারবার। এ বছর ১২ ইনিংস খেলে ১৩.৫৮ গড়ে মাত্র ১৬৩ রান এ বাঁহাতির। সর্বশেষ ৪ ইনিংসে রিজওয়ানের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি ছিল ৭, ৬, ১৬ ও ০ রানের। সর্বশেষ সিপিএলে (ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) দারুণ করেছিলেন সাইম। তবে বিশ্বকাপের আগে সফল হতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। শেষ ম্যাচে দল থেকে বাদই পড়েন সাইম।
সাইম নেই, ফলে ব্যাপারটি অনুমিতই ছিল। আবারও সেই বাবর-রিজওয়ানেই ফিরছে পাকিস্তান। দুজনের শুরুটাও ছিল বেশ ভালো। ৫.৫ ওভারেই ওঠে ৫৯ রান। রান রেট প্রায় ১০। বাবর ছুঁয়ে ফেলেন ব্যক্তিগত একটি মাইলফলকও। বিরাট কোহলির পর মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪ হাজার রান পূর্ণ হয় পাকিস্তান অধিনায়কের।
কিন্তু পাওয়ারপ্লের শেষ বলে জফরা আর্চারের শিকার বাবর। ওপেনিং জুটি ভাঙে ৫৯ রানেই। অবশ্য এ বছর প্রথম উইকেটে এটিই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ। এ বছর এর আগের ১২টি জুটিতে সর্বোচ্চ ছিল ৫৫ রান। বাবর আউট হওয়ার পরের ওভারে রিজওয়ান বোল্ড আদিল রশিদের বলে। পাকিস্তানের পথ হারানোর শুরুও সেখানেই। মিডল অর্ডার এরপর ব্যর্থ, দারুণ শুরুর পরও পাকিস্তান আটকে গেল ১৫৭ রানেই।
ম্যাচ শেষে বাবর বলেছেন, মিডল অর্ডারকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে শুরুতে তিনি ও রিজওয়ান বেশি বল খেলে ফেলায় মিডল অর্ডার প্রায়ই ঠিকঠাক সুযোগ পায় না, সেটি পুরোনো কথা। আবার মিডল অর্ডার সফল হয় না বলে শুরুতে নেমেই আর দশটি ওপেনিং জুটির মতো হাত খুলে খেলেন না বাবর ও রিজওয়ান। পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং এই চক্রে আটকা বেশ কিছু দিন ধরেই। বিশ্বকাপের আগে সেটিই যেন নতুন করে শুরু হলো গতকাল।
দুজনের বিশ্বকাপের রেকর্ডটাও সুবিধার নয়। এ টুর্নামেন্টে বাবরের স্ট্রাইক রেট ১১৪.৪৭। রিজওয়ান সেখানে ব্যাটিং করেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে। বিশ্বকাপে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৫২ রানের জুটিতে ভারতকে যেমন হারিয়েছে পাকিস্তান, তেমনি সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৭১ রান তুলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার ঘটনাও আছে।
সর্বশেষ বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান ক্রিকেটে বদলেছে অনেক কিছুই। বোর্ড থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, অধিনায়ক—অনেক জায়গাতেই এসেছে পরিবর্তন। মাঝে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া বাবর ফিরেছেন আবার। এবার ফিরলেন ওপেনিংয়েও। সঙ্গী সেই পুরোনো রিজওয়ান। সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক অবশ্য বাবরকে চান ৩ নম্বরেই, ‘আমাদের মাঝের ওভারগুলোতে স্ট্রাইক বদলানোর জন্য তুমিই সেরা। তোমার দেখানো পথে মিডল অর্ডার অনেক ভালো করবে।’
পাকিস্তানও তাই বিশ্বকাপে যাচ্ছে সেই একই প্রশ্ন নিয়ে—বাবর-রিজওয়ানের ওপেনিং জুটিই কি ভরসা? নাকি এটিই অনেক বড় বাধা!