একসময় বাংলাদেশ দলে বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। মাঝেমধ্যে দু–একজন এলেও কেউ থিতু হতে পারেননি। রিশাদ হোসেন গত বছর মার্চে আসার পর এই অল্প সময়ের মধ্যে পাল্টাতে শুরু করেছে দৃশ্যপট। সংক্ষিপ্ত সংস্করণে রিশাদ এখন নির্ভরতার বড় নাম। তাতে একটি স্বপ্নও পূরণ হলো। যে দলে একটা সময় বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার খেলানোই ছিল স্বপ্ন, সেই দলে এখন লেগ স্পিনারই কোনো একটি সংস্করণে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে বছর শেষ করেন!
সেই রিশাদই টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এ বছর। গতকাল সেন্ট ভিনসেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (তৃতীয় টি–টোয়েন্টি) ধবলধোলাইয়ের ম্যাচে ২১ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ। চলতি বছর এটাই ছিল বাংলাদেশ দলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। টি–টোয়েন্টিতে দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েই বছর শেষ করলেন রিশাদ। ২৪ ম্যাচে ২৪ ইনিংসে বোলিং করে তাঁর শিকার ৩৫ উইকেট।
২৪ ইনিংসেই তাঁর বোলিং করা বুঝিয়ে দেয়, দল তাঁর ওপর কতটা নির্ভর করে। বিশেষ করে ডেথ ওভারগুলোয়। আর ৩৫ উইকেট বুঝিয়ে দেয়, লেগ স্পিনারদের বেড়ে উঠতে সময় লাগে, কথাটা ভুল প্রমাণ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নির্ভরতার প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন রিশাদ।
১৯ ম্যাচে ১৯ ইনিংসে ৩০ উইকেট নিয়ে চলতি বছর টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট পেসার তাসকিন আহমেদের। তবে তাসকিনের অর্জন অন্য জায়গায়, সেটি পরে বলা যাবে। তার আগে রিশাদের আরও একটি চমকপ্রদ বিষয় জানানো যাক।
লেগ স্পিনার খেলানোই যখন স্বপ্নপূরণের মতো বিষয় ছিল বাংলাদেশ দলে, সেখান থেকে এখন একজন লেগ স্পিনার একটি সংস্করণে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে এই বছর শেষ করায় সেটাকে যখন রীতিমতো শিহরিত হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার হিসেবে ধরা হচ্ছে, তখন কেমন হয়, যদি টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় শীর্ষেও থাকেন সেই লেগ স্পিনারই!
রিশাদ ছাড়া আর কে! টি–টোয়েন্টিতে এর আগে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি ছিল মোস্তাফিজুর রহমানের। ২০২১ সালে ২০ ম্যাচে ২০ ইনিংসে বোলিং করে ২৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। এবার রিশাদ ও তাসকিন তাঁকে ছাপিয়ে গেলেও সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তো প্রথমজনই। মোস্তাফিজ এ বছর ১৮ ম্যাচে ১৮ ইনিংসে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। ২০২১ সালে ১৮ ম্যাচে ১৮ ইনিংসে বোলিং করে সাকিব আল হাসান নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এ বছর সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় যৌথভাবে সাতে রিশাদ। অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পাও তাঁর সমান ৩৫ উইকেট নিয়েছেন। যদিও রিশাদের চেয়ে ৩ ম্যাচ কম খেলেছেন জাম্পা (২১ ম্যাচ)। হিসাবটি শুধু টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে করলে টি–টোয়েন্টিতে রিশাদ এ বছর এখন পর্যন্ত চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে ভারতের পেসার অর্শদীপ ১৮ ম্যাচে ১৮ ইনিংসে বোলিং করে ৩৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে। পাকিস্তানি পেসার শাহিন আফ্রিদির শিকারও ৩৬ উইকেট, তবে বোলিং করেছেন ২৩ ইনিংসে।
এই হিসাবের আরও চমকপ্রদ দিক হচ্ছে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর লেগ স্পিনারদের মধ্যে এ বছর এখন পর্যন্ত টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটই নিয়েছেন রিশাদ। তবে কম ম্যাচ খেলায় প্রথমে নাম থাকবে জাম্পারই, রিশাদ দুইয়ে—যদিও উইকেটসংখ্যা একই। ‘এখন পর্যন্ত’ কথাটি বলার কারণ—আগামী ২৮ ও ৩০ ডিসেম্বর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এ দুটি ম্যাচ খেললে রিশাদ ও জাম্পাকে টপকে যাওয়ার ভালো সুযোগ পাবেন। ১৮ ম্যাচে ১৮ ইনিংসে হাসারাঙ্গার শিকার ৩৪ উইকেট।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এ বছর সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন হংকংয়ের স্পিনার এহসান খান। ২৭ ম্যাচে ২৬ ইনিংসে ৪৬ উইকেট। আরব আমিরাতের পেসার জুনাইদ সিদ্দিকী ২৪ ইনিংসে নিয়েছেন ৩৯ উইকেট। ২১ ইনিংসে ৩৮ উইকেট নিয়ে তিনে সৌদি আরবের পেসার উসমান নাজিব।
তাসকিনের অর্জনের কথা বলা হচ্ছিল। এ বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তাসকিন। ৩০ ম্যাচে ৩৪ ইনিংসে ৬৩ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। ২০ ম্যাচে ৩২ ইনিংসে ৭৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরা। ৩৫ ম্যাচে ৪০ ইনিংসে বোলিং করে তাসকিনের সমান ৬৩ উইকেট নিয়ে তিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজারি জোসেফ। হাসারাঙ্গা এখানেও জোসেফ ও তাসকিনকে টপকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ২৮ ইনিংসে তাঁর শিকার ৬০ উইকেট।
তাসকিন এই ৬৩ উইকেট নিয়ে একটি তালিকার দুইয়েও উঠে এসেছেন। সেটি তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারের তালিকা, যেখানে ২০১০ সালে মোট ৪৩ ইনিংসে বোলিং করে ৭৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সাকিব।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ উইকেট মাশরাফি বিন মুর্তজার। ২৭ ম্যাচে ২৭ ইনিংসে ৪৯ উইকেট নিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। টেস্টে তাইজুল ইসলামের, ২০১৮ সালে ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে বোলিং করে নিয়েছিলেন ৪৩ উইকেট।