‘ভারতের ঝুলিতে আছে আশা, অস্ট্রেলিয়ার আছে রান। ২৭৯ রান।’
ইএসপিএনক্রিকইনফোর বল বাই বল ধারাভাষ্যে দিনের খেলা শুরুর আগে লিখেছিলেন সিদ্ধার্থ মঙ্গা। শেষ দিন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন আরও ২৮০ রান, ভারতের আশা করা ছাড়া আর কীই-বা করার ছিল! ভারতের সে আশা ২০১৩ সালের পর কোনো আইসিসি ট্রফি জয়ের। সেই আশা আর পূরণ হয়নি। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে এসে খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে ভারতকে। ওভালে পঞ্চম দিনে বর্ধিত প্রথম সেশনেই ৫৫ রান তুলতে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে রোহিত শর্মার দল। ফলে প্রথমবার ফাইনাল খেলতে এসে ২০৯ রানের জয়ে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়া—টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসরের শিরোপা গেল তাসমান-পাড়ের দুই দেশে। এর মাধ্যমে পুরুষদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ধরনের বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের কীর্তিও গড়া হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার।
পঞ্চম দিনে ভারতের আশার অন্যতম প্রতীক হয়ে ছিলেন ৪৪ রানে অপরাজিত বিরাট কোহলি। তিনি সিঙ্গেল নেন, ওভাল ফেটে পড়ে উল্লাসে। তবে যে টেস্টে ভারত প্রায় শুরু থেকেই পিছিয়ে, সেই টেস্টের চেহারা নিজের ব্যাটে বদলে দিতে পারেননি কোহলি।
দিনের সপ্তম ওভারেই ভারতের আশার পালে লাগে প্রথম ধাক্কা। ওভালের পঞ্চম দিনের পিচে অন্তত সকালে পেসারদের জন্য কিছু না কিছু থাকবে, অস্ট্রেলিয়ার এই আশা পূরণ হয়েছে। বোল্যান্ডের করা ওই ওভার শুরু হয়েছিল কোহলির বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন দিয়ে। অস্ট্রেলিয়া সে আউটের আশায় রিভিউও খরচ করে ফেলে। সে রিভিউ সফল হয়নি, অফ স্টাম্পের বাইরের পরের বলটি ছেড়ে দেন কোহলি। ওভাল আবার সরব হয়ে ওঠে ভারতীয় সমর্থকদের চিৎকারে। তবে সেটি স্তব্ধ হয়ে যায় ওভারের তৃতীয় বলে।
অফ স্টাম্পের বাইরের ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন ৪৯ রান করা কোহলি, দ্বিতীয় স্লিপে ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ। এক বল পর বোল্যান্ডের শিকার রবীন্দ্র জাদেজা, প্রথম ইনিংসে প্রতি-আক্রমণে ভারতকে আশা জুগিয়েছিলেন যিনি। অফ স্টাম্পের একটু বাইরে লেংথ বলে ছিল হালকা মুভমেন্ট, তাতেই খোঁচা দেন জাদেজা। ওভারের শেষ বলেও উইকেট পেতে পারতেন বোল্যান্ড, শ্রীকর ভরতের ক্যাচ স্লিপের একটু ওপর দিয়ে যাওয়াতে হয়নি সেটি। ১৭৯ রানে ৩ উইকেটের স্কোর নিয়ে ওভারটি শুরু হয়েছিল ভারতের, শেষ হয় ৫ উইকেটে ১৮৩ রানে।
ভারতের পরের আশার নাম ছিল রাহানে। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও ইতিবাচক ছিলেন, ভরতের সঙ্গে ৩৩ রানের জুটিও গড়েন, বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন নিয়মিত। কিন্তু স্টার্কের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে লেংথ পড়তে ভুল করে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। আউট হওয়ার পরপরই মাথায় চাপড় মেরে যেন নিজেকেই বুঝাচ্ছিলেন, কী ভুলটা করেছেন। কোহলির মতো তিনিও থামেন ফিফটির আগেই।
ভারতের গুটিয়ে যেতে এরপর খুব একটা সময় লাগেনি। রাহানের উইকেটের পরের ওভারে সফল নাথান লায়নও। এলবিডব্লিউর ব্যর্থ রিভিউ শেষে ফেরেন শার্দূল ঠাকুর। স্টার্কের বাউন্সারে এরপর উইকেটের পেছনে ক্যাচ তোলেন উমেশ যাদব, যেটি দারুণভাবে নেন ক্যারি। লায়নের বলে স্টাম্পিং থেকে বেঁচে যাওয়া ভরত এরপর ক্যাচ তোলেন সোজা ওপরে। অস্ট্রেলিয়া শিরোপার উল্লাসে মেদে ওঠে লায়নের বলে সিরাজ রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্যান্ডের হাতে ধরা পড়ায়। দ্বিতীয় ইনিংসে লায়ন ও বোল্যান্ড মিলেই নেন ৬টি উইকেট।
তবে ফাইনালের সেরা এদের কেউ নন, প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের জন্য সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন ট্রাভিস হেড।