আজ সকালে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ দল বাসে চড়ে গেছে বিমানবন্দরে। সেখান থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা। ২৮ অক্টোবর কলকাতার ইডেন গার্ডেনেই বাংলাদেশ খেলবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। কিন্তু টিম বাসে দলের সবাই উঠলেও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দেখা গেল না। পরে জানা গেছে, তিনি দলের সঙ্গে কলকাতায় যাননি। মুম্বাই থেকে চলে এসেছেন ঢাকায়।
শুধু কি তা–ই? সকালে ঢাকায় ফিরে দুপুরেই সাকিব হাজির মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে। সেখানে বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও ক্রিকেট কোচ নাজমূল আবেদীনের সঙ্গে অনুশীলনে নেমে পড়েন সাকিব। তিন ঘণ্টার লম্বা অনুশীলন সেশন শেষে বিকেলের দিকে ইনডোর থেকে বেরিয়ে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারও সাকিবের মিরপুরে অনুশীলন করার কথা। আগামী শুক্রবার কলকাতার বিমান ধরার আগে আরও একটি অনুশীলন সেশন করার ইচ্ছা সাকিবের। নাজমূল আবেদীনই আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ একটা সেশন করলাম আমরা, ঘণ্টা তিনেকের মতো। কাল এবং পরশু মোটামুটি সারা দিনই আমরা কাজ করব। পরশুদিনই সে চলে যাবে।’
বিশ্বকাপ থেকে হুট করে সাকিবের ঢাকায় আসাটা একটু বিস্ময়করই। চোট, আঘাত কিংবা জরুরি পারিবারিক সমস্যা ছাড়া বিশ্বকাপ চলাকালীন কোনো ক্রিকেটারের এভাবে দুই–তিন দিনের জন্য দেশে ফেরাটা নজিরবিহীনই বলা চলে। অবশ্য বিসিবির এক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা বলেই দেশে এসেছেন সাকিব।
সাকিবের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণটা স্পষ্ট দুপুরে তাঁর মিরপুরে গিয়ে অনুশীলন করাতেই। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত ৫টি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র ১টিতে। দলীয় পারফরম্যান্সের মতো অনুজ্জ্বল অধিনায়ক সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ১৪ গড়ে সাকিবের রান মাত্র ৫৬, সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ৪ ইনিংসের মধ্যে ২ ইনিংসেই আউট হয়েছেন বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে। পরিসংখ্যানই বলে দেয়, ‘ব্যাটসম্যান’ সাকিব তাঁর সেরা ছন্দে নেই। বল হাতেও ওভারপ্রতি ৫.৫৪ রান দিয়ে এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ৬ উইকেট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নেওয়া ৩০ রানে ৩ উইকেট তাঁর ব্যক্তিগত সেরা। চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তো খেলতেই পারেননি।
নিজেকে ফিরে পেতে সে জন্যই হয়তো সাকিবের এত ব্যস্ততা। জানা গেছে, সাকিব ব্যাটিংয়ের সময় তাঁর মাথার অবস্থান নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। আজ মিরপুরে এ নিয়েই নাজমূল আবেদীনের সঙ্গে সময় নিয়ে কাজ করেছেন। ফ্রন্ট ফুট ও ব্যাক ফুট থেকে শট খেলার সময় শরীর যেখানে থাকা দরকার, সেখানে থাকছে না। অনুশীলনে বেশির ভাগ ড্রিলেই সাকিবের মাথার অবস্থান ঠিক করার চেষ্টা করেছেন নাজমূল আবেদীন। অভিজ্ঞ এই কোচের আশা, ‘আশা করছি, সে এখান থেকে আরেকটু আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরতে পারবে।’
খারাপ সময়ে নিজের পছন্দের কোচদের শরণাপন্ন হওয়াটা সাকিবের এবারই প্রথম নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএল খেলছিলেন সাকিব। সেবার হায়দরাবাদ একাদশে সাকিবের জায়গা হচ্ছিল না। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সাকিব আইপিএলের মধ্যেই ঢাকা থেকে ডেকে নেন তাঁর আরেক মেন্টর ও কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। আইপিএলে থেকেও নিজের অনুশীলনটা করেছিলেন আলাদাভাবে।
জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাকিবের সেই বিশেষ অনুশীলনের ফলটা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সেবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৬০৬ রান, উইকেট নিয়েছিলেন ১১টি। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে এবার শরণাপন্ন হলেন শৈশব-কৈশোরের আরেক প্রিয় কোচ নাজমূল আবেদীনের। তাতে এই বিশ্বকাপে ভাগ্য বদলাবে তো সাকিবের?