রাওয়ালপিন্ডির আগেও বাংলাদেশের কাছে হেরেছে পাকিস্তান, তবে সবই ছিল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। লম্বা দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টই প্রথম। পাকিস্তান সমর্থকদের কেউ কেউ শান মাসুদদের ১০ উইকেটের হারকে পাকিস্তান ক্রিকেটের কালো দিন বলে মনে করছেন। তবে সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলী তা মানতে রাজি নন।
পাকিস্তানের হয়ে নব্বইয়ের দশকে খেলা এই ব্যাটসম্যানের মতে, কালো দিন হচ্ছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের হার। বর্তমান দলের হারের পেছনে দায়ী পাকিস্তান দলের মানের অবনতি ও বাংলাদেশ দলের ভালো খেলা। পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একাধিক খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বাসিত।
পাকিস্তানের হয়ে ১৯ টেস্ট ও ৫০ ওয়ানডে খেলা বাসিত নিয়মিত নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন। রোববার রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের হারের পর ‘বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে। ক্যানসার সারাতে ওষুধ নয়, কেমোথেরাপিই আসল চিকিৎসা’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের টেস্ট হারকে যাঁরা কালো দিন অভিহিত করছেন, তাঁদের ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে ওয়াসিম আকরামদের হারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বাসিত। তখন পর্যন্ত আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ না পাওয়া বাংলাদেশ নর্দাম্পটনে আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম–উল–হক, শোয়েব আখতার, সাকলায়েন মুশতাকদের নিয়ে গড়া পাকিস্তান দলকে ৬২ রানে হারিয়ে দিয়েছিল।
বাসিত সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে (আজ) পাকিস্তান ক্রিকেটে এটা কালো দিন। কেন এটা কালো দিন? কী কারণে? এর চেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে কি ’৯৯ বিশ্বকাপে হারিনি? ওটাই তো কালো দিন। এটা নয়।’
দুই যুগ আগের তুলনায় পাকিস্তানের বর্তমান দল অনেকটা দুর্বল বলে মনে করেন বাসিত। বিশেষ করে গত দুই বছরের পারফরম্যান্স ক্রমেই খারাপের দিকে গেছে বলে মত তাঁর, ‘দুই বছর ধরেই পাকিস্তান বাজে খেলছে। পারফরম্যান্স নিচের দিকে নামছে। যেটা অনেকেই বুঝতে পারছে না।’
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের জয়ে মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ভালো খেলা বড় কারণ মনে হচ্ছে বাসিতের। সঙ্গে কৃতিত্ব দিলেন অন্যদেরও, ‘বাংলাদেশ খুবই ভালো খেলেছে। ইতিহাস গড়েছে। সিনিয়র হিসেবে উদাহরণ তৈরি করেছে মুশফিকুর রহিম। সঙ্গে মেহেদী, মুমিনুল হক, সাদমান, ওরাও ভালো করেছে। উইকেটকিপার লিটন দাসও টপ ক্লাস খেলেছে। পুরো দলের জন্য আমার হাততালি। তাদের দুই স্পিনারই ভালো করেছে।’
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দলের আরও একটি ব্যবধানও চোখে পড়েছে বাসিতের। সেটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরো দল, খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা মিলে মাঠের পাশে বসে ছিল। পাকিস্তান প্রথম দিন যখন ব্যাট করেছে তখনো ছিল, পরের দিনও ছিল। মাঠের পাশে বসে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান দলে দেখলাম শান মাসুদ আর জেসন গিলেস্পি ছাড়া সবাই ভেতরে বসা। এর অর্থ হচ্ছে আপনি ভালো সময়ে সঙ্গে আছেন, খারাপ সময়ে নেই।’
পাকিস্তান দলকে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে হলে কিছু খেলোয়াড়কে বাদ দিতে হবে বলে মনে করেন বাসিত। ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে দল থেকে বাদ দিতে এবং পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফেরত পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে বাসিত বলেন, ‘শাহিনকে অবশ্যই বিশ্রাম দেওয়া উচিত। সে প্রথম শ্রেণিতে খেলুক। জাতীয় দল থেকে বিশ্রামে থাকা উচিত।’ পাকিস্তান কোচ জেসন গিলেস্পিকে পুরোনো পারফরম্যান্স বিবেচনায় না নিয়ে বর্তমান ফর্ম দেখারও পরামর্শ তাঁর।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৩০ আগস্ট।