সমীকরণটা ছিল একদমই স্পষ্ট। সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান দুই দলের সামনেই জয়ের বিকল্প পথ ছিল না। টিকে থাকার এই লড়াইয়ে জিতল শ্রীলঙ্কা। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ফিফটিতে শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের ১৪৫ রানের লক্ষ্য টপকে গেছে ৬ উইকেট, ৯ বল হাতে রেখে।
সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ বাকি একটি। ৫ নভেম্বর দাসুন শানাকার দল খেলবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। সে ম্যাচের জয় তো পেতেই হবে, সঙ্গে রানরেট আর অন্য সমীকরণের মারপ্যাঁচের ওপর নির্ভর করছে শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল-ভাগ্য। আর এই হারে সেমিফাইনালে ওঠার পথ থেকে ছিটকে পড়ল আফগানিস্তান।
চলতি বিশ্বকাপে গ্যাবায় আগের দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে আগে ব্যাট করা দল। এ ছাড়া গত দুই বছরে (১ অক্টোবর ২০২০ থেকে ১ অক্টোবর ২০২২) এই মাঠে আগে ব্যাটিং করা দলই জয় পেয়েছে বেশির ভাগ ম্যাচে (৫৫ শতাংশ)। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আফগানিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। হয়তো পরিসংখ্যানটি মাথায় রেখেই এ সিদ্ধান্ত।
চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই। জাজাইয়ের জায়গায় আফগানিস্তান দলে নিয়েছিল গুলবদিন নাইবকে। ওপেনার জাজাইয়ের জায়গায় দলে আসা গুলবদিন ব্যাট করেছেন মিডল অর্ডারে।
আর রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে ইনিংস শুরুর দায়িত্ব পড়ে উসমান গণির কাঁধে। দুজনে মিলে শুরুটাও খারাপ করেননি। পাওয়ারপ্লেতে এই ব্যাটসম্যান মিলে তুলেছিলেন ৪২ রান। পাওয়ারপ্লে শেষে তাই বড় সংগ্রহ গড়ার স্বপ্নই দেখেছে আফগানরা। তবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ও ব্যাটসম্যানদের ইনিংস বড় না হওয়া তার কারণ। আফগান ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছালেও কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে গুরবাজ ২৮ রানে আউট হন। আফগান ইনিংসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ এটাই। আরেক ওপেনার উসমান ফেরেন ২৭ করে।
ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবউল্লাহ জাদরানরা ক্রিজে সেট হয়েছেন, কিন্তু তাঁরাও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শেষ দিকে মোহাম্মদ নবী ও রশিদরাও নিজেদের কাজটা করতে পারেননি। ২০ ওভারে ১৪৪ রানেই থামে আফগানিস্তানের ইনিংস। পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ ওভারে ৫৩ রান দেওয়া ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দারুণভাবেই ফিরে এসেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পর আজ নিয়েছেন ১৩ রানে ৩ উইকেট।
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দারুণ শুরু করে আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ওভারেই মুজিব উর রেহমান ফিরিয়ে দেন পাতুম নিশাঙ্কাকে। ফজলহক ফারুকি ও মুজিব রানের গতি আটকে রাখেন। পাওয়ারপ্লেতে শ্রীলঙ্কা তোলে মাত্র ২৮ রান। প্রথম ১০ ওভারে তোলে ৬৩ রান।
তবে এরপরই খোলস ছেড়ে বের হন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। রশিদ ও নবীর টানা ২ ওভারে ডি সিলভা ও চারিত আসালাঙ্কা তুলে নেন ২৬ রান।এই দুই ব্যাটসম্যানের ৩৪ বলে ৫৪ রানের জুটি যখন রশিদ ভাঙেন, তখন লঙ্কানদের প্রয়োজন ৩৯ বলে ৪৫ রান, হাতে আরও ৭ উইকেট।
এই ম্যাচে জয় পেতে বিশেষ কিছুই করতে হতো রশিদকে। যদিও তিনি সেটা করতে পারেননি। ২ উইকেটে পেলেও তাঁকে মোটামুটি স্বচ্ছন্দেই খেলেছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। আফগানিস্তানের অন্য কোনো বোলারও শেষ দিকে বিপদের কারণ হতে পারেননি।
সুপার টুয়েলভে গ্রুপ ১ থেকে ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে শ্রীলঙ্কা (-০.৪৫৭)। সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ দলের এই গ্রুপের তলানিতে আফগানিস্তান (-০.৭১৮)। ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের শীর্ষ দল নিউজিল্যান্ড। ৪ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সমান পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া (-০.৩০৪)। ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইংল্যান্ড (০.২৩৯)। ৪ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সমান পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে আয়ারল্যান্ড (-১.৫৪৪)।