ইংল্যান্ডের কী হয়েছে বা সমস্যাটা কোথায়—এবারে বিশ্বকাপে এটি অন্যতম আলোচিত প্রশ্ন। বেন স্টোকসের কাছে অবশ্য এ প্রশ্নের সহজ একটা উত্তর আছে। স্টোকসের মতে, ইংল্যান্ডের সমস্যা হলো, তাঁরা এ বিশ্বকাপে জঘন্য খেলেছেন।
প্রথম ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫টিতে হার, সেমিফাইনালের আগে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার শুধু আনুষ্ঠানিকতাই বাকি ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়নদের। অন্যতম ফেবারিট হিসেবে ভারতে গিয়ে এমন পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই কাটাছেঁড়া হচ্ছে অনেক। কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কোচই নির্দিষ্ট করে কোনো সমস্যার কথা বলতে পারেননি। সাবেক অধিনায়ক এউইন মরগান ড্রেসিংরুমে ঝামেলা থাকার শঙ্কার কথা জানালেও সেটিও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
তবে ইংল্যান্ডের বাজে পারফরম্যান্সের কারণটা স্টোকস জানেন। তাঁর মতে, ‘না, আমার মনে হয় সমস্যাটা হচ্ছে আমরা জঘন্য ছিলাম। আপনাকে সত্যি বললে, আমরা জঘন্য ছিলাম। বিশ্বকাপজুড়ে আমরা যা যা চেষ্টা করেছি, আমরা জানি এমন উপায়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছি, ভিন্ন উপায়ে চাপ কাটানোর চেষ্টা করেছি। যেগুলো আমরা জানি আমরা আগে করেছি, যেগুলোতে সফল হয়েছি, (কিন্তু) কাজ করেনি।’
স্টোকস এরপর যোগ করেন, ‘যখনই আমাদের সামনে এমন সুযোগ এসেছে যে আমাদের মনে হয়েছে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারব, প্রতিপক্ষ সেটি নিজেদের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। আমরা পুরো একটা পারফরম্যান্স দাঁড় করাতে পারিনি, বাংলাদেশ ছাড়া কারও বিপক্ষে আসলে সেটির কাছাকাছিই যেতে পারিনি। ক্রিকেটে যদি আপনি বেশি কিছু খুঁজতে যান তাহলে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নের মুখোমুখিই বেশি হবেন।’
স্টোকস তাঁর হতাশা লুকানোর চেষ্টাও করেননি, ‘আমরা ব্যক্তিগতভাবে এবং দলগতভাবে এটি জানি, বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে যে রকম ভালো হওয়ার কথা, তার ধারেকাছেও ছিলাম না আমরা। এটি আসলে অনেক হতাশাজনক। কারণ, আমরা জানি, মাঠে যা খেলেছি, আমরা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভালো।’
তবে ঠিক কী কারণে এমন পারফরম্যান্স, স্টোকস সেটি জানেন না। তাঁর মতে, ‘কোনো জবাব না থাকা, কোথায় ভুল হলো সেটি বুঝতে না পারার ব্যাপারটিও সহজ। এটিই আসলে উত্তর। কারণ, আমরা যদি জানতাম কোথায় ভুল হয়েছে, তাহলে সেটি ঠিক করতে পারতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা জানি না। এটি অমন একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে বিপর্যয় ঘটে গেছে। আর এটিকে ইনিয়েবিনিয়ে বলে লাভ নেই। কারণ, আপনারা শেষ পর্যন্ত এটিই লিখবেন। আর এটিই সত্যি।’
সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপেরই চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, ২০১৯ সালের পর গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাও জিতেছে তারা। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে একই সঙ্গে দুটি বিশ্বকাপ জেতা দলও তারা। স্টোকস খেলেছেন আগের দুটি দলেই। সে দুটির সঙ্গে এবারের পার্থক্য কী, সে প্রসঙ্গে স্টোকসের সোজাসাপটা উত্তর, ‘পারফরম্যান্স ও ফলাফল।’
সাধাণত স্টোকসের পরিচয়ই এমন, তিনি দলকে চাপের মুহূর্ত থেকে বের করে আনেন। এবার প্রথম তিন ম্যাচে চোটের কারণে খেলেননি, পরের ম্যাচগুলোতেও তাঁর পারফরম্যান্স যথেষ্ট হয়নি দলের জন্য। এবার তিনি কী করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টোকস বলেছেন, ‘অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমি সব সময়ই, বিশেষ করে গত ছয়-সাত বছরে সাফল্য বা ব্যর্থতায় একই রকম থাকতে পেরেছি। আমি কতটা ভালো, সেটি নির্ধারণ করে সামনের ম্যাচটি, যেটি আসলে সাফল্য-ব্যর্থতাকে সমতলে রাখার একটা সহজ উপায়। এরপর শুধু পরের ম্যাচের দিকে মনযোগ দিতে হয়। অতীতে কী ঘটেছে, সে সুখ্যাতির ওপর টিকে থাকতে পারবেন না, কারণ নির্দিষ্ট দিনে কী করছেন, তা দিয়েই বিচার করা হবে। কিন্তু হ্যাঁ, দল হিসেবে আমাদের কেন এত বড় গুবলেট হলো, সেটি আসলে ব্যাখ্যা করতে পারব না।’