২৯তম শতক তুলে নেন কেইন উইলিয়ামসন
২৯তম শতক তুলে নেন কেইন উইলিয়ামসন

উইলিয়ামসনের শতকের পরও বাংলাদেশের লিডের আশা

‘ডার সাব কো লাগতা হে, গালা সাব কো সুখাতা হে’—স্লিপে দাঁড়িয়ে হিন্দিতে কথাটা বলছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘ভয় সবারই লাগে। গলা সবারই শুকায়।’ বাংলাদেশ দলের বোলিং নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ধরিয়ে না দিলেও চাপ ঠিকই সৃষ্টি করতে পেরেছে। আর সেটি করতে পেরেছে মূলত স্পিনারদের সৌজন্যে। দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ৮ উইকেটে ২৬৬ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।

এর আগে দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই শরীফুল ইসলাম আউট হলে ৩১০ রানে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। নিউজিল্যান্ড এখনো পিছিয়ে আছে ৪৪ রানে। লিডের আশা তাই করতেই পারে বাংলাদেশ। উইকেট যে রকম মনে হচ্ছে, তাতে প্রথম ইনিংসের লিড–টাই পরের দিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ব্যবধানটা ৪৪ না হয়ে আরও বড় হতে পারত। উইলিয়ামসন দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তা হয়নি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম শতক পাওয়া উইলিয়ামসনই মূলত নিউজিল্যান্ডের ইনিংসটাকে লম্বা করতে বড় ভূমিকা রাখেন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২০৫ বলে ১১টি চারে ১০৪ রান। ভাগ্যও উইলিয়ামসনের পক্ষে ছিল। নাঈম হাসানের বলে দুইবার উইলিয়ামসনের ক্যাচ ফেলেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। উইলিয়ামসনকে ৬৩ রানে  জীবন দেন তাইজুল, ৭০ রানে শরীফুল ইসলাম।

শেষ বিকেলে উইলিয়ামসনকে বোল্ড করেন তাইজুল ইসলাম

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শুরুটা ভালো হলেও দুই ওপেনার টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়েকে ৩ ওভারের ব্যবধানে হারিয়ে বিপদে পড়ে। ইনিংসের ১৩তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসা তাইজুল ইসলামের লেগের দিকে অনেক বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তোলেন ল্যাথাম (৪৪ বলে ২১ রান)। তাতে ৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাংলাদেশ। অন্য প্রান্ত থেকে টানা ৯ ওভারের স্পেল করে পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজও। ইনিংসের ১৬তম ওভারে কনওয়ে মিরাজের বলে সামনে এসে ডিফেন্স করতে গিয়ে সিলি পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন। অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন ডানে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন। কনওয়ের ৪০ বলে ১২ রানের ইনিংস থামে তাতে।

জোড়া উইকেট হারানোর সেই ধাক্কাটা উইলিয়ামসনের সৌজন্যই কাটিয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলস, ড্যারেল মিচেল, গ্লেন ফিলিপস—একে একে সবার সঙ্গেই জুটি গড়েন তিনি। তবে বাংলাদেশের দারুণ বোলিং জুটিগুলো বড় হতে দেয়নি। শরীফুল ইসলাম যেমন তাঁর প্রথম স্পেলে উইকেট শূন্য থাকলেও দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে নিকোলসকে কট বিহাইন্ড করেন ৩২তম ওভারে। ৪২ বল খেলে ১৯ রান করেন নিকোলস। ড্যারেল মিচেল ক্রিজে এসেই দ্রুত রান তুলছিলেন। ৫৪ বল খেলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ রান করা মিচেলকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল।

টম ব্লান্ডেলকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান নাঈম হাসান

দ্রুত রান তুলেছেন ফিলিপসও। নাঈমের বলে টম ব্লান্ডেল লেগের দিকের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হলে ক্রিজে আসেন এই তরুণ। সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত ফিলিপস ক্রিজে এসেই সাদা বলের সহজাত ব্যাটিং করতে থাকেন। পুরোনো বলে তখন স্পিনাররাও বেশি কিছু করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে ফিলিপসকে থামাতে মুমিনুল হককে বোলিংয়ে আনেন নাজমুল। অধিনায়কের সেই জুয়া কাজেও লাগে। ইনিংসের ৭৫তম ওভারে ৬২ বলে ৪২ রান করা ফিলিপস মুমিনুলের বাঁহাতি স্পিনে ক্যাচ তোলেন স্লিপে। নিচু হয়ে তা লুফে নেন নাজমুল নিজেই।

স্বস্তি নিয়ে দিনশেষে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ

নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৬ উইকেটে ২৫৩। তখন বাংলাদেশ নতুন বলের অপেক্ষায়। ৮০তম ওভারে নতুন বল পাওয়ার প্রথম ওভারেই দিনের সেরা উপহারটা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তাইজুলের আর্ম বলে সামনে এসে খেলার চেষ্টা করেও বল খুঁজে পাননি উইলিয়ামসন। ব্যাট-প্যাডের মাঝে জায়গা খুঁজে নিয়ে উইলিয়ামসনকে বোল্ড করেন তাইজুল।

দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে নতুন বলের সুবিধাটা আরও একবার নিতে পেরেছেন বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি স্পিনার। নিজের পরের ওভারেই সদ্য ক্রিজে আসা ইশ সোধিকে ০ রানে শর্ট লেগের ক্যাচ বানান তাইজুল। বাকি সময়টা নিউজিল্যান্ড ইনিংসে আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি কাইল জেমিসন (৭) ও টিম সাউদি (০)।