২০১৫ সালের এপ্রিল। মাত্রই শুরু হয়েছে ইংলিশ ক্রিকেটের নতুন মৌসুম। আর সেই মৌসুমের শুরুতেই হইচই ফেললেন অখ্যাত এক ব্যাটসম্যান। কাউন্টি ক্রিকেট নয়, ঘটনাটি ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের। চেশায়ার কাউন্টির ক্লাব ন্যান্টউইচের এক ব্যাটসম্যান ক্যাল্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ১৩৮ বলে করেছেন ৩৫০ রান, হইচই তো হবেই।
ব্যাটসম্যানের নাম লিয়াম লিভিংস্টোন। ২১ বছরের লিভিংস্টোন অমানুষিক সেই ইনিংস খেলার পথে মেরেছিলেন ৩৪টি চার ও ২৭টি ছক্কা।
বিস্ফোরক সেই ইনিংস খেলার পর লিভিংস্টোন বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, ‘১০০ হওয়ার পর আমি প্রতি বলেই ছক্কা মারার চেষ্টা করেছি। ৩ শর কাছাকাছি যাওয়ার পর মনে হলো, বিশেষকিছু হতে যাচ্ছে।’ লিভিংস্টোনের সেই ম্যাচে ৭ উইকেটে ৫৭৯ রান করে তাঁর দল, এরপর প্রতিপক্ষকে ৭৯ রানে অলআউট করে জেতে ৫০০ রানে।
সাড়ে নয় বছর পরও যে সেই লিভিংস্টোনের প্রতি বলেই ছক্কা মারার ইচ্ছে মরে যায়নি, সেটির প্রমাণ আবার পাওয়া গেল শুক্রবার রাতে। ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে তা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। ২৭ বলে খেলা ৬২ রানের ইনিংসে ৭টি ছক্কা মেরেছেন ৩১ পেরোনো এই ক্রিকেটার। ৭ ছক্কার চারটিই আবার লিভিংস্টোন মেরেছেন মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের ৩৯তম ওভারে। বৃষ্টিতে ৩৯ ওভারে নেমে আসা ম্যাচের সেই ওভারে মোট ২৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডও উপহার দিয়েছেন লিভিংস্টোন। ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার এটাই যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার।
লিভিংস্টোনের এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই ৫ উইকেটে ৩১২ রান করে ইংল্যান্ড। রান তাড়ায় ১২৬ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া। তাতে অবশ্য কোনো অবদান রাখতে পারেননি লিভিংস্টোন। এ মাসে খেলা ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা আগের ছয় ম্যাচেই হাত ঘোরালেও সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে লিভিংস্টোনের স্পিন বোলিং দরকার পড়েনি দলের।
অফ স্পিন ও লেগ স্পিন, দুটোই করা লিভিংস্টোন যে বোলার হিসেবে খারাপ নন সেটির প্রমাণ টি-টোয়েন্টির অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিং। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই ম্যাচে ১২৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টির এক নম্বর অলরাউন্ডর হয়ে যান ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলা লিভিংস্টোন।
সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও লিভিংস্টোনের ব্যাটের ঝাঁজ টের পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেদিন ৪৭ বলে ৮৭ রান করার পথে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা মেরেছিলেন। ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক জস বাটলার সুস্থ থাকলে অবশ্য এমন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিভিংস্টোন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সুযোগই পেতেন না। বাটলার চোট কাটিয়ে ফিরতে না পারাতেই শেষ মুহূর্তে তাঁকে দলে নেন নির্বাচকেরা।
ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ভালো করতে পারেননি লিভিংস্টোন (১৬ বলে ১৩ ও ১ বলে ০), ইংল্যান্ডও হেরেছে ওই দুই ম্যাচ। তৃতীয় ম্যাচে ২০ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি, ওই ম্যাচ ইংল্যান্ড জেতে ৪৬ রানে। এরপর গতকালের এই ইনিংস।
এত বছর পরও নিশ্চয় লিভিংস্টোন ২০১৫ সালের ক্লাব ক্রিকেটের সেই ম্যাচের কথা মনে করেন। তাঁর ক্যারিয়ারের ভিত্তি তো ওই ম্যাচই। ওই ম্যাচের মাসখানেক পড়েই স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্ল্যাস্টও জেতেন প্রথম মৌসুমে। ওই মৌসুমেই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও অভিষেক হওয়া লিভিংস্টোন পরের এপ্রিলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচটি খেলেন।
২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা অবশ্য রাঙাতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচে ১৬ ও ০ রান রান করার পর বাদ পড়েন দল থেকে। চার বছর পর আবারও জাতীয় দলে ফেরার পর চতুর্থ ম্যাচে ৪২ বলে সেঞ্চুরি করে ইংলিশ রেকর্ড গড়েন লিভিংস্টোন।
এরপর চোট ছাড়া লিভিংস্টোনের পথে বাধা হতে পারেনি আর কিছু।