টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ফারিহা
টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ফারিহা

‘সৌভাগ্যে’র পিচে খেলা বলেই বিশ্বাস ছিল ফারিহার

ফারিহা ইসলাম প্রেস বক্সে এলেন মুখে সারল্যমাখা হাসি নিয়ে। কী ঘটিয়ে ফেলেছেন, তা যেন উপলব্ধিতেই আসেনি!

অভিষেকের অনুভূতিটা জানতে চাইলে ২০ বছর বয়সী এই বাঁহাতি পেসারের সরল উত্তর, ‘অভিষেক ম্যাচ ছিল, চেষ্টা করেছি নিজের ভালোটা দেওয়ার। হ্যাটট্রিক হয়েছে, এতে অনেক খুশি অভিষেক ম্যাচেই স্মরণীয় কিছু করতে পারছি।’

ফারিহা জাতীয় দলের হয়ে এর আগে ওয়ানডে খেলেছেন, ছিলেন এ সংস্করণের সর্বশেষ বিশ্বকাপেও। তবে ২০ ওভারের খেলায় অভিষেকের ক্যাপটা পরার অপেক্ষা তাঁর অনেক দিনের। দলের সঙ্গে থাকছেন ঠিকই। কিন্তু খেলার সুযোগ হচ্ছিল না। আজ সকালে জানতে পারেন, মালয়েশিয়ার বিপক্ষে একাদশে থাকবেন। এর আগে দেশের হয়ে পাঁচটি ওয়ানডে খেলার কারণেই সম্ভবত ফারিহার মধ্যে তেমন কোনো রোমাঞ্চ কাজ করেনি।

তবে জাহানারা আলমের হাত থেকে অভিষেকের টুপি পাওয়ার মুহূর্তটি স্মৃতিতে জমিয়ে রাখতে চান ফারিহা, ‘ওনার কাছ থেকে ক্যাপ নিতে পেরে অনেক খুশি। উনি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, শুরু থেকে ক্রিকেটে আছেন। বাংলাদেশের সেরা পেস বোলার। ওনার কাছ থেকে ক্যাপ নিতে পেরে খুশি লেগেছে। উনি উইশ করেছেন, যেন ভালো করতে পারি।’

ভালো করার ব্যাপারে অবশ্য ফারিহা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। খেলাটা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বলেই মনে বাড়তি সাহস ছিল পঞ্চগড়ের এই পেসারের। এই মাঠেই গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৭ ম্যাচ খেলে ১২ উইকেট নিয়েছেন। জাতীয় লিগের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার ছিলেন ফারিহা।

জাহানারা আলমের হাত থেকে অভিষেকের টুপি নিয়েছেন ফারিহা

ফারিহার উত্থানও এই মাঠেই। ২০২১ সালে বাংলাদেশ গেমস নারী ক্রিকেটে ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। এর পর থেকেই জাতীয় দলের ডেরায় চলে আসেন। সিলেটের মাঠের সঙ্গে সখ্যতার প্রসঙ্গে ফারিহা নিজেই বলছিলেন, ‘এখানে খেলা হওয়ায় আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি ছিল। এনসিএলে কিছু ভালো খেলেছি। এই উইকেটটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। কারণ, যখনই আমি খেলি, ভালো কিছু চেষ্টা করি অথবা হয়। অভিষেক ম্যাচেই বিশ্বাস ছিল ভালো কিছু হবে বা করতে হবে।’

টি-টোয়েন্টি অভিষেকের জন্য যে অপেক্ষা করতে হয়েছে, উইকেটের জন্যও তাই। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল তুলে নেন ফারিহা। নতুন বলে নিয়ন্ত্রণটা ভালোই ছিল ফারিহার। সুইংও পাচ্ছিলেন বেশ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উইকেট আর আসছিল না। কী ভেবে নিগার সুলতানা পাওয়ারপ্লেতেই আরও একটি ওভারের জন্য ফারিহার হাতে বল তুলে দেন।

কপাল খুলে যায় তখনই। দারুণ তিনটি ইনসুইংয়ে মালয়েশিয়ার তিন ব্যাটার হয় পরাস্ত। ওই তিনটি বলেই বোঝা যাচ্ছিল, সুইং ও নিয়ন্ত্রণ ফারিহার অন্যতম হাতিয়ার। আজ ম্যাচ শেষে ফারিহা নিজেই বলছিলেন, ‘আমার শক্তির জায়গা হচ্ছে আমার স্পট বল। সহজাতভাবে আমি আউটসুইং পাই, যেটা বাঁহাতিদের বেলায়। ডানহাতিদের বেলায় যেটা ইনসুইং হয়। আমি যদি আমার জায়গায় বল করার চেষ্টা করি, আমার বলগুলো ভালোই হয়। কাজেই আমি আমার শক্তির জায়গা মনে করি স্পট বলটাই।’

ফারিহার শক্তির জায়গা স্পট বোলিং

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ক্রিকেটে এতটা পথ উঠে এসেছেন ফারিহা। মেয়েদের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার সামাজিক বাধা তো আছেই। ফারিহার উঠে আসাও তেমন পথ পেরিয়েই, ‘পঞ্চগড়ে ক্রিকেটটা মেয়েদের জন্য অনেক কঠিন। ক্রিকেট বলতে ছেলেদের ছাড়া মেয়েদের কিছুই নেই। আমাদের মাঠ আছে অথচ অনুশীলন করা যাচ্ছে না।’

এমন পরিবেশে মা–বাবার সমর্থন ছাড়া ক্রিকেটার হওয়া সহজ নয়। ফারিহার ভাগ্য এ ক্ষেত্রে ভালোই, মা–বাবার অনেক সমর্থন পেয়েছি। ক্রিকেটে আসার পেছনে আমার স্কুলের শিক্ষক আমিনুদ্দিন স্যারের অনেক সাহায্য ছিল।’