নতুন বলে সুইং করাবেন। বলটা করবেন ৪-৫ মিটার লেংথে। গতি ঘণ্টায় ১৩০–এর আশপাশে। দরকার হলে আসবেন মাঝের ওভারেও। ডেথ ওভারে লেংথটাকে নিয়ে যাবেন পপিং ক্রিজে, কখনো পিছিয়ে আনবেন ৬-৭ মিটারে। ইয়র্কার, স্লোয়ার, বাউন্সারের মিশেল থাকবে। ছন্দে থাকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বোলিং তো এমনই। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ‘থ্রি ফেইজ’ বোলার বলতে যা বুঝায়, সাইফউদ্দিন তা-ই। এবার তো তিনি চোট কাটিয়ে ফিরলেন বোলিংয়ে নতুন বৈচিত্র্য নিয়ে। সেই বৈচিত্র্য লাসিথ মালিঙ্গার বিখ্যাত স্লিঙ্গি অ্যাকশন!
আর ব্যাটিং? লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কাই তো তাঁর কাছে প্রত্যাশা। অন্তত ঘরোয়া পর্যায়ে সাইফউদ্দিনের ব্যাটিং বরাবরই কার্যকর। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তো ধারাবাহিকভাবেই রান করেন এই বাঁহাতি। কিন্তু শঙ্কা একটাই। চোটের লম্বা বিরতির পর ফিরে আসা সাইফউদ্দিন কেমন করবেন?
এই বিপিএলের আগে সাইফউদ্দিনের সর্বশেষ প্রতিযোগিতাপূর্ণ ম্যাচ খুঁজতে গেলে যেতে হবে ২০২৩ সালের মে মাসে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ তো খেলেছেন আরও আগে—২০২২ সালের ডিসেম্বরে, বিসিএলে। আর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালের অক্টোবরে, নিউজিল্যান্ড সফরে।
লম্বা এই বিরতির পরও ফেরার ম্যাচে উজ্জ্বল সাইফউদ্দিন। ফরচুন বরিশালের হয়ে এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ব্যাট আর বল হাতে পারফরম্যান্সে স্বস্তির সুবাতাস ছড়িয়েছেন তিনি। পাওয়ারপ্লে ও ডেথ ওভার মিলিয়ে ৪ ওভার বোলিং করে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৩০ রান তাঁর।
রানটা আরও বেশি হতে পারত। সাইফউদ্দিনের উড়িয়ে মারা বল স্পাইডার ক্যামেরায় লাগায় আরও একটি নিশ্চিত ছক্কা হাতছাড়া হয়। আজ তা নিয়ে মজা করছিলেন সাইফউদ্দিন, ‘ছক্কা না হওয়ায় সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে (হাসি)। ছক্কা হলে হয়তো ভুলে যেত। হ্যাঁ, আরেকটু রান বাড়ত। হয়তো ওই ছক্কার ফ্লোতে আরও রান হতো।’
ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ যেহেতু এল, চোটের কারণে পুরোদমে বোলিং করতে না পারায় বিপিএলের শুরু থেকে খেলার ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবির মেডিকেল বিভাগ। তবে তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। ব্যাটিং নিয়ে আলাদাভাবে কাজ শুরু করেছেন গত অক্টোবর থেকেই, ‘চেষ্টা করছি। আরও কয়েকটা ম্যাচ যাক। দেখি কতটা ধারাবাহিকভাবে করতে পারি। ওই জায়গায় ধারাবাহিকভাবে দ্রুত রান তোলা কঠিন। তবে আমি চেষ্টা করে যাব।’
এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা। নিজের মূল দক্ষতা বোলিংয়ে পুরোদমে ফিরতে পেরে কেমন লাগছে সাইফউদ্দিনের?
উত্তরটা শুনুন তাঁর মুখে, ‘ভালো লাগছে। খুব কঠিন মনে হয়নি। কারণ, খেলা হচ্ছে মিরপুরে, বিপিএল। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটেরই ম্যাচ। চারপাশে চেনা লোকজন। আমি জানি যে এখানে আমার কী করতে হবে। তাই ওই রকম ফেরার চাপ মনে হয়নি। তবে লম্বা সময় পর মাঠে ফেরার আনন্দটা অনুভব করেছি।’
ফেরার ম্যাচে একটা সাহসী কাজও করে ফেলেছেন সাইফউদ্দিন। কদিন আগেই নেটে অনেকটা লাসিথ মালিঙ্গার মতো ‘স্লিঙ্গি অ্যাকশনে’ বোলিং অনুশীলন করছিলেন তিনি। পেশাদার ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই মালিঙ্গার মতো বোলিং করেছেন। সাধারণত নেট অনুশীলনে করা নতুন অ্যাকশনের বোলিং ম্যাচে টেনে আনতে বোলারদের অনেক সময় লাগে।
সাইফউদ্দিন সেই অপেক্ষাটা করলেন না। এর পেছনে একটা যুক্তিও আছে তাঁর, ‘আমি এসব ক্ষেত্রে বেশি সময় নিই না। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এক ম্যাচে আমি নাকল বল করেছিলাম। ওই বল করার কিছুদিন আগেই আমি টিভিতে শার্দূল ঠাকুরকে নাকল বল করতে দেখি। এরপর দুই-এক দিন অনুশীলন করে ম্যাচে নাকল বল করেছিলাম। উইকেটও পেয়েছিলাম নাকল বলে। এই অ্যাকশনের ক্ষেত্রেও সেটাই করেছি। আপনাকে প্রেশারের সিচুয়েশনেই নতুন কিছু করতে হবে। সাহস নিয়ে করতে হবে। তাহলে দ্রুত রপ্ত হয়।’
সাইফউদ্দিনের স্লিঙ্গি অ্যাকশনে বল করার লক্ষ্য একটাই—ব্যাটসম্যানের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানো। হুট করেই ভিন্ন রিলিজ পয়েন্ট থেকে একটা বল ঠিক জায়গায় ফেলতে পারলেই হলো। ব্যাটসম্যানকে তখন একটির জায়গায় ভাবতে হবে দুটি রিলিজ পয়েন্ট নিয়ে, ‘এটা আসলে একটু জুয়া খেলার মতো। একটু ভিন্ন অ্যাকশনে করলে বল একটু স্কিডি হবে। ব্যাটসম্যানকে ডাবল মাইন্ডেড রাখার চেষ্টা করা আরকি।’
সাইফউদ্দিনের ফেরা নির্বাচকদের মনেও ভাবনার খোরাক জোগাবে। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জাতীয় দলের আশপাশে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জায়গায় একমাত্র প্রার্থী সাইফউদ্দিনই। ফিট থাকলে দলের সমন্বয়ের চাহিদা মেটাতে সাইফউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।