শুরুটা নিজের ক্যারিয়ারেই দেখেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস সূচনা করতে নেমেই সতীর্থ ম্যাথু হেইডেনকে বলেছিলেন, ‘দিস ইজ দ্য ফিউচার’।
হেইডেন তখন গিলক্রিস্টের কথায় পাত্তা দেননি। দুই বছর পর অবশ্য মানতে হয়েছিল, গিলক্রিস্টই ঠিক। দুজনকেই প্রথম আইপিএল নিলামে মোটা অঙ্কের টাকায় দলে টানা হয়। হেইডেন তখন বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যৎটা ২০ ওভারের ক্রিকেটেই। অস্ট্রেলিয়ার এই দুই সাবেক ক্রিকেটার তখন বুঝলেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এত দিনেও পারেনি। যে কারণে এখনো অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগ ‘বিগ ব্যাশ’ ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল গ্রহণ করেনি। বোর্ডের নিয়ন্ত্রণেই চলছে এই টি-টোয়েন্টি লিগ। তাই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের দিক থেকে বিগ ব্যাশ বরাবরই অন্যান্য টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে পিছিয়ে।
কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়া তো আর থেমে নেই। আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল অনুকরণ করে প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশই টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামী বছর ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) মহাসমারোহে শুরু করতে যাচ্ছে ২০ ওভারের লিগ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করবে।
নতুন দুই লিগই শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগের খেলাগুলোও হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এত দিন বিগ ব্যাশের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিপিএলে খেলা হয়ে এসেছে। সেদিক থেকে বিগ ব্যাশের প্রতিদ্বন্দ্বী যদি কোনো লিগ থেকে থাকে, সেটি বিপিএল। বিদেশি ক্রিকেটাররা যদি বিপিএলে বেশি টাকা পান, তাহলে বিগ ব্যাশে না গিয়ে বিপিএলে খেলার সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু নানা কারণেই বিপিএলের পেশিশক্তি বিগ ব্যাশের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার মতো ছিল না। তাই অস্ট্রেলিয়াকেও অতটা দুশ্চিন্তা করতে হয়নি।
তবে নতুন দুটি টি-টোয়েন্টি লিগের আবির্ভাবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আছে দুশ্চিন্তায়। বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়ার দুশ্চিন্তা তো আছেই। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটারদের বিগ ব্যাশে পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিশ্বকাপজয়ী উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্টের শঙ্কাটা সেখানেই।
অস্ট্রেলিয়ার একটি রেডিও চ্যানেলে গিলক্রিস্ট বলছিলেন, ‘এটা বড় ধাক্কা বলা যায়, তাই না? এটা দেশের সঙ্গে চুক্তি না করে ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছে। ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ক্রিকেটার যদি বিগ ব্যাশে না খেলে অন্য লিগে খেলেন, তাহলে এটা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাণিজ্যিক আত্মহত্যার মতো ঘটনা হবে।’
গিলক্রিস্ট আরও যোগ করেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড তো ওয়ার্নারকে বিগ ব্যাশে খেলতে বাধ্য করতে পারবে না। কিন্তু তাঁকে যদি যেতে দেওয়া হয়, অথবা অন্য কোনো ক্রিকেটারকে, তাহলে বড় ক্ষতি হবে। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাপটটা এখন স্পষ্ট হচ্ছে।’
ওয়ার্নারের উদাহরণ টেনেই গিলক্রিস্ট শোনালেন আরও একটি শঙ্কার কথা, ‘ডেভিড ওয়ার্নারের উদাহরণই দিই, আমরা কেউই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের প্রতি তাঁর নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সে দারুণ এক ক্যারিয়ার গড়েছে। এখন সে যদি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বলে, ‘দুঃখিত, আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ। আমি এখন বিশ্বের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের হয়ে খেলব।’ তাহলে আপনি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন না। কারণ, নিজের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করতে তাঁর যা করা দরকার, তিনি করেছেন। সে কারণেই আজ তাঁর বাজারমূল্য আছে। কিন্তু যদি তরুণ ক্রিকেটাররা এসে একই পথে এগোন, তখন এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।’