২০০১ সালে প্রথম ম্যাচ, ২০০৭ সালে শেষ—লু ভিনসেন্টের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ৬ বছরের। এর মধ্যেই এক শর বেশি ওয়ানডে খেলা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মাইলফলক ছোঁয়ার স্বীকৃতি হিসেবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি) থেকে একটা স্মারক টুপিও পাওনা হয়ে গিয়েছিলেন তখন।
২০০৭ সালে ১০০তম ওয়ানডে খেলা সেই ভিনসেন্ট অবশেষে তাঁর স্মারক টুপিটি পেলেন ১৭ বছর পর, ২০২৪-এর আগস্টে। অকল্যান্ডে আয়োজিত একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানে ৪৫ বছর বয়সী ভিনসেন্টের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছেন কিংবন্তি পেসার স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট ৪০০ উইকেট নেওয়া হ্যাডলি যখন নিউজিল্যান্ডের প্রধান নির্বাচক ছিলেন, সে সময়েই প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন ভিনসেন্ট।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২৩ টেস্ট ও ১০২ ওয়ানডে ও ৯ টি-টোয়েন্টি খেলা ভিনসেন্ট শততম এক দিনের ম্যাচটি খেলেন ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেঞ্চুরিয়নের ম্যাচটিতে ব্যাট হাতে মাত্র ১৮ রান করলেও মিডিয়াম পেসার হিসেবে ক্যারিয়ারের একমাত্র উইকেটটি সেদিনই পেয়েছিলেন ভিনসেন্ট।
২০০৮ সালে জাতীয় দলে জায়গা হারালেও পরের ছয় বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন ভিনসেন্ট। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) তাঁকে কাউন্টি ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে আজীবনের নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ নিয়ে দীর্ঘ লড়াই শেষে ২০২৩ সালে ‘মুক্তি’ পান ভিনসেন্ট। ইসিবি ভিনসেন্টের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবরে বলা হয়, চলতি মাসের শুরুর দিকে ভিনসেন্টকে ডেকে তাঁর হাতে এক শ ওয়ানডের স্মারক টুপি তুলে দেয় এনজেডসি।
অকল্যান্ডে আয়োজিত অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল ভিনসেন্টের পরিবার, বন্ধু ও কয়েকজন সাবেক সতীর্থ। প্রায় দেড় যুগ পর স্বীকৃতির স্মারক হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান, ‘এটা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের চমৎকার স্বীকৃতি। যেসব মানুষ আমার ক্যারিয়ার ভালো এবং মন্দ সময়গুলোতে পাশে ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ বলতে পারার মুহূর্তটিও চমৎকার।’
এনজেডসির প্রধান নির্বাহী স্কট উইনিঙ্ক জানান, ভিনসেন্টের স্মারক টুপিটি ১৩ বছর আগলে রেখেছেন তারা। ম্যাচ পাতানোয় জড়িয়ে শাস্তি পাওয়া একজনকে কেন এমন সম্মান জানানো হচ্ছে, সেটিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন উইনিঙ্ক, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, সে যা কিছু করেছে, সেটা অমোচনীয়। সে-ই প্রথম ব্যক্তি যে (গড়াপেটার অভিযোগ) স্বীকার করেছে, প্রায়শ্চিত্ত করেছে। সে যা জানত, তা বলা এবং গড়াপেটার বিরুদ্ধে ওর মতো লড়াই আর কেউই করেনি।’
ভিনসেন্ট জানান, তাঁর হাতে টুপি তুলে দেওয়ার সময় নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার হ্যাডলি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ভিনসেন্ট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বলেন, ‘আমি তাঁকে বলতে পেরেছি ‘‘রিচার্ড, আপনিই নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট, আপনিই আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়। কষ্ট করে অকল্যান্ডে এসে আমার হাতে টুপিটি তুলে দেওয়ায় ফুটে ওঠে কী অসাধারণ মানুষ আপনি, কত অমায়িক।’’ উনি তখন কাঁদছিলেন। স্যার রিচার্ডের চোখে জল ছিল।’
গত বছরের শেষ দিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি পাওয়া ভিনসেন্ট আপাতত পরিবার নিয়ে ব্যস্ততার কথা জানিয়েছেন, ‘জীবন থেমে থাকে না। আমার জীবনও চলে যাচ্ছে। একটা ছেলে আর দুটো মেয়ে আছে। পারিবারিক জীবনে স্থির হওয়া, সৈকতের ধারে জীবন যাপন করা, এমন একটা সাধারণ জীবন নিয়েই আমি বেশ আছি।’