ব্যাট হাতে আজও ব্যর্থ লিটন দাস
ব্যাট হাতে আজও ব্যর্থ লিটন দাস

প্রথম বল খেলেই বুঝেছিলেন লিটন

সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলেতে রানের প্রবাহ নেই বললেই চলে। রান–খরায় ভুগতে থাকা কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য আর্নস ভেলের ২২ গজ তো আরও দুর্বোধ্য। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই মুহূর্তে এমন পিচ কার কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের মনে হওয়ার কথা, বুঝতেই পারছেন—লিটন দাস।

এ বছর সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে লিটনের ব্যাটিং পরিসংখ্যান কেমন, তা নতুন করে না বললেও চলছে। এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ওয়ানডে মিলে করতে পেরেছেন মাত্র ৬ রান। সেন্ট কিটসে শেষ ওয়ানডের পর সেন্ট ভিনসেন্টে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও মেরেছেন ‘গোল্ডেন ডাক’। তাঁর সাম্প্রতিক ব্যাটিং-অমানিশা শুধু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই দেওয়া।

সেই লিটন আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অনেকটা সাহস দেখিয়ে ওপেনিংয়ে ফিরেছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে তাঁর ভাগ্য বদলায়নি। আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পড হওয়ার আগে করতে পেরেছেন মাত্র ৩ রান; ১০ মিনিট টিকে থেকে গিলে ফেলেছেন ১০ বল। হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের পরও লিটন এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন—যাক, ‘গোল্ডেন ডাকের’ হ্যাটট্রিক তো হয়নি!

অবশ্য ম্যাচ শেষে এ নিয়ে কোনো দুঃখবোধ থাকার কথা নয় লিটনের। তাঁর নেতৃত্বেই যে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে; সেটাও এক ম্যাচ বাকি রেখেই! ২০১৮ সালেও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে সেই সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার লডারহিলে।

আজ আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের করা ১২৯ রানই যথেষ্ট প্রমাণিত হয়েছে আরেকবার বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে টেনেটুনে এক শর গণ্ডি পেরিয়ে (১০২)। দুই দল মিলে তুলেছে ২৩১ রান, যা বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সর্বনিম্ন। আর্নস ভেলের এই পিচে রান করা কতটা কঠিন, তা এই তথ্যেই স্পষ্ট।

লিটনও শুরুতেই বুঝতে পেরেছেন, এই পিচে ব্যাট করা সহজ হবে না। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে সেই কথাই বলেছেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, ‘শুধু আমি নই, বাংলাদেশের মানুষ আজ খুব খুশি। আমরা এমন জয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। যখন আমি (ম্যাচের) প্রথম বলটা খেললাম, তখনই বুঝতে পারলাম, এই পিচে ব্যাট করা খুব কঠিন হবে।’

ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলা পিচেও ব্যাট হাতে ‘লেটার মার্কস’ পেয়েছেন একজন—শামীম হোসেন। এই সিরিজ দিয়েই প্রায় এক বছর পর বাংলাদেশ দলে ফিরেছেন শামীম। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের সকালে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তিনি করেন ১৩ বলে ২৭ রান; স্ট্রাইক রেট ২০৭.৬৯। আজকের অবদান আরও বেশি—২০৫.৮৮ স্ট্রাইক রেটে ১৭ বলে অপরাজিত ৩৫।

কঠিন পিচেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন শামীম হোসেন

১৪.২ ওভারে ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল, তখন ব্যাটিংয়ে আসেন শামীম। দলীয় ৮৮ রানে রিশাদ হোসেনের আউটে সপ্তম উইকেট পড়লে সফরকারীরা আরও চাপে পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে শামীম দলকে শুধু উদ্ধারই করেননি, এনে দিয়েছেন লড়াই করার মতো স্কোর। গত কয়েক মাস হার্ড হিটিং নিয়ে কাজ করা ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারকে তাই ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি লিটন, ‘শামীমকে ধন্যবাদ, সে সত্যিই দারুণ ব্যাটিং করেছে।’

১০ বলে ৩ রান করায় ব্যাটসম্যান লিটনকে আপনি বড়জোর ১০-এ ৩ দিতে পারেন। কিন্তু অধিনায়ক লিটন ‘ফুল মার্কস’ পাওয়ার দাবিদার। নিকোলাস পুরানের আউট হওয়ার কিছুক্ষণ আগের দৃশ্যগুলো মনে করে দেখুন না। মেহেদী হাসান লাগাতার অফ স্টাম্পের বল করে যাচ্ছিলেন। তা দেখে লিটন মেহেদী স্টাম্প বরাবর বল করতে বলেছেন। প্রথম চার বল ডট করার পর অধিনায়কের কথামতো পঞ্চম বলটা মিডল স্টাম্পে করতেই স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পুরান!

নেতৃত্বে নজরকাড়া লিটন নিঃস্বার্থ অধিনায়কের মতো কৃতিত্বটা বোলারদেরই দিয়েছেন, ‘সব বোলারকেই কৃতিত্ব দিতে হবে। যখন আমরা উইকেট নিতে শুরু করি, যে-ই বোলিংয়ে এসেছে, উইকেট এনে দিয়েছে। এটা পুরোপুরি দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। এই মুহূর্তে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের আবারও ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’

লিটন দাসের পরামর্শ মেনে বল করেই সাফল্য পেয়েছেন মেহেদী হাসান

আগামী ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাইয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামবে, লিটন শেষ বাক্যটির মাধ্যমে নিশ্চয় সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন!