শুভ জন্মদিন লিটন দাস!
বোধ হয় একটু তাড়া ছিল। জন্মদিনে প্রায় সবারই যেমন থাকে। সেদিন যত বড় কাজই থাক, কোনো না কোনোভাবে কেউ কেউ নিজের জন্মদিন পালনের সময় বের করে নেন। প্রয়োজনে অন্য ব্যক্তিদের চেয়ে একটু বেশি কাজ করে হলেও নিজের জন্য সময় বের করতে হয়।
গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটাই মনে করুন। ৩৬৫ রান তাড়া করতে নেমে ২০.৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১২১। দলের অর্ধেকের বেশি রান লিটনের (৭৬)। ঠিক তখনই কি লিটনের আজকের দিনটির কথা মনে পড়েছিল? অনেক প্রস্তুতি নেওয়ার তাড়া ছিল সম্ভবত। নইলে উইকেটে ‘সেট’ হয়েও অবিশ্বাস্যভাবে উইকেটের পেছনে জস বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার কোনো ব্যাখ্যা হয় না। আর এই দাবি তো করা হচ্ছে আজকের আউট দেখে।
লিটন সেদিন যেখানে থেমেছিলেন, আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন। কারণ, আজ তো তাঁর ২৯তম জন্মদিন। এমন দিনে মাঠে পড়ে থাকলে চলে! যা করার করলেন ম্যাচের প্রথম বলেই।
দুনিয়ার সবাই জানে, নতুন বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের স্টাম্পে বল করেন ট্রেন্ট বোল্ট। বল ভেতরে ঢোকান এলবিডব্লুর আশায়। লিটনেরও এটা অজানা থাকার কথা নয়। শুধু তা–ই নয়, লিটন আরও জানেন, ওই স্পটে বল করলে ডিপ ফাইন লেগে ধরাবাঁধা একজন ফিল্ডার রাখেন বোল্ট।
এখন প্রযুক্তির যুগ। টিম অ্যানালিস্ট নিশ্চয়ই ম্যাচের আগে ব্যাপারটা পইপই করে মনে করিয়ে দিয়েছেন ওপেনারদের। লিটন কী বুদ্ধিমান আর সুযোগের কী দারুণ সদ্ব্যবহারই না করলেন! বলটা উড়িয়ে মেরে ডিপ ফাইন লেগে ফেললেন ম্যাট হেনরির হাতে। ব্যস, ঝামেলা শেষ।
আগের ইনিংসেই তো ৭৬ এসেছে, তা দিয়ে চলা যাবে আরও কয়েক ম্যাচ। খামাখা ব্যাক–টু–ব্যাক কিছু করার চেষ্টা না করে নিজেকে একটু সময় দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। জাতীয় দল মাথায় রেখেও ‘খামাখা’ বলা হচ্ছে। কারণ, সেই চিন্তা মাথায় থাকলে ইনিংসের প্রথম বলেই ফাঁদে পা দিয়ে ‘আত্মঘাতী’ শট খেলতেন না।
অবশ্য লিটন হয়তো নিজেকে এমন প্রবোধ দেন, ঠিকই তো খেলার চেষ্টা করেছিলাম। এখন ব্যাট কথা না শুনলে আমার কী দোষ! বলকে তো তিনি আর হাত দিয়ে ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন না। ব্যাটটা স্রেফ চালান। এখন সেই ব্যাট যদি ঈপ্সিত লক্ষ্য পূরণ করতে না পারে, তাহলে দোষটা কার? অবশ্যই ব্যাটের।
বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই তো সেই রায় দিয়েছিলেন আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে ব্যাট ভেঙে। নিন্দুকেরা বলতে পারেন, তবে যে ব্যাটসম্যানরা বলেন, ব্যাটই তাঁদের পরমাত্মীয়। অনেকে তো বিছানায় ব্যাট রেখে ঘুমান। ওসব আসলে বাজে কথা। ‘সঙ্গী’ আস্থাভাজন না হলে কে তাকে সঙ্গে রাখে!
লিটন আজকের ব্যাটটি সম্ভবত ভাঙবেন না। একে তো জন্মদিন, তার ওপর ইনিংসের প্রথম বলে আউট হয়ে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন। বিবিসির ‘টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল’ টুইট করে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জন্মদিনে ইনিংসের প্রথম বলে ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান লিটন। এমন ‘কৃতিত্ব’ গড়লেন যে ব্যাট দিয়ে, সেটি তো স্মারক হিসেবে রাখতেই হয়। অবসর নেওয়ার পর গল্পের খোরাক হবে।
অবশ্য ‘গোল্ডেন ডাক’–এর (প্রথম বলেই আউট) গল্প বলতে গেলে আরেকটু পেছাতে হবে। ২০১৫ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম ‘ডাক’ মেরেছিলেন। সব মিলিয়ে এই সংস্করণে তাঁর ‘ডাক’সংখ্যা ১২টি। সর্বোচ্চ ১৯টি ‘ডাক’ মারা তামিম ইকবালকে এই বিশ্বকাপে চাইলেও ধরতে পারবেন না। হাতে আছে যে আর মাত্র ৬ ম্যাচ।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে পঞ্চমবার মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট হলেন লিটন। ওপেনিংয়ে নেমে চতুর্থবার। ইনিংসের প্রথম বলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে আউট হয়েছিলেন ইনিংসের প্রথম বলে।
তবে ম্যাচের প্রথম বলেই আউট হলেন এবারই প্রথম—জন্মদিনে এমন ‘উপলক্ষ’ও উদ্যাপনের সুযোগ এসে গেলে কেকটা তো একটু বড়ই হওয়া উচিত। আর সবকিছুর কেন্দ্রে যখন থাকে ‘০’, তখন কেকটা দেখতে কেমন হলে মানাবে, সেই ধারণা দিতে নিশ্চয়ই রকেটবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।