দুজনের মধ্যে কী অদ্ভুত মিল! বিরাট কোহলি দিল্লির ছেলে। উন্মুক্ত চাঁদও। দুজনই ভারতকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছেন। মিল আছে ব্যাটিংয়ের ধরনেও। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চাঁদকে অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি গ্রেগ চ্যাপেল বলেছিলেন, চাঁদই হবে পরবর্তী কোহলি। কিন্তু চাঁদের আর কোহলি হওয়া হয়নি। নিজের দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
চাঁদের নতুন স্বপ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা। বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে না থাকায় প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিগ ব্যাশে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বিপিএলেও তিনি প্রথম ভারতীয়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ড্রাফট থেকে দলে নিয়েছে চাঁদকে। বিপিএলে প্রথমবার, তবে বাংলাদেশ চাঁদের কাছে নতুন নয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম খেলতে এসেছিলেন ২০১৬ সালে। এরপর বলতে গেলে নিয়মিতই। বাংলাদেশের আলো–বাতাস, ক্রিকেটীয় আবহ তাই তাঁর খুব চেনা।
সেটাই ফুটে বেরোল তাঁর কথায়, ‘চট্টগ্রাম দলের কয়েকজনের সঙ্গে এর আগে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছি। অনেকেই আমার চেনা। আমি যতবার বাংলাদেশে এসেছি, অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমি যা চাই, মুহূর্তের মধ্যে সেটা হাতে চলে আসে। এর আগে যতবার এসেছি, এই স্বাচ্ছন্দ্যবোধটা আমার এখানে পারফর্ম করতেও সাহায্য করেছে। আশা করছি, এবারও তা–ই হবে।’
প্রিমিয়ার লিগ খেলার সুবাদে ঢাকার মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা আছে চাঁদের। তবে চট্টগ্রামে এবারই প্রথম। সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম হলো ব্যাটিং–স্বর্গ। যা জেনে স্বাভাবিকভাবেই খুব খুশি চাঁদ, ‘ঢাকায় প্রায় সব মাঠে খেলেছি, কিন্তু চট্টগ্রামে খেলা হয়নি। শুনেছি, এখানে উইকেট অনেক ভালো হয়। ব্যাটসম্যান হিসেবে এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে।’
২০২১ সালের আগস্টে নিজের দেশের ক্রিকেট ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন নতুন কিছুর আশায়। দিল্লির রাজ্যদল, আইপিএল ও জাতীয় দল—সব পথ বন্ধ হয়ে আসায় বাধ্য হয়ে দেশের হয়ে খেলার ইচ্ছাটাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব সহজ ছিল না, ‘খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। বড় হয়েছি ভারতের ক্যাপ পরার স্বপ্ন নিয়ে। হুট করে সে স্বপ্নটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে, আমেরিকায় চলে যাওয়ায় আমার অনেক দুয়ার খুলে গেছে।
আমি দেশের বাইরে নিয়মিত খেলতে পারছি, যা একজন ভারতীয় ক্রিকেটার পারে না। আর আমেরিকার হয়েও খেলতে পারব। এই যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু পাঁচ বছরের আগে যুক্তরাষ্ট্র নয়। এখন অনেক ভালো ক্রিকেটার আসছে। সামনে আরও আসবে। এখন আমাদের সেখানে খেলাটাকে এগিয়ে নিতে হবে।’
এ বছরই বিশাল বাজেটের যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি লিগ মেজর লিগ ক্রিকেট মাঠে গড়ানোর কথা। আইপিএলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো বিশাল অঙ্কের টাকা ঢালতে প্রস্তুত সে দেশের ক্রিকেট প্রশাসকেরা। আগামী বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজকও যুক্তরাষ্ট্র।
চাঁদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট যে গতিতে এগোচ্ছে, তা দ্রুতই ক্রিকেট–বিশ্বকে চমক দেবে, ‘আমি দুই বছর ধরে ইউএসএতে। আশা করছি, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি আমেরিকার হয়ে খেলতে পারব। বিশ্বকাপটাও হবে সেখানে। তখন আমেরিকা দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার দেখতে পাবেন। এ বছর মেজর লিগ ক্রিকেট হতে যাচ্ছে। পরের বছর বিশ্বকাপ। বেশ পেশাদারভাবে এগোচ্ছে সব। আমেরিকার ক্রিকেট কিছু চমক নিয়ে আসছে। শিগগিরই তা দেখতে পাবেন।’
আইপিএল ভারতের ক্রিকেটে যে প্রভাব ফেলেছে, মেজর লিগ ক্রিকেটও যুক্তরাষ্ট্রে সে রকম প্রভাব ফেলতে পারে। দুই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা থেকে চাঁদের এমনই বিশ্বাস, ‘সব জায়গায় ভালো ক্রিকেট হওয়াটা আসল। অবশ্যই আইপিএল সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। টাকাপয়সা অনেক।
বিশ্বের সব তারকা খেলার কারণে আইপিএল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণও হয়। অন্য দলগুলোও তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নিয়ে আসছে। হয়তো ভবিষ্যতে লিগগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমে আসবে। মেজর লিগের পরিকল্পনা এটাই। দ্রুত যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শক্ত পায়ে দাঁড়াতে পারে আমেরিকা, যেমনটা ভারতের ক্ষেত্রে করেছে আইপিএল।’
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হওয়ার সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও আছে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেশের বাইরের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সুযোগ নেই। উন্মুক্ত চাঁদ চুক্তির সেই বাধ্যবাধকতায় না থেকে উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছেন তাঁর পৃথিবী। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি খেলতে চেয়েছেন অন্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও। গত বছর বিগ ব্যাশে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে খেলেছেন।
এবার বিপিএল। চাঁদের মতো বিশ্ব ক্রিকেট চষে বেড়ানোর স্বপ্ন হয়তো এখন আরও অনেক ভারতীয়ই দেখছেন। চাঁদ অবশ্য প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন কৌশলে, ‘আমার সঙ্গে অন্য কাউকে মিলিয়ে কী হবে? আমি আমার পথ বেছে নিয়েছি। এটা আমার যাত্রা। আমাকেই পাড়ি দিতে হবে। তবে যখন একজন প্রথা ভেঙে ফেলে, সাধারণত অনেকেই সে পথ অনুসরণ করে।’
চাঁদের শেষ কথাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বিসিসিআইয়ের লোভনীয় চুক্তিও হয়তো বদলে যাওয়া টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় ভারতীয় ক্রিকেটারদের আটকে রাখতে পারবে না।