‘ডেথ বোলিং’—ইংলিশ সমর্থকদের দুঃস্বপ্নের মতো এক স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে এই শব্দ দুটিই যথেষ্ট। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে বেন স্টোকসকে ডেথ ওভারে বোলার হিসেবে ব্যবহার করেছিল ইংল্যান্ড। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সেদিন কী হয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই আর মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আজ আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। এই বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ড একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের হাতে তুলে দিয়েছে ডেথ ওভারের দায়িত্ব—স্যাম কারেন।
এবার অবশ্য ইংলিশ সমর্থকদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। যে ডেথ ওভার বোলারদের জন্য শ্মশানপুরী, সেখানেই সাফল্যের ফুল ফোটাচ্ছেন কারেন। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার এই বাঁহাতি পেসার। ৫ ম্যাচ খেলে ১৩.৬০ গড়ে কারেনের শিকার ১০ উইকেট। ইনিংসের শেষে ব্যাটসম্যানরা যখন ছক্কা ওড়ানোর চেষ্টায় থাকেন, তখন কারেনের ইকোনমি ঈর্ষণীয় (৭.২৮)।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কারেনের আবির্ভাব মূলত সুইং বোলার হিসেবে। আঁটসাঁট লাইন লেংথ থেকে ইনসুইং ও আউট সুইং করিয়ে ইংল্যান্ডকে তিনি টেস্ট জিতিয়েছেন। সেই কারেন এখন ‘টো অ্যান্ড টিথ’ বোলার, যিনি ডেথ ওভারে এসে ব্যাটসম্যানদের পায়ের আঙুল আর দাঁত বরাবর বোলিং করেন। যে লেংথ থেকে তিনি সুইং করাতেন, সেখান থেকে অফ কাটার করতে দেখা যায়। একই জায়গা থেকে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে কারেনের নাকল বল। রপ্ত করেছেন চমকে দেওয়া বাউন্সারও। আর দুই ধরনের ইয়র্কারেও তিনি এখন পটু, বিশেষ করে ওয়াইড ইয়র্কারে। আর কারেনের সহজাত বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল তো আছেই।
অথচ এক বছর আগেও তিনি টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত ছিলেন না। ইংল্যান্ডও এ সময় একজন ডেথ বোলারের খোঁজে ছিল। কারণও আছে। গত চার বছরে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ডেথ ওভারে সবচেয়ে খরচে দল ইংল্যান্ডই (১০.২৪)। জফরা আর্চার সে সমস্যার সমাধান হতে পারতেন। কিন্তু চোট তাঁকে নিয়মিত হতে দেয়নি। কারেনকেও চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। পিঠের ব্যথার কারণে তাঁর গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা হয়নি।
তবে যখন ফিরেছেন তখন আর কারেনকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত জুলাইয়ে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো কারেনের হাতে ডেথ ওভারের দায়িত্ব তুলে দেয়। সিদ্ধান্তটা হুট করেই নেওয়া, সেটাও নয়। এবারের দ্য হানড্রেডেও তিনি ওভাল ইনভিন্সিবলের হয়ে ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন।
কারেনের কাউন্টি দল সারের বোলিং কোচ আজহার মাহমুদ বাউন্সারটা আরও শাণিত করতে সাহায্য করেছেন। ইংল্যান্ড আরও একজনকে ধন্যবাদ দিতেই পারে। তিনি হচ্ছেন এমএস ধোনি। চোটে পড়ার আগে আইপিএল দল চেন্নাই সুপার কিংসের ডেথ ওভারের বোলার ছিলেন কারেন। ২০ ওভারের খেলায়ও কারেনের বোলিং কার্যকর হতে পারে, সেটি প্রথম ধোনিই দেখিয়েছেন। আজও সেই কারেনের পেস বোলিং তূণের সব তির লক্ষ্যভেদী হবে, সে আশাই করবে ইংল্যান্ড।