প্রায় ১৫ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন। সাকিব আল হাসান সব প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন বিস্তারিত। অল্প কয়জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতেও প্রশ্ন যখন ক্রমেই বাড়ছিল, একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমামকে বললেন, ‘দিন...আজকে সবাইকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিন।’
সাকিব বুদ্ধিমান অধিনায়ক। জানেন, ব্যর্থতার দিনে ব্যাখ্যা দেওয়ার যত বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে, তত তাঁর জন্যই ভালো। ভালো দলের জন্যও। শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার কাছে ২১ রানে হারের পর সাকিবের সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটাই তুলে ধরা হলো এখানে—
আসলে শুধু একটা আউট নিয়ে বলে লাভ নেই। এ রকম ঝামেলার উইকেটে আমরা ওপরের চারজন যদি একটা বড় জুটি করতে পারতাম, ড্রেসিংরুম অনেক বেশি শান্ত হয়ে যেত এবং আমাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ত। দ্রুত চারটা উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সব সময়ই আমাদের খেলাটা বদলাতে হয়েছে। ওখান থেকে ফেরা কঠিন ছিল। যদিও হৃদয়ের একটা বড় জুটি হয়েছে, তবে আরও বড় জুটি দরকার ছিল। ম্যাচ উইনিং ইনিংস খেলতে হতো হৃদয়কে।
এখানে প্রায় ২৬০ রান তাড়া করতে হলে খুবই ভালো ব্যাটিং করতে হতো আমাদের। এই উইকেটে বড়জোর ২৩০–২৪০ তাড়া করা সম্ভব। ২৬০ (২৫৭) অবশ্যই বেশি ছিল। তবে সেটাও বেশি মনে হতো না। যারাই ব্যাটিং করেছে বলেছে, দিনের চেয়ে ভালো ছিল উইকেট। সেই সুযোগটা আমরা নিতে পারিনি। আর আমরা ২০ রান বেশি দিয়ে ফেলেছি।
আমার মনে হয় না ওপেনিং নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা হচ্ছে। নাঈম চারটা ম্যাচই খেলেছে। প্রথম ম্যাচের পর দলে চোট বেড়েছে, লিটনও আসতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে অন্য কিছু চিন্তা করতেই হতো। বিশেষ করে আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়েছে মিরাজ ভালো অপশন। এই দুই দলে রহস্যময় স্পিনার আছে। ওদের বিপক্ষে মিরাজ সব সময় ভালো খেলেছে। ওপেনিং জুটি ৫০ রানের হয়েছে, ওটাই ৮০–৯০ রানের হলে খেলাটা অন্য রকম হতে পারত। নাঈম চার ম্যাচেই ভালো শুরু করেছে। এরপর আউট হয়ে যাচ্ছে। স্কিলের চেয়ে মানসিক জায়গায় ওর কাজ করতে হবে বেশি।
গত ছয় মাসে আমাদের ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবেই নিচের দিকে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আসলে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু যখনই রিয়েলিটি চেকটা হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যর্থই হয়েছি। এটা ভালো যে বিশ্বকাপের আগে আগে এই টুর্নামেন্টটা হয়েছে।সাকিব আল হাসান, বাংলাদেশ অধিনায়ক
ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই আমরা চিন্তিত। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা ভালো ব্যাটিং করছি না। সে জায়গাগুলো দেখার এবং চিন্তা করার আছে। বিশ্বকাপের আগে এই টুর্নামেন্ট খুবই কাজে দিয়েছে। রিয়েলিটি চেকটা দরকার ছিল আমাদের। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আমরা সব সময়ই ভালো খেলি। বলতে পারবেন না এসব সিরিজে আমরা কখনো খারাপ দল ছিলাম। আমাদের বড় পরীক্ষাগুলো হয় এ রকম বড় টুর্নামেন্টগুলোতে, যেখানে আমরা কখনোই আহামরি কিছু করি না। খেয়াল করলে দেখবেন, ২০০৭ বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ জিতেছি, ২০১১–এর বিশ্বকাপে তিনটি জিতেছি, ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনটি জিতেছি, ২০১৯ বিশ্বকাপেও তিনটি ম্যাচই জিতেছি। আমাদের ইতিহাস নেই বড় টুর্নামেন্টে ভালো করার। যদিও এশিয়া কাপে দু–তিনবার ফাইনাল খেলেছি, তবে জিতলে আরও ভালো হতো। গত ছয় মাসে আমাদের ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবেই নিচের দিকে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। আসলে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু যখনই রিয়েলিটি চেকটা হয়, তখন কিন্তু আমরা ব্যর্থই হয়েছি। এটা ভালো যে বিশ্বকাপের আগে আগে এই টুর্নামেন্টটা হয়েছে। সবাই অবশ্যই চিন্তা করবে এই সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়।
আমাদের মনে হয়েছে শুরুতে বোলাররা উইকেট থেকে সাহায্য পাবে। বৃষ্টির সম্ভাবনাও ছিল। টস জিতে ভালো হয়েছে এবং আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। আমার মনে হয় ওরাও এটাই নিত।
মেহেদী হাসান মিরাজ খুব ভালো ব্যাটসম্যান, ভালো টেকনিক আছে ওর। ওপেনিংয়ে তাকে ভূমিকা রাখতে হবে। কিছু দলের বিপক্ষে আমরা ওকে ব্যবহার করতে পারি। সে যে সেঞ্চুরি করেছে, এটা ফ্লুক নয়।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে তিনটি ম্যাচ আছে। সেখানে আমরা কিছু জিনিস দেখব। সবারই সুযোগ আছে খেলার। তবে এশিয়া কাপে যারা খেলেছে, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বকাপে নিশ্চিত যাবে, তাদের বিশ্রাম থাকতে হবে বলে আমি মনে করি। প্র্যাকটিস ম্যাচ, ট্রাভেলিং মিলিয়ে অনেক বড় সফর বিশ্বকাপে। কারও ইনজুরি হলে সমস্যা হবে। আমাদের হাতে ভালো বিকল্প নেই। সবার ফিট থাকাটা খুব জরুরি। ইবাদত নেই, আমি আশা করব চার পেসারই যেন ফিট থাকে।