হৃদয়ের আউটটিই কি ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে
হৃদয়ের আউটটিই কি ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে

হৃদয়ের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রমিজ রাজা

এক দিন আগে নিউইয়র্কের উইকেটে ১১৯ রান তাড়া করে ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি পাকিস্তান, হেরেছে ৬ রানে। এরপর একই মাঠে ১১৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নাজমুল হোসেনের দল হেরেছে ৪ রানে।

এই হারের জন্য পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশেরও স্নায়ুচাপ সামলাতে না পারা এবং ম্যাচের পরিস্থিতি ঠিকঠাক বুঝতে না পারাকেই দায়ী করেছেন রমিজ রাজা। পাশাপাশি তাওহিদ হৃদয়ের আউটটাও বাংলাদেশে ভাগ্য বদলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক প্রধান।  

পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ কোথায় ভুল করেছে, তা উল্লেখ করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে রমিজ বলেছেন, ‘উপমহাদেশের আরও একটি দলের ম্যাচ জেতা উচিত ছিল এবং তারা জিততে পারেনি। যেখানে সমস্যা হয়েছে, তা হলো স্নায়ুতে। টেম্পারামেন্ট, জেতার ইচ্ছা, রান তাড়ার সক্ষমতা, আপনার ম্যাচ বুঝতে পারার ক্ষমতা—পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এসব কিছু প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেখুন, ১০০–এর কাছাকাছি স্কোর তো করা উচিত ছিল। উইকেট যেমন হোক, কন্ডিশন যেমন হোক, প্রতিপক্ষ যে–ই হোক (এই রান নিয়ে নেওয়া উচিত ছিল)।’

দক্ষিণ আফ্রিকার ভুলের সুযোগ বাংলাদেশ নিতে পারেনি জানিয়ে রমিজ আরও বলেছেন, ‘মানছি, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনআপ অনেক দারুণ। কিন্তু তারা তো পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করেই ফেলেছিল। তারা ব্যাটিং ঠিক করেনি। এরপর বোলিংয়ে শেষ ওভার স্পিনারকে দিয়ে করিয়েছে। কিন্তু এক দুই ফুটের দূরত্বে থেকে ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত ফসকে গেছে। মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মারার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অল্পের জন্য সেটা হয়নি। ২ বলে ৬ রান প্রয়োজন ছিল, মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মারতে চেয়েছিল কিন্তু সে আউট হয়ে গেল। এটাই আসলে পার্থক্য। ম্যাচটা আগেই জেতা উচিত ছিল।’

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজা

রমিজ এরপর যোগ করেন, ‘পাকিস্তানের মতো তারাও অপেক্ষায় ছিল জুটি হবে এবং আরামে জিতে যাব। কিন্তু এই উইকেটে জুটি গড়াও অনেক কঠিন। আর ম্যাচ পড়তে পারার ক্ষমতা পাকিস্তানের যেমন কম ছিল, বাংলাদেশেরও তেমনই ছিল।’

পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করার পাশাপাশি হৃদয়ের আউটটাও বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রমিজ, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আনন্দের এবং বাংলাদেশের জন্য হতাশার মুহূর্ত ছিল হৃদয়ের আউট হয়ে যাওয়া। সে দারুণ ব্যাট করছিল। সে সহজাত প্রতিভাও বটে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। কিন্তু রাবাদার বলে তাকে এমন একটি আউট দিয়ে দিয়েছে আম্পায়ার, যেটি না দিলেও পারত। ওই আউট নাও হতে পারত। সেটা ছিল আম্পায়ার্স কল এবং বল লেগেছে অনেক ওপরে। এরপর লেগ সাইড দিয়ে বল চলেও যাচ্ছিল। মনে হচ্ছে ভাগ্যও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। তখন আম্পায়ার যদি হৃদয়ের আউট না দিত; কারণ, সেটা আউট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছিল, তবে এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিততেও পারত। আর এমন সময়েই রাবাদা একটি দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে। যার ফলে হৃদয় আউট হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে গেছে।’

শেষ ওভারে কেশব মহারাজের ফুলটস বল পেয়েও ছক্কা মারতে ব্যর্থ হয়ে আউট হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সেটিকেও বাংলাদেশের হারের কারণ বলেছেন রমিজ, ‘কেশব মহারাজ শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাকে ফুলটস করেছিল, বাংলাদেশের একটি স্মরণীয় জয়ের জন্য একটি ছক্কা হলেই হতো। কিন্তু কী হলো? দুই ফুট দূরত্বে থেকে আউট হয়ে গেল সে। এটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দারুণ মুহূর্ত ছিল। প্রথমত, ওভারটি একজন স্পিনার করছিল। সাধারণত স্পিনাররা শেষ ওভার করে না। মাহমুদউল্লাহ যে ছক্কা মেরে অভ্যস্ত, সে তেমন একটি বলও পেয়ে গিয়েছিল। তার আওতায়ও ছিল বলটি। হয়তো সে অনেক বেশি ভেবে ফেলেছিল। যে কারণে অনেক জোরে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে গেল।’

বাংলাদেশের এমন হারের জন্য অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন রমিজ, ‘বাউন্সারে সাকিবকে নর্কিয়া আউট করে দিয়েছে। কিন্তু তার কাছে এত অভিজ্ঞতা এবং এত লম্বা সময় ধরে খেলছে, ১০০ রানের এই ম্যাচ তার জেতানো উচিত ছিল। এক–দুইটা জুটি বা এক–দুই ওভার আগ্রাসী খেললেই বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিতে যেত।’