নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন রশিদ খান
নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন রশিদ খান

রশিদের ঘূর্ণি–ফারুকির গতিতে ৭৫ রানেই শেষ নিউজিল্যান্ড, সুপার এইটের পথে আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের বোলিং বিভাগ যে এবার নিউজিল্যান্ডকে চমকে দিতে পারে, সেটার আভাস হয়তো কোনো না কোনোভাবে পেয়ে গিয়েছিলেন কেইন উইলিয়ামসন। নয়তো কি আর সংবাদ সম্মেলনে কিউই অধিনায়ক এমনি এমনি বলেন, রশিদ–নবী–ফারুকিদের নিয়ে গড়া আফগান বোলিং আক্রমণ তাঁর কাছে বড় হুমকি মনে হচ্ছে!

নিজেদের প্রথম ম্যাচে দাপট আর উপমহাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মিল থাকা গায়ানায় খেলতে পারাও আফগান–চমকের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত হলোও তাই। নিউজিল্যান্ডকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিল আফগানিস্তান। ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচটিতে রশিদ খানের দল জিতল ৮৪ রানের বড় ব্যবধানে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই এটি কিউইদের বিপক্ষে আফগানদের প্রথম জয়। নিজেদের প্রথম ম্যাচে উগান্ডাকে ১২৫ রানে হারিয়েছিল আফগানিস্তান।

প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান তুলেছিল আফগানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রশিদ খানের ঘূর্ণি ও ফজলহক ফারুকির গতির সামনে খেই হারিয়ে মাত্র ৭৫ রানে গুটিয়ে গেল কিউইরা।

উইকেট উদ্‌যাপনে সতীর্থদের মধ্যমণি ফারুকি

টানা দুই ম্যাচেই একপেশে জয় পাওয়ায় নেট রানরেটে গ্রুপের বাকি দলগুলোর চেয়ে যোজন-যোজন ব্যবধানে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বে আফগানদের শেষ দুই ম্যাচ পাপুয়া নিউগিনি ও সহ–আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দুই ম্যাচের একটিতে জিতেই সুপার এইট পর্ব নিশ্চিত করবেন রশিদ–নবীরা।

লক্ষ্য তাড়ায় এক পর্যায়ে ৫৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল নিউজিল্যান্ড। তখন নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল কিউইরা। টি–টোয়েন্টি কিউইদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ৬০, যা তারা একবার বাংলাদেশ, আরেকবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিল। দুটি ম্যাচই হয়েছিল বাংলাদেশে। ২০২১ সালে সাকিব–মাহমুদউল্লাহদের বিপক্ষে মিরপুরে, ২০১৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে।

শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সেই শঙ্কা দূর করতে পেরেছে টেলএন্ডার ম্যাট হেনরির ১২ রানের সুবাদে। হেনরি ছাড়া আর শুধু গ্লেন ফিলিপসই দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন। ফিলিপস করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান। বাকিদের ইনিংস ফোনের ডিজিটের মতো—০, ৮, ৯, ৫, ৪, ০, ৪, ২, ৩। আফগান অধিনায়ক রশিদ খান ও পেসার ফজলহক ফারুকি দুজনই ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। অন্য ২ উইকেট মোহাম্মদ নবীর।

পুরো নিউজিল্যান্ড দল গুরবাজের রানটুকুও করতে পারেনি

নিউজিল্যান্ডের অসহায়ত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে এই অংশটি পড়ার পর। আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ একাই যেখানে ৮০ রান করেছেন, সেখানে নিউজিল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ ৭৫। মানে, এক গুরবাজের কাছেই ৫ রানে হেরেছে কিউইরা!

উগান্ডার বিপক্ষে আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন ফারুকি। নেন ৯ রানে ৫ উইকেট। সেই ফারুকিই আজ নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারে ধস নামিয়েছেন। ইনিংসে প্রথম বলেই বোল্ড করেন ফিন অ্যালেনকে। সুবিধা করতে পারেননি চোট কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়েই ফেরা ডেভন কনওয়ে (৮) ও ড্যারিল মিচেল (৫)।

শুরুতেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে নিউজিল্যান্ডকে অতীতে বহুবার উদ্ধার করেছেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। কিন্তু আজ পারলেন না। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পর প্রথম বলেই আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটানসের সতীর্থ রশিদের শিকার হন তিনি। নিউজিল্যান্ড কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে।

এরপর রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী টপাটপ উইকেট তুলে নিলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে নিউজিল্যান্ড। উইকেট শিকারের শুরুটা করেছিলেন ফারুকি। হেনরিকে ফিরিয়ে শেষটাও করেছেন ফারুকিই।

সতীর্থের সঙ্গে রশিদ খানের এই উদ্‌যাপন কেইন উইলিয়ামসনকে আউট করার পর

এর আগে আফগানিস্তানকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দুজন উগান্ডার বিপক্ষে তুলেছিলেন ১৫৪ রান। আজ তাঁরা তুলেছেন ১০৩ রান, যা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোনো উদ্বোধনী জুটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ১০৫ রান ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বাবর আজম–মোহাম্মদ রিজওয়ানের। ইব্রাহিম ৪৪ রানে আউট হলেও গুরবাজ করেন সর্বোচ্চ ৮০ রান।

আফগানিস্তানকে শুরুতেই বড় জুটি গড়তে দিতে নিউজিল্যান্ডের বাজে ফিল্ডিং আর কেইন উইলিয়ামসনের প্রশ্নবিদ্ধ অধিনায়কত্বেরও দায় আছে। কিউই ফিল্ডাররা একাধিক ক্যাচ ছেড়েছেন, একটি রানআউটের সুযোগ নষ্ট করেছেন। নিশ্চিত এলবিডব্লুর সুযোগ থাকলেও উইলিয়ামসন রিভিউ নেননি। তবে এখন আর আক্ষেপ করে লাভ নেই। দিনটা যে ছিল শুধুই আফগানদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৯/৬

(গুরবাজ ৮০, ইব্রাহিম ৪৪, আজমতউল্লাহ ২২, রশিদ ৬; বোল্ট ২/২২, হেনরি ২/৩৭, ফার্গুসন ১/২৮, মিচেল ০/১৬, স্যান্টনার ০/২৪, ব্রেসওয়েল ০/২৭)।

নিউজিল্যান্ড: ১৫.২ ওভারে ৭৫ অলআউট

(ফিলিপস ১৮, হেনরি ১২, উইলিয়ামসন ৯, কনওয়ে ৮; রশিদ ৪/১৭, ফারুকি ৪/১৭, নবী ২/১৬, নাভিন ০/১০, নুর ০/১০)।

ফল: আফগানিস্তান ৮৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান)।