হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বে আরেকটি ম্যাচ, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের আরেকটি হার। টানা ৩ হারে এবারে আইপিএলে পয়েন্ট তালিকার তলানিতেই পড়ে আছে মুম্বাই।
আইপিএলের শুরুর দিকে মুম্বাইয়ের নড়বড়ে অবস্থা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজিটি এর আগে একাধিক মৌসুমে নিজেদের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে হেরেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা জয়ের কীর্তিও আছে তাদের। তাই মুম্বাইয়ের শুরুর হারগুলোকে সাধারণত স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া হয়।
কিন্তু এবার প্রথম ৩ ম্যাচ হারতেই মুম্বাইয়ের সমর্থকেরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছেন। দলটির খেলার ধরন নিয়ে যেমন সমালোচনা চলছে, তেমনি নতুন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্ব ও নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সর্বশেষ পান্ডিয়াকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করেছেন ইরফান পাঠান। ভারতের সাবেক এই অলরাউন্ডার গত রাতে মুম্বাইয়ের সঙ্গে রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচ চলার সময়ই বেশ কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ পোস্ট করেছেন; যার শেষটিতে তিনি লিখেছেন, পান্ডিয়া যা না করলে তাঁর দলের খেলোয়াড়দের সম্মান পাবেন না।
কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস সমর্থকেরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। দলটিকে পাঁচ–পাঁচবার শিরোপা জেতানো রোহিত শর্মাকে আচমকা নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে পান্ডিয়ার কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার পর থেকেই এই বিভক্তির শুরু। নতুন অধিনায়ক পান্ডিয়া প্রতিটি ম্যাচেই কোনো না কোনো ভুল করেছেন বলে দাবি করেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা।
এবারের আইপিএল দিয়েই প্রায় পাঁচ মাস পর চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন পান্ডিয়া। এখনো তাঁর শতভাগ ফিটনেস ফিরে পাওয়া নিয়ে কানাঘুষা চললেও প্রথম দুই ম্যাচের শুরুতেই তিনি বোলিংয়ে এসেছেন। ওই দুই ম্যাচে দলের সেরা বোলার যশপ্রীত বুমরাকে বোলিংয়ে এনেছেন দেরিতে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ২৭৮ রানের রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ার দিনে মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট ছিল তাঁর।
আর কাল রাজস্থানের বিপক্ষে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার আভাস দিয়েও উইকেট ছুড়ে এসেছেন। পরে জস বাটলারের দেওয়া ক্যাচ মিস করেছেন। ভারতের হয়ে ২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা পাঠান তাই পান্ডিয়ার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন।
ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কাল আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল মুম্বাই। ট্রেন্ট বোল্টের তোপে রোহিত শর্মা, নামান ধীর ও ডেভাল্ড ব্রেভিস মারেন ‘গোল্ডেন ডাক’ (প্রথম বলে শূন্য রানে আউট)। ঈশান কিষানকে ফেরান নাদ্রে বার্গার।
এরপর তিলক ভার্মাকে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে শুরুর ধাক্বা প্রায় কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন পান্ডিয়া। কিন্তু অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে যুজবেন্দ্র চাহালের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ২১ বলে ৩৪ রান করে পান্ডিয়া আউট হতেই পাঠান ‘এক্স’–এ পোস্ট করেন, ‘যাঁরা খেলাটা ভালো বোঝেন, তাঁরা জানেন, আপনি যদি উইকেটে থিতু হন, তাহলে দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে হবে।’
ব্যাটিং–স্বর্গেও ধুঁকতে ধুঁকতে মুম্বাই শেষ পর্যন্ত করতে পারে ৯ উইকেটে ১২৫ রান। রাজস্থানকে বড় লক্ষ্য দিতে না পারায় পান্ডিয়া এবার শুরুতেই বুমরাকে বোলিংয়ে আনেন। বুমরা এক প্রান্ত থেকে রাজস্থানের রানের গতিতে বাধ দেন, অন্য প্রান্ত থেকে কিউনা মাফাকা ও আকাশ মাধওয়াল ৩টি উইকেট নিয়ে কিছুটা আশা জাগান। তবে আলোচিত তরুণ রিয়ান পরাগের আরেকটি ফিফটিতে রাজস্থান ২৭ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
কাল বুমরাকে শুরুতেই বল করতে দেখে ইরফান পাঠান লিখেছেন, ‘দলের সেরা বোলারকে শুরুতেই বোলিংয়ে আনার জন্য রকেট সায়েন্সের দরকার হয় না। অবশেষে বুমরাকে নতুন বলে দেখতে পেলাম। আসলে ওকে শুরুতে বোলিংয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, রাজস্থান রয়্যালসকে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে হবে।’
৩৯ বছর বয়সী পাঠান পান্ডিয়াকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন ম্যাচের শেষে। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি সব সময় চাইবেন কঠিন কাজটা দলের নেতাই করবেন। যদি তিনি সেটা না করেন, তাহলে দলের সম্মান আদায় করতে পারবেন না।’