এটা শামার জোসেফের টেস্ট। সেটা অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার পরে যাঁরা টিভি স্ক্রিনে চোখ রেখেছেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন। অভিষেক ইনিংসেই এই পেসার এমন কিছু করেছেন, যাতে সতীর্থ থেকে গ্যালারির দর্শকেরা সবাই তাঁকে করতালিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
টেস্টের প্রথম দিনটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। ব্যাট হাতে মূল্যবান কিছু রান যোগ করার পর বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন স্টিভেন স্মিথকে। ২৪ বছর বয়সী গায়ানা পেসারের স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত অ্যাডিলেড টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও।
দিনের শুরুতে ফিরিয়েছেন গ্রিনকে। এরপর মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়নকে। তাতেই দশম ক্যারিবীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে নিলেন পাঁচ উইকেট। জোসেফের এমন দুর্দান্ত স্পেলে অস্ট্রেলিয়াকে ২৮৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ট্রাভিস হেডের শতকে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার লিড ৯৫ রান।
অভিষেক টেস্ট ইনিংসেই ৫ উইকেট, সেটাও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, স্বাভাবিকভাবে জোসেফ উচ্ছ্বসিত। আর জোসেফের গল্পটাও তো আর পাঁচজন ক্রিকেটারের চেয়ে আলাদা। বছর দেড়েক আগেও নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করা জোসেফ পেশাদার ক্যারিয়ারেই এর আগে খেলেছেনই মাত্র ৯ ম্যাচ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস শেষে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে জোসেফ বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমি কতটা আবেগাপ্লুত, সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমার অবশ্যই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। আমার জন্য এটা দুর্দান্ত।’
কীভাবে এই সফলতা, সেই প্রসঙ্গে এই পেসার বলেছেন, ‘ ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। এক নম্বর টেস্ট দলের বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় কিছু। র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলের বিপক্ষে নতুন বলে বল করা চমৎকার ব্যাপার। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। (ব্যাটিংয়ের সময়) হেলমেটে আঘাত পেয়েছিলাম, তবে ভয় পাইনি। এর পর থেকে বল আরও কাছ থেকে দেখেছি।’ বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাটিংয়ে ১১ নম্বরে নেমে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন জোসেফ, অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ব্যাটসম্যানের এ পজিশনে যা সর্বোচ্চ।
বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাটিংয়ে ১১ নম্বরে নেমে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন জোসেফ, অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ব্যাটসম্যানের এ পজিশনে যা সর্বোচ্চ। সর্বশেষ টেস্ট সিরিজেও অভিষিক্ত এক বোলারের কাছে ভুগেছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্টে অভিষিক্ত আমের জামালের কাছে ৬ উইকেট খুইয়েছিল প্যাট কামিন্সের দল।
গতকাল ২ উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই আজ অস্ট্রেলিয়া হারায় গ্রিনকে। এরপর ক্রিজে আসেন ট্রাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়াকে লিড এনে দেওয়ার কাজটি করেছেন এই বাঁহাতিই। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম শতক। খেলেছেন ১৩৪ বলে ১১৯ রানের ইনিংস।
গ্রিনের বিদায়ের পর উসমান খাজা ব্যক্তিগত ৪৫ রান করে আউট হন। আজ মিচেল মার্শ বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। কেমার রোচের বলে ৫ রানে আউট হন। ব্যক্তিগত ১৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন অ্যালেক্স ক্যারি আউট হন, তখনো অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে ছিল ২০ রানে। সেখান থেকে স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন হেড। গত বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে শতকের পর টেস্ট এটি হেডের প্রথম শতক। কেমার রোচ ও অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রেভস ২টি করে উইকেট নিয়েছেন।
৯৫ রানে পিছিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৭ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়েছে।