দৃশ্যটা ভালো লাগেনি নাসের হুসেইনের। লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে বৃষ্টির কারণে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। বৃষ্টি থামার পর যখন খেলা শুরু হবে, তখন সবার আগে মাঠে নামেন দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা। ওদিকে ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটাররা তখনো তাদের ড্রেসিংরুমে পা তুলে বসে ছিলেন।
কই মেঘলা আকাশ আর সবুজ উইকেটের সুবিধা নিতে উন্মুখ থাকবে ইংলিশরা, সেটি না করে বেন স্টোকসরা মাঠে নামছিলেন হেলেদুলে। ধারাভাষ্যে এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় এ নিয়ে বেন স্টোকসের কড়া সমালোচনা করেন আরেক ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন।
ইংলিশদের ‘খামখেয়ালি’ দেখে পিটারসেনকে খুব বিরক্তই মনে হলো। তাঁর কথা ছিল এমন, ‘আপনি ওদের ব্যাটসম্যানদের দেখবেন ড্রেসিংরুম ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিল মাঠে নামার জন্য। ইংলিশরা তখনো ড্রেসিংরুমে। ওদের উচিত ছিল আগেভাবে মাঠে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে আউট করার চেষ্টা করা। এই দুই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান নিচে এসে ইংলিশদের অপেক্ষা করছে। এমন কন্ডিশনে ওদের তো ড্রেসিংরুমে বসে থাকার কথা।’
মাঠে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে ইংলিশদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণও দেখতে চান না পিটারসেন। ২০০৫ সালের অ্যাশেজের উদাহরণ টেনে তিনি বলছিলেন, ‘আপনার কি মনে হয় ২০০৫ সালে রিকি পন্টিং জোন্সের সঙ্গে খোশগল্প করত? মাইকেল ভন কি জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে জিজ্ঞেস করত, “তারপর, কেমন যাচ্ছে? দিনটা সুন্দর, তা–ই না? উইকেট কেমন? লর্ডসের পরিবেশ কেমন?” এটা কি মজা করার ব্যাপার? আমি আশা করব, ইংলিশ কোচ তাদের কড়া করে বকা দেবেন আর বলবেন, ‘‘যা করছ তা যথেষ্ট নয়।” আপনি এমন কন্ডিশন পেয়ে এই বোলিং করতে পারেন না। আপনি ৩৯০ করে ইনিংস ঘোষণা দিতে পারেন না। (স্টোকস) তোমার কি মনে হয়, অস্ট্রেলিয়া ৩৯০ করে ইনিংস ঘোষণা করে বলবে, “যাও এবার ব্যাটিং করো।” কোনো সম্ভাবনা নেই।’
ইংল্যান্ড যেভাবে খেলছে, সেটাকে তিনি অ্যাশেজ ক্রিকেটও বলতে রাজি নন। তাঁর কথা, ‘খুবই খারাপ। আপনার মাথার ওপর মেঘলা আকাশ। উইকেট সবুজ। আর আপনি বল করছেন ঘণ্টায় ৭৮-৭৯ মাইলে! আপনি মাঠে আসছেন, বলছেন দলের মধ্যে দারুণ পরিবেশ সৃষ্টি করছি। কিন্তু এটা অ্যাশেজ ক্রিকেট নয়। আমি অ্যাশেজ ক্রিকেট খেলেছি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০ টেস্ট খেলেছি। আমি জানি অ্যাশেজ ক্রিকেট কী জিনিস।’
আরেক সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে হতাশ করেছে ইংলিশদের বোলিং। কন্ডিশন যখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তখন ব্রড-অ্যান্ডারসনের কাছে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল স্ট্রাউসের, ‘সমস্যা হলো, ইংলিশ বোলাররাও হয়তো ভেবে নিয়েছিল বল ফেললেই কাজ হয়ে যাবে। হয়তো যথেষ্ট চেষ্টাও করেনি। ওরা কিছুটা এলোমেলো বোলিং করেছে। মনে হচ্ছিল ওরা প্রাণশক্তির অভাবে ভুগছে। ওরা নিশ্চয়ই হতাশ। কারণ, আজ সকালে অস্ট্রেলীয়দের চাপে রাখার তাদের দারুণ সুযোগ ছিল ইংলিশদের।’
মাইকেল ভন আছেন দুশ্চিন্তায়। লর্ডস টেস্টের প্রথম দিন ইংলিশ ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা পছন্দ হয়নি তাঁর, ‘আমার ইংল্যান্ডকে খুব খামখেয়ালি মনে হয়েছে। ওদের নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ওদের মধ্যে অতিরিক্ত খামখেয়ালিপনা কাজ করছে। ওদের কাছে এটা আট-দশটা ম্যাচের মতো। কিন্তু অ্যাশেজ আট-দশটা ম্যাচের মতো নয়। অন্য দলের বিপক্ষে আপনি যত ইচ্ছা খামখেয়ালি করেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আপনি কেমন করেন, এটা দিয়েই আপনাকে বোঝা যায়।’