বনানীর শেরাটন হোটেলের দ্য গার্ডেন কিচেন রেস্তোরাঁর ঠিক বাইরে ছোট কিডজ জোন। তবে শুধু ‘কিডজ’ নয়, পরশু রাতে সেখানে একটা ছোটখাটো ভিড় লেগে গিয়েছিল বড়দেরও।
কিডজ জোনের উল্টো দিকেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মিটিং রুম আর সেই রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন দলটির কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। সবার অপেক্ষা রিজওয়ান কখন ছাড়া পাবেন সালাউদ্দিনের কাছ থেকে, কখন তাঁর সঙ্গে তোলা যাবে ছবি।
আলাপ শেষ করে কোচ চলে গেলেন মিটিং রুমের ভেতরে। এদিকে রিজওয়ান তখন সেলফিশিকারিদের ‘গ্রাসে’। এই পর্ব বেশ কয়েক মিনিট চলার পর প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিতে বসলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। কী আশ্চর্য, সশরীর না থেকেও কোচ সালাউদ্দিন একটু পরপর উঁকি দিয়ে গেলেন এই কথোপকথনেও!
আসলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে এসে রিজওয়ান সালাউদ্দিনকে যে ভূমিকায় দেখছেন, তাঁর জীবনেও এ রকম ভূমিকার একজন আছেন। পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ। সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারে হাফিজের ভূমিকার বিশদ বর্ণনাই দিয়েছেন কুমিল্লার হয়ে এ নিয়ে দ্বিতীয় মৌসুম বিপিএল খেলে যাওয়া রিজওয়ান।
ঘরোয়া ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের এক ঘটনার উল্লেখ করে রিজওয়ান বলেছেন, ‘ডিপার্টমেন্টে খেলার সেই সময় থেকেই হাফিজ ভাইকে চিনি। শুনেছি তখনই আমার আড়ালে হাফিজ ভাই ম্যানেজমেন্টকে বলেছিলেন, এই ছেলে বেঞ্চে বসে থাকার ছেলে নয়।’
ডিপার্টমেন্ট ক্রিকেটে অন্য একটা দল থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার রুপির প্রস্তাব পেলেও রিজওয়ান ২৫ হাজার রুপির প্রস্তাবে রাজি হয়ে সুই গ্যাস দলে নাম লিখিয়েছিলেন একটা কারণেই—ওই দলে ছিলেন হাফিজ, মিসবাহ–উল–হক, উমর আকমল ও আদনান আকমলের মতো ক্রিকেটাররা। তাঁর বিশ্বাস ছিল, এই দলের হয়ে মাঠে যদি খেলার সুযোগ না–ও পাওয়া যায়, শিখতে পারবেন অনেক কিছুই।
পরে অন্য এক প্রশ্নে রিজওয়ান বলেছেন, ‘আমি উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান, ওদিকে টেস্ট খেলোয়াড় আদনান আকমলও দলে। হাফিজ ভাই বলেছিলেন, আমাকে বসিয়ে না রেখে শুধু একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে হলেও খেলানো হোক। আমি যখন প্রথম দলে আসি, তখনই উনি আমার মধ্যে কিছু একটা দেখেছিলেন।’
ক্যারিয়ারের পরবর্তী সময়েও হাফিজের সহায়তা পেয়েছেন রিজওয়ান, পান এখনো। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই পাকিস্তানি ওপেনার টানলেন কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আর সাকিব আল হাসানের প্রসঙ্গ, ‘কেউ আপনাকে পুরোপুরি বুঝবে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সালাউদ্দিন স্যারের কথাই ধরুন। অনেক জুনিয়রকেই দেখি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চায়। এমনকি সাকিবও, যার আসলে কাউকে দরকারই নেই!’
কুমিল্লার অনুশীলনের সময়ই রিজওয়ান দেখেছেন তাঁদের নেট শেষ করে সালাউদ্দিনকে রংপুর রাইডার্সের ক্রিকেটার সাকিবের নেটে যেতে। রিজওয়ান বলেন, ‘তাকে (সাকিব) তিনি সময় দিয়েছেন, কারণ সাকিব সময়টা তাঁর কাছ থেকে চেয়েছিল। আমি যাকে ১০–২০ বছর ধরে দেখছি, আমি জানব কীভাবে তার সমস্যা দূর করতে হবে। অনেক সময় টেকনিকে সমস্যা থাকে না, সমস্যা থাকে মনে। কোচই সেটা বোঝেন। সালাউদ্দিন স্যার জানতেন সাকিবের কী প্রয়োজন এবং সেটাই তিনি তাকে বলেছেন।’
কুমিল্লার তরুণ ক্রিকেটারদের সালাউদ্দিন–নির্ভরতা দেখে রিজওয়ানেরও যেন মনে পড়ে যায় তাঁর শুরুর সময়ের কথা। যখন তাঁর সব সমস্যার সমাধান ছিল শুধু হাফিজের কাছেই, ‘দলের অন্য তরুণদেরও দেখি তাঁর সাহায্য নিতে। আসলে কোচ যদি একজন খেলোয়াড়কে ছোটবেলা থেকেই চেনেন, সেটা তাঁর জন্য বিরাট সুবিধা। সাকিবের ক্ষেত্রে সালাউদ্দিন স্যার সে রকমই একজন, আমার জন্য যেমন হাফিজ ভাই।’
খুলনা টাইগার্সের সঙ্গে ম্যাচ খেলে কাল রাতেই মুলতান সুলতানসের হয়ে পিএসএল খেলতে দেশে ফিরে গেছেন রিজওয়ান। খুব যে ভালো স্মৃতি নিয়ে যেতে পারলেন, তা অবশ্য নয়। বিপিএলে পাঁচ ম্যাচ খেলে রান করেছেন মাত্র ৮৫। কে জানে, দেশে ফিরে হয়তো ফর্মে ফেরার সূত্রের খোঁজে কড়া নাড়বেন হাফিজের দরজাতেই। সমস্যায় পড়লে সাকিবের নেটের পাশে যে রকম এসে দাঁড়ান অন্য দলের কোচ সালাউদ্দিন।
• মোহাম্মদ রিজওয়ানের পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন কাল অনলাইন ও প্রিন্টে।