মাঠ ও মাঠের বাইরেও বিতর্কিত হয়ে পড়ছে বিপিএল। বিপিএলে শৃঙ্খলা ফেরাতে গতকাল আলোচনায় বসেছিলেন বিসিবি কর্মকর্তারা।
বোর্ড সভা নয়, আবার অলিখিত বোর্ড সভাও বলা যায়। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও যে অনেক সময় এত পরিচালক আসেন না, যত পরিচালক গতকাল হাজির হয়েছিলেন ওয়েস্টিন হোটেলের অনানুষ্ঠানিক সভায়! বিসিবির ২৫ পরিচালকের মধ্যে ১৯-২০ জন পরিচালক এতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
হঠাৎ এমন সভায় বসার একমাত্র উদ্দেশ্য, বিপিএলে শৃঙ্খলা ফেরানো। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা হয়েছে বিপিএলে মাঠে খেলোয়াড়দের বারবার অশোভন আচরণ, আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিদের ভূমিকা এবং টেলিভিশন ও অনলাইন সম্প্রচারে অবৈধভাবে বেটিং–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে। যেসব কারণে বিপিএল বিতর্কিত হচ্ছে, আলোচনা হয়েছে সে রকম সব বিষয় নিয়েই এবং সেসবের সমাধানের পথও খোঁজা হয়েছে। এসব বিষয়ে শিগগিরই অনুষ্ঠেয় বোর্ড সভায় কিছু সিদ্ধান্তও নিতে পারে বিসিবি।
বিসিবি মনে করে, সাকিব যা করেছেন, সে তুলনায় খুব নগণ্য শাস্তিই হয়েছে তাঁর। এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো এনামুলের শাস্তিও আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কথা বলেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। ঘুরেফিরে এক কথাই, আলোচনা হয়েছে বিপিএল নিয়ে। কী আলোচনা, সেটা আর বিস্তারিত বলেননি তিনি।
তবে সভা শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বোর্ড পরিচালক জানিয়েছেন, আলোচনার মূল বিষয় ছিল বিপিএলের আগে এবং বিপিএলের মধ্যেও সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত আচরণ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিপিএলকে ‘যা-তা’ বলে মন্তব্য করে সাকিব বলেছেন, বিপিএলের প্রধানের দায়িত্ব পেলে দুই মাসের মধ্যেই এই টুর্নামেন্টের সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। ঢাকায় ফরচুন বরিশালের দুই ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণও করেছেন তিনি। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে তো দৌড়ে মাঠেই ঢুকে গেছেন। এ জন্য তাঁকে ম্যাচপ্রতি পারিশ্রমিকের ১৫ শতাংশ জরিমানা করেছেন ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ। ওই ম্যাচে অসদাচরণের জন্য একই শাস্তি পেয়েছেন রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান ও বরিশালের ওপেনার এনামুল হকও।
সভাপতিসহ বিসিবি পরিচালকেরা মনে করেন, সাকিব যা করেছেন, সে তুলনায় এই শাস্তি খুবই নগণ্য। ম্যাচ রেফারির উচিত ছিল আরও কঠোর শাস্তি দেওয়া। এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো এনামুলের শাস্তিও আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল বলে অনেকের মত। এ ক্ষেত্রে বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সভায়।
টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতে মাঠের শৃ্ঙ্খলার ক্ষেত্রে আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আম্পায়ারদের সব রকম সমর্থন দেওয়ার আশ্বাসও। সভার পর কাল রাতেই অনলাইনে বিপিএলের ম্যাচ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি সভা করার কথা ছিল আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার আহমেদের।
এবারের বিপিএলে আরেক বিতর্ক দেখা দিয়েছে সম্প্রচার নিয়ে। দেশে-বিদেশে টেলিভিশন ও অনলাইনে বিপিএলের খেলা চলাকালে বেটিং–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে, যাতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি। অথচ বিপিএলের টেলিভিশন সম্প্রচারস্বত্ব বিক্রির শর্তেই উল্লেখ আছে, এর সঙ্গে কোনো বেটিং–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জড়িত হতে পারবে না, যা দেশের আইনেরও পরিপন্থী।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে বলা হয়েছে সম্প্রচার স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বিপিএলের ম্যাচ সম্প্রচারে সব ধরনের বেটিংয়ের বিজ্ঞাপন বন্ধের ব্যবস্থা নিতে। এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান রাখতে চায় বিসিবি। একটি সূত্রে অবশ্য জানা গেছে, গভর্নিং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আরও আগেই সম্প্রচার স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, তার প্রমাণ, এরপরও বিপিএলের ম্যাচে দেখানো হয়েছে বেটিং–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন।