সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

সাকিবের কোর্টে অধিনায়কত্বের ‘বল’

সভা শুরুর আগেই জানাজানি হয়ে গেল সভার ‘সিদ্ধান্ত’। সেটি হলো, জরুরি সভার পরও জানা যাবে না বাংলাদেশ দলের পরবর্তী ওয়ানডে অধিনায়কের নাম। অন্য সংস্করণের নেতৃত্বে বদল আনতে হবে কি না, জানা যাবে না সেটিও। অধিনায়ক ঠিক করার আগের অপরিহার্য কাজটাই যে তখনো করা হয়নি! সম্ভাব্য অধিনায়কদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি বিসিবির। কারও সঙ্গে কথা না বলে তো আর তাঁকে অধিনায়ক বানিয়ে দেওয়া যায় না।

মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের গতকালের জরুরি সভাটি তাই শেষ হয়েছে অধিনায়কত্বের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই। ও হ্যাঁ, একটা সিদ্ধান্ত অবশ্য হয়েছে। সভার পর বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুসই সেটি জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। বোর্ড পরিচালকেরা সবাই মিলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে দায়িত্ব দিয়েছেন সম্ভাব্য অধিনায়কদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। জালাল ইউনুস বলেন, ‘আশা করি, আমরা দুই–তিন দিনের মধ্যে, ১২ আগস্ট আমাদের ডেডলাইন আছে (এশিয়া কাপের দল ঘোষণার), তার আগেই অধিনায়ক ঠিক করে করে আপনাদের জানিয়ে দেব।’

গতকাল বিসিবির সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালন প্রধান জালাল ইউনুস

বোর্ড সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সভায় পরিচালকেরা দিয়েছেন তাঁদের মতামতও। সবার মতামতের যোগফল হিসাব করলে অবশ্য সম্ভাব্য অধিনায়ক একজনই—সাকিব আল হাসান। সূত্র জানিয়েছে, সভায় উপস্থিত সব পরিচালকই সাকিবকে ওয়ানডে অধিনায়ক করার পক্ষে মত দিয়েছেন। সাকিব তাতে রাজি হলে তিনি বাংলাদেশ দলের তিন সংস্করণেরই অধিনায়ক হয়ে যাবেন। তাতেও আপত্তি নেই কোনো পরিচালকের।

সাকিব যদি টেস্ট আর টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থেকেই ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব করার তৃতীয় দায়িত্বটি নেন, তা বরং সাদরেই গ্রহণ করবে বিসিবি। কাজেই বল এখন সাকিবের কোর্টে।

অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের পাশাপাশি কিছুটা আলোচনায় আছে লিটনের নামও

সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসের নামও আছে আলোচনায়। তবে অধিনায়ক হিসেবে লিটনের নাম আসবে তখনই, যখন সাকিব কোনো একটি সংস্করণে অধিনায়কত্ব করতে না চাইবেন। সে রকম হলে লিটনের ডেপুটি হতে পারেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

তবে অধিনায়কত্বের আলোচনাটা সে পর্যন্ত যাবে কি না, তা নির্ভর করছে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে সাকিবের আলোচনার ওপর। সাকিব রাজি হয়ে গেলে অধিনায়ক খোঁজার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে ওখানেই।

তবে তামিম ইকবাল গত বৃহস্পতিবার ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর পাঁচ দিন চলে গেলেও সম্ভাব্য অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনা কেন এখনো হয়নি, সেটা একটা প্রশ্ন। বিসিবির এক কর্মকর্তা এর ব্যাখ্যায় গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতার কথা বলেছেন। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অধিনায়ক ঠিক করতে হয় বোর্ড সভা করে। জরুরি সভা ডেকে সেই বাধ্যবাধকতাই পালন করা হয়েছে। বোর্ড পরিচালকেরা সভাপতিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়ার পর এখন নাজমুল হাসানের জন্যও বাকি কাজটা সহজ হয়ে গেল।

বিসিবি এখন সাকিবের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

আসলেই কি সহজ? নেতৃত্ব নেওয়ার ব্যাপারে সাকিব পাল্টা কোনো শর্ত দিলে তা বরং একটু কঠিনই হয়ে উঠতে পারে। কিংবা তিন সংস্করণের দায়িত্ব নিয়েও সাকিব যদি মাঝেমধ্যে কোনো সংস্করণ থেকে বিশ্রাম নিতে চান! বিশেষ করে অধিনায়ক হয়েও টেস্ট ক্রিকেটটা কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত খেলেন না তিনি। বিশ্বকাপের পরপরই যেহেতু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, বিসিবি আশ্বস্ত হতে চায় যে সাকিবকে সেখানেও অধিনায়ক হিসেবে পাওয়া যাবে। নয়তো লাল বল–সাদা বলে আলাদা অধিনায়ক করার দিকে ঝুঁকতে পারে বিসিবি।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততার কারণেও অনেক সময় ছুটি নিতে হয় সাকিবকে। সব মিলিয়েই ক্যারিয়ার নিয়ে সাকিবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাটা তাঁর সঙ্গে কথা বলে ভালোভাবে বুঝে নিতে চায় বোর্ড। বিসিবির দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়ক করার চিন্তা থাকলেও সাকিব যদি অন্তত বিশ্বকাপ পর্যন্তও ওয়ানডের নেতৃত্ব নেন, সেটাও মেনে নেওয়া হবে। কাজেই এটা বলেই দেওয়া যায় যে সাকিবকে ওয়ানডে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত বোর্ডের তরফ থেকে নেওয়া হয়ে গেছে। সাকিব রাজি না হলেই কেবল ‘প্ল্যান বি’ হিসেবে লিটনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

সাকিবের সঙ্গে কথা বললেব বিসিবি সভাপতি

অধিনায়ক ঘোষণা না হওয়ায় ঝুলে গেছে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে ২০-২২ সদস্যের দল ঘোষণাও। আজ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ঢাকায় এসে আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে আলোচনায় বসবেন নির্বাচকদের সঙ্গে। এরপরও অধিনায়কের মতামত জানা বাকি থাকবে। ক্রিকেট পরিচালনাপ্রধান অবশ্য বলেছেন, দুই–তিন দিনের মধ্যেই দল দিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে এশিয়া কাপের ১৫ সদস্যের দলও। এসিসির বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১২ আগস্টের মধ্যেই তা করতে হবে।