নাথান লায়নের মতো একজন খেলোয়াড় থাকা কোনো অধিনায়কের কাছে কেমন? প্যাট কামিন্সের বলা কথাটা এর উত্তরটা সহজ করে দিতে পারে। লায়ন যেদিন অবসর নেবেন, সেদিন নাকি অধিনায়কত্বই ছেড়ে দেবেন কামিন্স!
ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭২ রানে পাওয়া জয়ের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা ক্যামেরন গ্রিন। তবে চতুর্থ দিন সকালে এক সেশনেই নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পেছনে মূল ‘অবদান’টা তো লায়নেরই। হুট করেই স্পিন সহায়ক হয়ে ওঠা বেসিন রিজার্ভের উইকেটে লায়ন দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট, ম্যাচে ১০টি। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে লায়নের এটি প্রথমবার ৫ উইকেট। এ নিয়ে নয়টি ভিন্ন দেশে ৫ উইকেট নিলেন এ অফ স্পিনার, এমন কীর্তিতে ছুঁয়ে ফেললেন দুই স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নকে।
কামিন্স ভালো করেই জানেন, লায়নের উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ৩৬-পেরোনো লায়ন কত দিন খেলবেন আর? এর আগে তিনি নিজেই আভাস দিয়েছিলেন, ২০২৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে পরবর্তী অ্যাশেজ পর্যন্ত খেলে যেতে চান। সে সিরিজে ৪০ ছুঁই ছুঁই হবেন লায়ন। ১৯৮৬ সালে সাবেক লেগ স্পিনার বব হল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কেউ এত বছর বয়সে টেস্ট খেলেননি।
লায়ন যে তা পারবেন, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই কামিন্সের। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক বলেছেন, ‘একমাত্র বাধা হচ্ছে তার শরীর। যদি সে শরীরের খেয়াল রাখে, আর বছরে ১০টা বা যে কটিই হোক টেস্ট খেলার মতো ফিট থাকে, তাহলে ২০২৭ পর্যন্ত তাকে খেলতে দেখতে পারলে ভালো লাগবে আমার। আর আমার মনেও হয় না, খুব বেশি কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে এ ক্ষেত্রে।’
লায়নের ক্যারিয়ারের গতিপথের সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎটাও তাই বেঁধে ফেলেছেন কামিন্স, ‘আমি তাকে এরই মধ্যে বলে দিয়েছি, সে যেদিনই অবসর নেবে আমিও নিশ্চিতভাবেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেব। কারণ, এটা আমার জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে।’
টি-টোয়েন্টির এ যুগে যখন ফিঙ্গার স্পিনাররাও অনেক বৈচিত্র্যের দিকে ঝুঁকছেন, তখন ক্ল্যাসিক্যাল অফ স্পিনার যাকে বলে, লায়ন সেটিই। তাঁর অন্যতম অস্ত্রই হচ্ছে ক্রমাগত একই জায়গায় বল করে যাওয়া। আর তাতে ফিল্ডিং সাজানো থেকে শুরু করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নও অনেকটাই সহজ হয়ে আসে অধিনায়কের।
কামিন্স বলছেন সেটিই, ‘যেকোনো অধিনায়কের কাছে স্বপ্নের মতো। আর যে উইকেটে একটু সহায়তা আছে, সেখানে তার মানের একজন বোলারকে পেলে এমনিতেই অনেক নির্ভার থাকা যায়। ব্যাপারটা আসলে মজারও। যেহেতু আপনি যেখানে চান, ঠিক সেখানেই সে বল ফেলবে, ফলে আপনি ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রেও উদ্ভাবনী হতে পারবেন।’
সেটি দেখা গেছে এ ম্যাচেও। ৩৬৯ রানের লক্ষ্যে ৩ উইকেটে ১১১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ দিন অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন লায়নই। রাচিন রবীন্দ্রর বিপক্ষে পয়েন্ট অঞ্চল একেবারে জনাকীর্ণ করে রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দেন সেখানেই।
কামিন্সের মুখে লায়নের প্রশংসা তাই ফুরোবার নয়, ‘কদিন ধরে সে দুর্দান্ত ছিল। কয়েকটি পরিকল্পনা ধরে এগোতে হয়েছে ঠিকই, তবে মনে হয়েছে সব সময়ই তার নিয়ন্ত্রণ ছিল। চাইলে ‘প্ল্যান বি, সি বা ডি’-তেও যেতে পারতাম, তবে মনেই হয়নি দরকার আছে।’
এমন পিচে তিনি কার্যকরী হবেন, লায়ন সেটি বুঝেছেন দ্রুতই। কামিন্সের ভাষায়, ‘স্টার্কি (মিচেল স্টার্ক) ও জশ (হ্যাজলউড) একটি করে ওভার করার পরই সে (লায়ন) এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে, কখন বোলিংয়ে আসবে। দারুণ ব্যাপার। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়, আমাদের দলের প্রতিটি বোলারই এ মুহূর্তে এমন। সবাই ম্যাচজয়ী হতে চায়। কিন্তু যখন উইকেটে স্পিনের সঙ্গে বাউন্সও আছে, তখন গ্যাজের (লায়ন) হাত থেকে বলটা নেওয়ার চেষ্টা করেই দেখুন না!’