২০১১ সালের ছবি। লন্ডনের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাজহার মজিদকে
২০১১ সালের ছবি। লন্ডনের আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাজহার মজিদকে

পাকিস্তানের স্পট ফিক্সিংয়ের অন্যতম হোতা এবার বক্সিংয়ে

ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া এক ঘটনার ‘মূল হোতা’ ছিলেন তিনি। ১৪ বছর আগে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট, যাতে সম্পৃক্ত ছিলেন ‘বুকি’ মাজহার মজিদ। সেই মজিদ এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ব্রিটিশ খেলার জগতে। তবে এবার আর ক্রিকেট নয়, তাঁর সম্পৃক্ততা বক্সিংয়ে।

২০১০ সালে লর্ডসে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধ ও পরবর্তীকালে কারাগারেও যেতে হয়েছিল তখনকার পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান বাট, পেসার মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরকে। টাকার বিনিময়ে নো বল করতে রাজি হয়েছিলেন আমির ও আসিফ, তাতে সম্পৃক্ত ছিলেন বাটও। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল এ তথ্য, যাতে মজিদ পাকিস্তানের দলের সদস্যদের এ ব্যাপারে রাজি করানোর কথা বলেছিলেন। পরে সে দোষ স্বীকার করে কারাগারেও যান মজিদ। এ কাণ্ডে ৩২ মাস এবং অন্য আরেকটি মামলায় পরে আরও দুই বছর কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে, স্কাই স্পোর্টসের জন্য শো করে, এমন এক বক্সিং প্রমোটারের সঙ্গে কাজ করছেন মজিদ। ২০২১ সালে স্কাইয়ের সঙ্গে ৩২ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি করেছে বক্সসার নামের সেই কোম্পানি, যারা মজিদের সঙ্গে যোগসাজশ আছে, এমন একটি কোম্পানিকে ছয় অঙ্কের অর্থও দিয়েছে। ৩০ বছর বয়সী বেন শ্যালম বক্সসারের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁরই পরামর্শক হিসেবে নিজেকে সামনে এনেছেন মজিদ।

সাবেক লাইট-ওয়েল্টারওয়েট চ্যাম্পিয়ন আমির খানের সঙ্গে মজিদের সম্পর্ক আগে থেকেই। কেল ব্রুকের সঙ্গে ২০২২ সালে একটি লড়াইয়ের ব্যবস্থা করে দেন মজিদ বক্সসারের জন্য। আরেক বক্সার ক্রিস ইউবাংক জুনিয়রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মজিদ যুক্ত বলে জানিয়েছে দ্য টাইমস।

সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির ও মাজহার মজিদ (ঘড়ির কাটার দিকে)

অবশ্য বক্সিং প্রমোটার হিসেবে শ্যালমের উত্থানের আগে থেকেই এই খেলায় এসেছেন মজিদ। এমনিতে বক্সিংয়ের কথিত অপরাধজগতের হোতা ড্যানিয়েল কিনাহানের বক্সিংয়ের সম্পৃক্ততা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশ তোলপাড় আছে। মজিদের আগমন তাই ঘটেছে অনেকটা নিভৃতেই। মজিদের সহায়তা পেয়েই শ্যালম বক্সিং প্রমোটার হিসেবে জায়গা শক্ত করেছেন বলেও জানিয়েছে টাইমস।

তবে শ্যালম বলেছেন, কোনো বক্সার যদি মজিদের পরামর্শ নিয়ে থাকেন, তাহলে এখানে কিছু করার নেই। তবে শ্যালমের কোম্পানি বক্সসার স্টার পিপল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে মোটা অর্থ দিয়েছে, যে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মজিদের স্ত্রী শেলিজা মঞ্জি। শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে এ অর্থ প্রদানের কথা স্বীকার করেছেন শ্যালম। তবে মজিদ ২০২২ সালে আমির ও ব্রুকের ওই লড়াই আয়োজনেই শুধু সহায়তা করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

যেভাবে বক্সিংয়ে এলেন মজিদ

২০১৬ সালে ফিরে আসার পর সাবেক হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ডেভিড হায়ের বিজনেস ম্যানেজার হয়ে উঠেছিলেন মজিদ, জানা যায় এমন। একটি সূত্র টাইমসকে বলেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাজ (মজিদ) অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। দুজন বেশ ঘনিষ্ঠ বলেও জানা যায়।

হায়ের তখনকার জনসংযোগ ফার্ম জানায়, মজিদ চাকরিভুক্ত না হলেও বাণিজ্যিক মিটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে হায়ে বা তাঁর কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও মজিদকে ‘বিশ্বস্ত পরামর্শক ও বন্ধু’ হিসেবে জানানো হয়। ২০১৭ সালে হায়ে নিজেই প্রমোশনাল কোম্পানি গড়ে তোলেন।

সেই কোম্পানির থাকা কয়েকজন মজিদকে ‘ভদ্র ও নম্র একজন, যিনি পেছনের দিকে বসে থাকেন’, এমন একজন চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে অন্যদের কথা, ধীরে ধীরে তিনি আরও সামনে এসেছেন। লড়াইয়ের সময় রিংয়ের পাশে বসেন, মিটিংয়ে আসেন রোলস-রয়েসে করে। হায়ে বক্সিং রিং ছেড়ে যাওয়ার পর আমিরের মাধ্যমে মজিদের আবার এ খেলার জগতে উত্থান হয়। ২০২৩ সালেও একটি বক্সিং ম্যাচে যুক্ত ছিলেন মজিদ। বক্সসারের অধীনে থাকা আরেক বক্সার জশুয়া বুয়াতসির প্রতিনিধিত্বও করেন মজিদ, টাইমস বলেছে এমন।

মজিদ–বাট–আসিফ–আমিরদের কার কত বছরের জেল হলো, আদালতের বাইরে দেখাচ্ছিলেন একজন

বক্সসার নামের কোম্পানির সঙ্গে মজিদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি স্কাই স্পোর্টস। আর মজিদ বলেছেন, বক্সসারের সঙ্গে তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততা নেই। বক্সসার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এই খেলায় আসার আগেই মজিদ বক্সিংয়ে যুক্ত। কয়েকজন হাই-প্রোফাইল বক্সারের পরামর্শক হিসেবে মজিদ কাজ করেছেন, এ কারণেই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে তাদের।