নিউজিল্যান্ড ফলনির্ভর খেলা খেলে না, এমন মন্তব্য করে সাবেক ক্রিকেটারদের তোপে মুখে পড়েছেন নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার ড্যারিল মিচেল। আজ ক্রাইস্টচার্চে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটে হেরে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে কিউইরা। ফলে ২০১১ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটি টেস্ট জয়ের অপেক্ষা বেড়েছে তাদের।
২৬৯ রানের লক্ষ্যে একসময় ৮০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ফেবারিট ছিল নিউজিল্যান্ডই, তবে সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ জয় এনে দেন মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি ও প্যাট কামিন্স।
হারের পর এসইএন রেডিওকে মিচেল বলেছেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে এসেছি, ব্ল্যাকক্যাপস হিসেবে আমরা ফলের দ্বারা সংজ্ঞায়িত নই। কীভাবে খেলছি, তা দিয়েই বোঝা যাবে আমাদের। আশা করি তাতে আমরা দেশকে (ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে) উৎসাহিত করতে পারব।’
ক্রাইস্টচার্চে প্রথম দিনই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড, ১০৭ রানে হারিয়ে ফেলেছিল ৮ উইকেট। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চতুর্থ দিনের শুরুতে তারাই ছিল ফেবারিট। স্বাভাবিকভাবেই এমন লড়াইয়ে গর্বিত মিচেল, ‘টেস্টজুড়ে নিজেদের প্রচেষ্টায় গর্বিত আমরা। যদিও চাওয়ামতো জয়টি পাইনি। তবে আমরা যদি এভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়াই, এভাবে ক্রিকেট খেলতে থাকি এবং হাসিমুখে তা করতে পারি এবং তাতে নিউজল্যান্ডে অনেক তরুণকে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত করতে পারি, তাহলে আমরা ঠিক কাজটিই করছি।’
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কোচ ও বেন স্টোকস অধিনায়ক হয়ে আসার পর থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকেও এমন কথা শোনা গেছে। ফলের ব্যাপারে চিন্তা না করে বিনোদনদায়ী টেস্ট ক্রিকেট খেলা—সেই দলের এমন লক্ষ্যের কথাও বলা হয়েছে।
অ্যাশেজে ওভালে শেষ টেস্টের আগে ইংলিশ ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুক যেমন বলেছিলেন, সে ম্যাচে জিতে সিরিজ ২-২ ব্যবধানে ড্র করতে পারলে তা হবে তাঁদের জন্য ‘নৈতিক জয়’। শেষ পর্যন্ত সেটি করেছিল ইংল্যান্ড, কিন্তু আগেরবারের সিরিজ জেতায় অ্যাশেজের ভস্মাধার থেকে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছেই। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে ব্রুকের বলা ওই কথার সূত্র ধরে সমালোচনা হয় বেশ। অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকেরাও এখনো সেটি টেনে ইংল্যান্ডকে খোঁচা দিতে ছাড়ে না।
মিচেলের মুখে সেই সুরের কথা শুনে অবশ্য সমালোচনা করেছেন সাবেক দুই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার জেরেমি কোনি ও ইয়ান স্মিথ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ৫২টি টেস্ট খেলা কোনি যেমন বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ হিসেবে আপনি যতটা পারেন কঠোর পরিশ্রম করেন, এ ধারণা সমর্থন করি। ব্যক্তিগত স্কিলের অনুশীলন করেন—সেটি যা-ই হোক না কেন। তার মানে (শুধু) ব্যাটিং বা বোলিং না, তার মানে মাঠে থাকা অবস্থায় আপনি কী করবেন, আপনার অবস্থানের দাবিটা কী।’
এরপর কোনি বলেন, ‘আপনি তো সতীর্থদের পেছন টেনে ধরবেন না। এ সব ব্যাপার, আপনি কী জন্য করছেন? হারতে? মাফ করেন। (আপনি এমন করছেন) জিততে। এসবের মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে জেতা। আর সেটির জন্য ক্রীড়াবিদও হতে হবে না আপনার। যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, এ কাজটি করে যেতে চাইলেই এমন করতে হবে। যদি বাজে করেন, তাহলে তো আপনি বাদ!
‘ফলে বলবেন না যে ফলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সম্পর্ক নেই। বুঝতে পারছি, সে কী বোঝাতে চাচ্ছে। তবে নিউজিল্যান্ড জিতলে তরুণরা তাদের অনুসরণ করবে। ড্যারিল, তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি—তারা তোমাদের সঙ্গেই থাকবে।’
মিচেলের কথার সঙ্গে একমত নন সাবেক উইকেটকিপার ও এখনকার ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথও, ‘আমি আসলে নিজেকে ঝামেলায় ফেলতে যাচ্ছি (এসব বলে)। একটু দম নিয়ে বলব, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের ‘ফল দ্বারা আমাদের বিচার করা হবে না’—নিউজিল্যান্ডের এক ক্রিকেটারকে এমন বলতে শুনলাম, সেটি বিশ্বাস হচ্ছে না।’
স্মিথ এরপর পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা যদি ড্যারিল মিচেলকে জিজ্ঞাসা করতাম, যদি তারা টেস্ট জিতত এবং এরপর একই প্রশ্ন করা হতো। সে তো বলত না, ‘সত্যি বলতে কী জেতা আমাদের কাছে গুরুত্ব রাখে না। এটি আসলে আমাদের যেভাবে প্রশংসা করা হচ্ছে এবং দর্শক আমাদের সম্মান করছে এবং তরুণরা খেলতে আসছে, সেটির ব্যাপার। আমি দুঃখিত। খেলা থেকে যদি অনেক দূরে সরে না গিয়ে থাকি, তাহলে আসলে আমি এটা বুঝতে পারছি না। স্রেফ বুঝতে পারছি না। আশা করি এটা ভুল ছিল।’