শর্ট মিড উইকেট ও স্কয়ার লেগের মধ্যে খুব বেশি জায়গা নেই। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এ দুটি জায়গার ফিল্ডারের মধ্য দিয়ে বল বের করতে চাইলে দরকার নমনীয় কবজি। মুমিনুল হকের কবজিতে সেটুকু আছে। ‘ফ্লিক’ করায় বরাবরই দুর্দান্ত। মুমিনুল ছন্দে আছেন, সেই প্রমাণ এই শট।
মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া আফগানিস্তানের পেসার নিজাত মাসুদের একটি বলে ওই দুই ফিল্ডারের মধ্যে ‘ফ্লিক’ শট খেলে ফাঁকা জায়গা খুঁজে নেন মুমিনুল। আর তাতে মুমিনুল পৌঁছে যান ফিফটিতে।
৬৭ বলে করা ফিফটিতে ছিল ৭টি চার। যে গতিতে মুমিনুলের ফিফটি করেছেন, সেটি ধরে রেখেছেন পরের ফিফটিতেও। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি স্পর্শ করতে মুমিনুল খেলেছেন ১২৩ বল, মেরেছেন ১২টি চার। সেঞ্চুরিও করেছেন বাউন্ডারি মেরে। ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের বাউন্সারে ব্যাট ছুঁইয়ে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে বলটি বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে মুমিনুল পৌঁছে যান ১০১ রানে। এটি মুমিনুলের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি (৮০ স্ট্রাইক রেট)। তাঁর দ্রুততম (৮২.২৪) সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, টেস্ট ঘরানার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হুট করে দ্রুত রান তুলছেন কেন? মুমিনুলের বেশির ভাগ টেস্ট সেঞ্চুরির স্ট্রাইক রেট ছিল ৬০-এর আশপাশে। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মন্থর টেস্ট সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাল্লেকেলে টেস্টে তিনি ১২৭ রান করেছেন ৩০৪ বল খেলে, স্ট্রাইক রেট ছিল ৪১.৭৭। মুমিনুলের সর্বশেষ সেঞ্চুরিও এটি।
মুমিনুলও জানেন, তাঁর ব্যাটিংয়ের সহজাত ধরন দ্রুত রান করা। ছন্দে থাকলে মুমিনুল কবজির মোচড়ে সৃষ্টি করেন ‘গ্যাপ’। তাঁর লেট কাট কিংবা ল্যাপ সুইপ খুঁজে নেয় বাউন্ডারি। আর দ্রুতপায়ে সিঙ্গেল নেওয়া তো আছেই। তাতে রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।
গত এপ্রিলে প্রথম আলোর এক সাক্ষাৎকারে মুমিনুল এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার সেঞ্চুরিগুলোতে দেখবেন স্ট্রাইক রেট ৫০-৫৫–এর বেশি ছিল। যখন রান করিনি, তখন ৩০–এর ঘরে।’
সেদিন নিজের প্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের একটা কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল, ‘স্যার বলেছিলেন, তুমি যতই রান করো না কেন, তুমি যদি ১০০-ও করো, কিন্তু স্ট্রাইক রেট যদি ৩০ হয়, তার মানে তুমি ফর্মে ফেরোনি।’
মুমিনুলের আজকের সেঞ্চুরিকে তাহলে ফর্মে ফেরার আভাস বলাই যায়। ২০২১ সালে পাল্লেকেলের সেই মন্থরতম সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের ফিফটি মাত্র তিনটি। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২০২১ সালেই ৯২ বলে ৭০ রানের ইনিংস আছে একটি। পরের ফিফটি এসেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। সেখানে ৮৮ রান করতে মুমিনুল খেলেছেন ২৪৪ বল।
দল ম্যাচ জিতলেও সে ইনিংস নিয়ে মুমিনুল সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ, সেদিন মুমিনুল তাঁর চেনা ছন্দে খেলেননি, ‘ওটা তো আমার ন্যাচারের বাইরে। আমি যদি ওভাবে ১০টি ইনিংস খেলি, তাহলে হয়তো ৩টায় সফল হব। আমি আমি যেভাবে খেলে বড় হয়েছি, সেভাবে খেললে আমার সাফল্যের হার বাড়বে। হয়তো ১০টার মধ্যে ৭টায় সফল হব। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আমি যেটা খেলেছি, সেটা আমার ন্যাচারাল খেলা না।’
মুমিনুলকে স্বস্তি দিয়েছে গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে খেলা ৮৪ রানের ইনিংসটি। কারণ, সে ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৫৫। এমনকি গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলা ২২ বলে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংসেও নিজের ব্যাটিং ছন্দে সন্তুষ্ট ছিলেন মুমিনুল।
আজকের সেঞ্চুরিও মুমিনুলকে তৃপ্তি দেবে। তিন অঙ্ক স্পর্শ করার পর মুমিনুলের হেলমেট উঁচিয়ে ধরার ছবিতে সেটি স্পষ্ট।