বেন স্টোকসকে খুব যে বেশি দূর যেতে হবে, তা নয়। অ্যাশেজের যে লম্বা ইতিহাস, তাতে ১৮ বছর তো খুব একটা বেশি সময়ও নয়। আর ২০০৫ সালের অ্যাশেজ যাঁরা দেখেছেন, ভোলার কথাও নয়। প্রথম ম্যাচ হেরেও কীভাবে পরের ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জেতা যায়, সেটা এখনকার ইংল্যান্ড অধিনায়কের ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। আর প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখা সেই সিরিজে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, চাইলে সেই মাইকেল ভনের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে এজবাস্টন টেস্টে ২ উইকেটে হেরে যাওয়াতেই স্টোকসের সামনে এখন ২০০৫ আর ভনের উদাহরণ। সেবার প্রথম টেস্টে লর্ডসে ২৩৯ রানে হেরেছিল ইংল্যান্ড। তবে পরের ম্যাচে ২ রানের জয়ে সমতা আনার পর শেষ পর্যন্ত ২–১ ব্যবধানে সিরিজ জেতে ভনের দল। অ্যাশেজ ইতিহাসে সেটি ছিল প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরও সিরিজ জয়ের সর্বশেষ নজির।
গত দেড় যুগে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার কোনো দলই অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচে হারের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তবে ভনের বিশ্বাস, যেসব দল ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি, তাদের সবার তুলনায় ইংল্যান্ডের বর্তমান দলটি সবচেয়ে ভালো। এজবাস্টন টেস্টের পর ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টোকসদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের এখনো অ্যাশেজ জেতার সুযোগ আছে। ২০০৫ সালে আমরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যাওয়ার পরও কিন্তু সিরিজ জিতেছিলাম। আমি জানি, ইংল্যান্ডের এই দলটাও বিশ্বাস করে তারা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে।’
স্টোকসের দল আসলেই পারবে কি না, সেটা আপাতত সময়ের হাতে তোলা। তবে অ্যাশেজের ইতিহাস ঘাঁটলে খুব বেশি অনুপ্রেরণা কিন্তু নেই স্টোকসদের জন্য। যেটুকু আছে, তার তুলনায় ভয়ের উপাদানই বেশি।
সেটা কেমন, কতটা ঘুরে দাঁড়ানো গিয়েছিল, কতটা যায়নি—এবার সেসবই চোখ বুলিয়ে দেখা যাক পরিসংখ্যানের খাতায়।
এ নিয়ে ৭৩তম বার অ্যাশেজে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া। এবারের আগপর্যন্ত ইংল্যান্ড প্রথম ম্যাচ হেরেছে মোট ২৯টি অ্যাশেজে। এর মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিততে পেরেছে মাত্র ৫ বার। যার প্রথমটি প্রথম অ্যাশেজে ১৮৮২-৮৩ মৌসুমে, সর্বশেষটি ২০০৫ সালে।
প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর ইংল্যান্ড অ্যাশেজ জিতেছে সর্বশেষ ২০০৫ সালে। লর্ডসে হেরে পিছিয়ে যাওয়ার পরের ম্যাচেই এজবাস্টনে জিতে সমতা এনেছিল ইংল্যান্ড। ম্যানচেস্টারে হওয়া তৃতীয় টেস্ট ড্র হওয়ার পর নটিংহামে ৩ উইকেটে জিতলে ব্যবধান দাঁড়ায় ২–১। এরপর ওভাল টেস্টও ড্র হলে ১৮ বছর পর ভস্মাধার উদ্ধার করে ভনের দল।
প্রথম অ্যাশেজ হিসেবে স্বীকৃত ১৮৮২–৮৩ মৌসুমের সিরিজেও অনেকটা এভাবেই জিতেছিল ইংল্যান্ড। মেলবোর্নে প্রথম টেস্ট ৯ উইকেটে জিতেছিল অস্ট্রলিয়া। একই মাঠে পরের টেস্টেই ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড, টাইমলেস সেই টেস্টে ইংল্যান্ড জেতে চতুর্থ দিনে, ইনিংস ও ২৭ রানের বড় ব্যবধানে। পরে সিডনিতে ৬৯ রানে জিতে অ্যাশেজ জয় করে নেয় ২–১ ব্যবধানে।
অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত সিরিজও হারতে হয়েছে, ইংল্যান্ডের জন্য এমন সিরিজ ২২টি। এর মধ্যে তারা ধবলধোলাই হয়েছে তিনবার—২০১৩–১৪, ২০০৬–০৭ ও ১৯২০–২১ মৌসুমে।
প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের সিরিজ ড্র করার রেকর্ড আছে দুটি।
সেই দুই ড্রয়ের একটি ইংল্যান্ডে হওয়া সর্বশেষ অ্যাশেজে ২০১৯ সালে। অস্ট্রেলিয়া এজবাস্টনে ২৫১ রানে জেতার পর লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র হয়। তৃতীয় টেস্টে হেডিংলিতে বেন স্টোকসের অবিস্মরণীয় ইনিংসে ১ উইকেটে জিতে সমতা আনে ইংল্যান্ড। পরের দুই টেস্টের চতুর্থটি অস্ট্রেলিয়া, পঞ্চমটি ইংল্যান্ড জিতলে সিরিজ সমতায় শেষ হয়। তবে তার আগের সিরিজ জেতায় ভস্মাধার নিজেদের কাছে রেখে দেয় অস্ট্রেলিয়া। এবার সেটিই ফিরে পাওয়ার লড়াই স্টোকসদের।