রোহিত শর্মা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেমন করবেন
রোহিত শর্মা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেমন করবেন

এবার কি দক্ষিণ আফ্রিকা জয় করতে পারবেন ‘নতুন রোহিত’

‘আগামীকাল আবার সূর্য উঠবে’।

২০১৮ সালের ১৮ জুলাই রোহিত শর্মার টুইট এটি। রোহিতের এমন টুইটের কারণ, ইংল্যান্ড সিরিজের টেস্ট দল থেকে তাঁর বাদ পড়া। সেই সময়ের ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সংবাদগুলো বলছে এমনটাই।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যর্থ হওয়ায় প্রথমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে জায়গা হারান। এরপর জায়গা পাননি  ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট দলেও। অথচ এই সময়ই রোহিত টেস্ট ক্রিকেট ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন। তবে এক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সেই স্বপ্নে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

রোহিতের ক্যারিয়ারে আবারও সূর্য উঠেছে। যে ভারতীয় টেস্ট দলে তাঁর জায়গাই হতো না, সেই দলের অধিনায়ক এখন তিনি। যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছিলেন টেস্ট দল থেকে, সেই সফরেই ভারত এবার খেলবে তাঁর নেতৃত্বে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রোহিত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। বরাবরই টেস্ট দলে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকা এই ব্যাটসম্যান সেই সফরের আগেই পায়ের নিচে একটু মাটি খুঁজে পেয়েছিলেন। কারণ, সর্বশেষ সিরিজেই পেয়েছিলেন শতক।

১৫.৩৭
টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় রোহিতের ব্যাটিং গড়

প্রায় এক বছর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দলে ফিরেছিলেন। সেই শতকের পর আবার তৃতীয় টেস্টে করেছিলেন জোড়া অর্ধশতক। স্বাভাবিকভাবেই রোহিতের চোখে তখন দলে থিতু হওয়ার স্বপ্ন ছিল।

২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টে রোহিত করেছিলেন মোট ৭৮ রান

সেই সফরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা প্রথম দুই টেস্টেই রোহিত ব্যর্থ হন। ২ টেস্টের ৪ ইনিংস মিলিয়ে রান করেছিলেন ৭৮, যেখানে সর্বশেষ ইনিংসেই করেছিলেন ৪৭। সেই সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ভারতীয় সব ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ ছিলেন। শুধু প্রথম টেস্টে হার্দিক পান্ডিয়ার ৯৩ রানের ইনিংসের পর বিরাট কোহলি দ্বিতীয় ইনিংসে শতক পেয়েছিলেন। তাতে অবশ্য প্রথম দুই টেস্টে ভারতের হার থেকে রক্ষা হয়নি। সবাই ব্যর্থ হলেও ব্যর্থতার দায়ে দল থেকে বাদ পড়েন রোহিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ করার পরও তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় টেস্টে রোহিতকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর বাদ পড়েন টেস্টের পরের দুই সিরিজ থেকেও।

রোহিতের টেস্ট ক্রিকেটে পুনর্জন্মও হয় এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের সিরিজ দিয়ে। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান থেকে টেস্টে ওপেনার হয়ে ওঠেন রোহিত। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে অভিষেক টেস্টে করেন জোড়া শতক। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যেটা একমাত্র ঘটনা। এরপর সিরিজের তৃতীয় টেস্টে রোহিত করেন দ্বিশতক। মূলত এর পর থেকে রোহিত আর পেছনে ফিরে তাকাননি। মিডল অর্ডার থেকে ওপেনার...দলে থিতু হওয়া...এরপর অধিনায়কত্ব পাওয়া।

৫২.৬৪
দেশের বাইরে ওপেনার হিসেবে রোহিতের গড়

টেস্টে ঘরের মাঠে রোহিত বরাবরই দুর্দান্ত। অভিষেক টেস্টেই শতক করা রোহিত ঘরের মাঠে ৩৬ ইনিংসে রান করেছেন ৬৬.৭৩ গড়ে। শতক ৮টি। তবে দেশের বাইরে ৪৮ ইনিংসে রোহিতের গড় ৩৪.৫১। শতক দুটি। ওপেনার হিসেবে খেলার পর থেকে দেশের বাইরে রোহিত ভালোই করছেন। গড়টাও বেড়েছে।

২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর রোহিতের দেশের বাইরে টেস্ট গড় ছিল মাত্র ২৫.৩৫। আর ওপেনার হিসেবে দেশের বাইরে তিনি ১৫ ইনিংসে রান করেছেন ৫২.৬৪ গড়ে। অস্ট্রেলিয়ায় ৪ ইনিংসে ওপেনার হিসেবে খেলে কোনো শতক পাননি। তবে কঠিন কন্ডিশনে সিডনিতে দুই ইনিংসে করেছিলেন ২৬ ও ৫২ রান। ব্রিসবেনে করেছিলেন ৪৪ ও ৭।

আর ইংল্যান্ডের মাটিতে পেয়েছেন শতক। ২০২১ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক করেন রোহিত, যেটি দেশের বাইরে তাঁর প্রথম শতক ছিল। এর আগে ওই সিরিজেই পেয়েছিলেন দুটি অর্ধশতক। সব মিলিয়ে ওপেনার হিসেবে ৮ ইনিংসে রান করেছেন ৫২.৫৭ গড়ে।

নিউজিল্যান্ডে ওপেনার হিসেবে খেলা হয়নি রোহিতের। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওপেনার রোহিত পেয়েছেন শতক। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে শতকের পর দ্বিতীয় টেস্টে খেলেছিলেন ৮০ ও ৫৭ রানের ইনিংস। গড়টা ৮০।

এবার রোহিতের সামনে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, যে সফরে কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। ২০১৩ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। এরপর ২০১৮ সালের সিরিজের কথা তো বলাই হয়েছে। সব মিলিয়ে রোহিত দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট খেলেছেন ৪টি। ৮ ইনিংসে তাঁর গড় ১৫.৩৭।

রোহিতের সামনে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাটিং করা সব সময়ই কঠিন। তাই বলে রোহিতের মতো অমিত প্রতিভার ব্যাটসম্যান টানা ৮ ইনিংসে ব্যর্থ হবেন! এই দক্ষিণ আফ্রিকায়ই বিরাট কোহলি ১৪ ইনিংসে রান করেছেন ৫১.৩৫ গড়ে, এমনকি এই দক্ষিণ আফ্রিকায় পেসার ভুবনেশ্বর কুমারেরও ৪ ইনিংসে ব্যাটিং গড় ৩৩।

হতে পারে টেস্টে রোহিতের শেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর এটি। প্রায় ৩৭ বছর বয়সী রোহিতের সামনে এটি হতে পারে শেষ সুযোগ। সেই সুযোগ নিঃসন্দেহে কাজে লাগাতে চাইবেন রোহিত। সেটা ওপেনার হিসেবেও, আবার অধিনায়ক হিসেবেও।