বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সামনে শেষ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। শেষটা কি রাঙাতে পারবে বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সামনে শেষ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। শেষটা কি রাঙাতে পারবে বাংলাদেশ

ভারত থেকে উৎপল শুভ্র

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কী পেতে পারে বাংলাদেশ

এত বছরেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে জয় বলতে ২০০৫ সালের সেই কার্ডিফ। এবার কি ফিরবে ভাগ্য?

প্রথম দুই ম্যাচে অচেনা হয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া যদি স্বরূপে ফিরে টানা ছয় ম্যাচে না-ও জিতত, যদি গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অলৌকিক এক ইনিংসে সর্বশেষ জয়টা হার না-মানা দুর্জয় মানসিকতার বার্তা ছড়িয়ে না-ও দিত, তারপরও এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে থাকত।

কেন, জানতে চাইছেন? উত্তরটা খুব সহজ। বাংলাদেশ তো অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে না। কার্ডিফের কথা মনে করিয়ে দেবেন তো? হ্যাঁ, কার্ডিফ মনে আছে। সেই জয়ের মহানায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের প্রেসবক্সে নিত্য উপস্থিতি তা আরও বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে এই বিশ্বকাপে।

তা ওই এক কার্ডিফই। ২০০৫ সালে ত্রিদেশীয় ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর আগে বাংলাদেশের ‘বড়’ জয় বলতে ছিল দুটি। কার্ডিফের মাস ছয়েক আগে ভারত এবং এরও অনেক আগে, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান। কার্ডিফ দরজা খুলে দিয়েছিল সেই সময়ের বিচারে অনেক বড় বড় অঘটনের। এর মধ্যে কোনো কোনো দলের বিপক্ষে জয়টা এমনই নিয়মিত হয়ে যায় যে একসময় তা আর অঘটন বলেও বিবেচিত হয়নি।

টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে যাদের বিপক্ষে ওয়ানডে-জয় পেতে সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা, সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও এখন বাংলাদেশের পাঁচটি জয়। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর ১৬ বছর যে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে অবধ্য থেকে গেছে, সেই পাকিস্তানকেও ৫ বার হারানো হয়ে গেছে।  

২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ে দুর্দান্ত শতক পেয়েছিলেন আশরাফুল

৫ বারই সবচেয়ে কম। অন্য সব দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশ এর চেয়ে বেশিবার জিতেছে। জিম্বাবুয়েকে বাইরে রাখলে সবচেয়ে বেশি ২১টি জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের সংখ্যাটাও দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে (১০)। ভারতকে ৮ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ বার। অথচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের কথা বললে সবেধন নীলমণি হয়ে আছে ওই এক কার্ডিফ।    

কার্ডিফের আগে খেলা ৬টি ম্যাচকে না হয় বাদই দিন, তখন তো অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কথা ভাবাটাই ছিল বাড়াবাড়ি। কার্ডিফও ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটন বলেই গণ্য। কিন্তু এরপর? এরপর তো দুই দেশের ক্রিকেটই কত বদলের মধ্য দিয়ে গেছে। কার্ডিফ-পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪টি ম্যাচেও বাংলাদেশ কিছুই করতে পারেনি। একটাতেই শুধু হারেনি, কারণ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওভালের সেই ম্যাচে বৃষ্টি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

বাকি ১৩ ম্যাচে রানের হিসাবে সবচেয়ে ছোট পরাজয় ৪৮ রানের, উইকেটের হিসাবে ৪ উইকেটে। পরাজয়ের ব্যবধানের গড় বরং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পর ম্যাচ অসহায় আত্মসমর্পণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেবে। যে ৭টি ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাটিং করেছে, তাতে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে গড়ে ৮ উইকেটে। পরে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানের গড় ৮২ রানেরও বেশি।

কার্ডিফে সেই জয়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার

কেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন করুণ অবস্থা কেন? কার্ডিফে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার এর উত্তর দেবেন কি, রেকর্ডটা জেনেই রীতিমতো অবাক, ‘কী বলেন, আসলেই কি তা-ই? কার্ডিফের পর আর আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতিনি?’ নিশ্চিত করার সঙ্গে পরিসংখ্যানটাও জানানো হলো। এবার আরও বেশি অবাক। কীভাবে এমন হয়?

নির্বাচকের ভূমিকায় বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে থাকা হাবিবুল বাশারের কাছে রীতিমতো রহস্য মনে হচ্ছে এটিকে, ‘দেখুন, আমরা কার্ডিফে যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম, সেটি সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেরই সেরা ওয়ানডে দল। অস্ট্রেলিয়ার এর পরের দলগুলোর সঙ্গেও ওই দলের তুলনা হয় না। সেখানে বাংলাদেশ দল তো এরপর থেকে আরও ভালো হয়েছে। তারপরও কেন আমরা অস্ট্রেলিয়াকে আর হারাতে পারিনি, এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।’

কোনো দলের কাছে টানা হারতে থাকলে অনেক সময় একটা ‘মেন্টাল ব্লক’ তৈরি হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষেই যেমন হয়েছিল। সেটিকে সম্ভাব্য কারণ বলেও সরে এলেন হাবিবুল, ‘আমার মনে হয় না, এমন কিছু আছে।’ থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের এই দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার হয়তো জানেনই না যে, কার্ডিফের আগে-পরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো জয় নেই। হাবিবুল বাশারই তো জানতেন না!

সর্বশেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে আত্মবিশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ দল

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ইতিহাসের কথা বলে বাংলাদেশ দলকে কি একটু তাতিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন? না, তা করবেন না হাবিবুল। হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে ভেবেই। দলের প্রতি বার্তাটাকে বরং খুব সরল রাখতে চান, ‘আমি সবাইকে বলব, শেষ ম্যাচটা মন খুলে খেলতে। এই বিশ্বকাপে আমরা তো ব্যর্থই হয়েছি। আমাদের তো আর হারানোর কিছু নেই, শুধু পাওয়ারই আছে।’

এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাওয়ার কী থাকতে পারে, তা অবশ্য একটা প্রশ্ন বটে।