বাংলাদেশ দলে পেসারদের ভূমিকা বদলেছে। একটা সময়ে পেসারদের কাজই ছিল বলটিকে কিছুটা পুরোনো করে স্পিনারদের হাতে তুলে দেওয়া। এখন বাংলাদেশের দলের পেসাররা শুধু নতুন বলে নয়, বোলিং করেন পুরোনো বোলিংয়েও, যেকোনো পরিস্থিতিতে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়েও পার্থক্যটা গড়ে দেন নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদরা। পেসারদের এমন উত্থান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের কাজটা সহজ করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকা ওপেনার তামিম ইকবাল।
রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। সব কটি উইকেটই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন বাংলাদেশের তিন পেসার—হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও তাসকিন আহমেদ। প্রথম টেস্টেও পেসাররা তাঁদের কাজটা করেছেন।
আলাদাভাবে নিজেদের জাত চেনানো বাংলাদেশ পেসারদের প্রশংসা করে ইএসপিএনক্রিকইনফোতে তামিম বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ভালো পেস বোলিং আক্রমণ পেলে ব্যাটসম্যানদের জীবনটা একটু সহজ হবে। সাধারণত যখন আমরা বাইরে সফর করি, উইকেটে অনেক ঘাস থাকে। এখন বাংলাদেশ পেসাররা যে সামর্থ্য দেখাচ্ছে, তাতে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষ কেমন উইকেট হবে, সেটা ঠিক করতে দুইবার ভাববে। আগে আমরা স্পিনারদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করতাম। আমাদের ভালো পেস বোলিং আক্রমণ ছিল না। প্রতিপক্ষ ঘাসের উইকেট রাখত, আমাদের কাজটা কঠিন হয়ে যেত।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি টেস্টেই টসে জিতেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে যা বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে বাড়তি সুবিধা। তামিমের কথাতেও এসেছে টস প্রসঙ্গ, ‘সত্যি বলতে প্রথম টেস্টে টসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। প্রথম টেস্টে বৃষ্টির পর বাংলাদেশ টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত দেয়। পাকিস্তান কঠিন কন্ডিশনে ব্যাটিং করেছে। দ্বিতীয় টেস্টে একই ঘটনা ঘটেছে। টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। টসে জেতাটা দারুণ ছিল। তবে টস গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটাই সব না। সব ছোট মুহূর্তগুলো বাংলাদেশ জিতেছে।’
দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাস ১৬৫ রানের জুটি গড়েন। মিরাজ ৭৮ রানে আউট হলেও লিটন পান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। এই জুটিই দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ম্যাচ ফিরিয়েছে।
লিটন-মিরাজ সম্পর্কে তামিম বলেছেন, ‘আমার মনে হয় ৬ নম্বর পজিশনটা লিটনের সঙ্গে অনেক মানানসই। এটাই ওর একমাত্র ভালো ইনিংস নয়। ৩-৪ পেছনে গেলেও একই ধরনের অনেক ইনিংস দেখা যাবে, এর বেশির ভাগই কঠিন পরিস্থিতিতে। ও যেভাবে ব্যাটিং করেছে, যে ধৈর্য ও দেখিয়েছে, কখনোই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল না। যা করতে চেয়েছে, সেটাই করেছে। মেহেদী মিরাজের অবদান ভুলে গেলেও চলবে না। ২৬ রানে যখন ৬ উইকেট পড়ে যায়, তখন মিরাজই পাল্টা আক্রমণ করে, এর পর থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। সারা বিশ্ব থেকে এই দুটো ছেলের অনেক প্রশংসা প্রাপ্য।’
এটাকেই টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন তামিম, ‘নিশ্চিতভাবেই টেস্টে বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। যেভাবে দল খেলেছে, তা অসাধারণ। আমরা সবাই জানি, রাওয়ালপিন্ডির উইকেট কেমন, এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক ভালো। বাংলাদেশের পেসাররা অবিশ্বাস্য ছিল। এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অসাধারণ একটা মুহূর্ত। ২৬ রানে আমাদের ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে ম্যাচ জেতা মানুষ অনেক দিন ধরে মনে রাখবে।’
তামিম যোগ করে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে টেস্টে আমাদের সাফল্যের ইতিহাস খুব একটা নেই। জাতি হিসেবে বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই জয় পুরো দেশকে একতাবদ্ধ করবে। আমি সব সময় বলি, ক্রিকেট পুরো দেশকে একতাবদ্ধ করে, দুনিয়াকে এক করে। বাংলাদেশের মানুষ যারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে সম্প্রতি, এই জয় তাদের আনন্দ দেবে।’