শচীন টেন্ডুলকার ও বিরাট কোহলি
শচীন টেন্ডুলকার ও বিরাট কোহলি

টেন্ডুলকারকে ছুঁতে কত দেরি কোহলির

কোহলির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৭৩তম সেঞ্চুরির পর আবার উঠেছে পুরোনো সেই প্রশ্ন—টেন্ডুলকারের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবেন কোহলি?

এ রেকর্ড কোনো দিন ভাঙবে না!

২০১২ সালে শচীন টেন্ডুলকার মিরপুরে যেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ১০০তম সেঞ্চুরিটি পেলেন, বেশির ভাগ মানুষই এমনটি ভেবেছিলেন। না ভেবে উপায় কী। এই রেকর্ডে ভারতীয় কিংবদন্তির সবচেয়ে কাছে যে ছিলেন, তিনি যে পিছিয়েছিলেন যোজন দূরত্বে।

সেই খেলোয়াড়ের নাম রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়কের তখন ৭১টি সেঞ্চুরি। বছর না ঘুরতেই যখন পন্টিং অবসর নিয়ে নিলেন, সেঞ্চুরির রেকর্ডটা অমরত্ব পেয়ে গেছে বলেই ভাবতে শুরু করেছিলেন সবাই। ২০১৩ সালের নভেম্বরে সেই ১০০ সেঞ্চুরি নিয়েই ভারতের জার্সিতে শেষ ম্যাচটা খেললেন রেকর্ড নিয়ে ‘নির্ভার’ টেন্ডুলকার।

কিন্তু পাঁচ–ছয় বছর যেতে না যেতেই আর ‘নির্ভার’ থাকতে পারলেন না টেন্ডুলকার ও তাঁর ভক্তরা। কীভাবেই–বা থাকবেন, একজন যে উসাইন বোল্টের গতিতে ছুটছিলেন ‘১০০’ লক্ষ্য করে। সেই একজনের নাম বিরাট কোহলি, টেন্ডুলকারেরই একসময়ের সতীর্থ।

সেই কোহলি, ২০০৮ সালে যাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময়েই টেন্ডুলকারের ৮১টি সেঞ্চুরি। বছর পাঁচেক পরে টেন্ডুলকারের অবসরের সময় সেই কোহলির ২১টি সেঞ্চুরি। পরের ছয় বছরেই কোহলি আরও ৪৯ বার পেলেন তিন অঙ্কের ইনিংসের দেখা।

এর পরের তিন বছর যা হলো, সেটি কে ভাবতে পেরেছিলেন। টানা ৭২ ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরি নেই কোহলির। টেন্ডুলকারের রেকর্ড বোধ হয় আর ভাঙছে না কোনো দিন—এমনটাই আবার ভাবতে শুরু করেছিলেন প্রায় সবাই।

কুম্ভকর্ণের মতো লম্বা একটা ঘুম দিয়েই যেন গত বছর আড়মোড়া ভাঙলেন কোহলি। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি করেই আবার তিন অঙ্কের দেখা পেলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। চার মাস যেতে না যেতেই আরও দুবার ‘১০০’-এর দেখা পেলেন কোহলি, যার সর্বশেষটি পরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে।

কোহলির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৭৩তম সেঞ্চুরির পর আবার উঠেছে পুরোনো সেই প্রশ্ন—টেন্ডুলকারের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবেন কোহলি? ওয়ানডের রেকর্ডটা অবশ্য দৃষ্টিসীমাতেই চলে এসেছে কোহলির। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ৫০তম সেঞ্চুরি করে টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলতে যে আর পাঁচটি তিন অঙ্কের ইনিংস দরকার তাঁর।

শেষ ১৭ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি, এই গতিতে এগোলে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করতে কত ম্যাচ লাগবে কোহলির, এই হিসাব আবার নতুন করে করতে শুরু করেছেন অনেকেই।

১৭ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি, যার মানে প্রতি ৫.৬৭ ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি। ‘১০০’ থেকে কোহলির দূরত্ব এখন ‘২৭’। বর্তমান ফর্ম হিসাব করলে পাটিগণিতের হিসাবে ১৫৩ ম্যাচ লাগবে কোহলির শততম সেঞ্চুরির দেখা পেতে।

গড়ে প্রতিবছর ৪০টির মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন কোহলি। সেই হিসাবে প্রায় চার বছর লাগবে তাঁর। তত দিনে কোহলির বয়স ৩৮ পেরিয়ে যাবে। অত দিন খেলবেন তো দিল্লির ছেলে!

বর্তমান ফর্মের কথা ভুলে গিয়ে পুরো ক্যারিয়ারের হিসাব করলে প্রতি ৬.৬৪ ম্যাচে একবার তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন কোহলি। সেই ধারা মানলে কোহলিকে খেলতে হবে আরও ১৭৯ ম্যাচ। যার অর্থ ৬৬৪তম ম্যাচে ১০০ পাবেন কোহলি।

১৫৩

গত চার মাসের ফর্ম হিসাব করলে টেন্ডুলকারকে ছুঁতে কোহলিকে আরও ১৫৩ ম্যাচ খেলতে হবে।

১৭৯

পুরো ক্যারিয়ারের হিসাব করলে টেন্ডুলকারকে ছুঁতে কোহলিকে খেলতে হবে আরও ১৭৯ ম্যাচ। যার অর্থ ক্যারিয়ারের ৬৬৪তম ম্যাচে ১০০ ছোঁয়ার কথা কোহলির।

টি-টোয়েন্টির প্রভাব

বিরাট কোহলি যদি শেষ পর্যন্ত টেন্ডুলকারের সমান ৬৬৪ ম্যাচ খেলেও তাঁর রেকর্ড না ছুঁতে পারেন, তবে দায়টা টি-টোয়েন্টির ওপর চাপানোই যাবে। এমনিতেই টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির সুযোগ কম। ব্যাটিংক্রমের একদম ওপরে না খেললে সুযোগটা কমে যায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে কোহলির সেঞ্চুরি যে মাত্র একটি, সেটির মূল কারণ এটিই। অন্যদিকে টেন্ডুলকার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র একটি।

টেন্ডুলকার-কোহলির হিসাব থেকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির হিসাব বাদ দিলে সেঞ্চুরিপ্রতি ম্যাচের হিসাবে কোহলি এগিয়ে থাকেন বড় ব্যবধানেই। সে হিসাবে প্রতি ৬.৬৩ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি টেন্ডুলকারের। অন্যদিকে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে ৩৭০ ম্যাচে কোহলির সেঞ্চুরি ৭২টি। যার অর্থ টেস্ট-ওয়ানডেতে প্রতি ৫.১৪ ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি কোহলির। টেন্ডুলকার ৭২তম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন ৪৬৯তম ম্যাচে। শুধু টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে কোহলি ৭২তম সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৩৭০ ম্যাচে।