ছন্দে নেই পান্ডিয়া
ছন্দে নেই পান্ডিয়া

পান্ডিয়াই প্রথম নন, মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হলেই তাঁদের যেন কী হয়ে যায়

বেচারা হার্দিক পান্ডিয়া! কী ছিলেন, আর কী হয়ে গেলেন?

২০২২ সালে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট টাইটানসকে চ্যাম্পিয়ন করলেন। পরের মৌসুমে অর্থাৎ ২০২৩ সাল গুজরাট খেলল ফাইনাল। শেষ দুই বলে চেন্নাই সুপার কিংসের রবীন্দ্র জাদেজা ১০ রানের সমীকরণ মিলিয়ে না ফেললে চ্যাম্পিয়ন হতো সেবারও। পান্ডিয়া দুই মৌসুমে নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকে।

অথচ সেই পান্ডিয়া এবারের আইপিএলে? ট্রলের অন্য নাম। তাতে পান্ডিয়ার দায় কমই, তবে সেই ট্রলের জবাব দেওয়ার জন্য যে পারফর্ম করার প্রয়োজন ছিল, মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হিসেবে পান্ডিয়া তার ধারেকাছেও করতে পারেননি। মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হিসেবে এমন বাজে পারফরম্যান্স অবশ্য নতুন কিছু নয়। এই দায়িত্ব যেই নেন, তারই যেন কী হয়ে যায়! একজন অবশ্য ব্যতিক্রম আছে।

এই যেমন রোহিতের কথাই ধরুন না। মুম্বাইয়ের তো বটেই, কারও কারও মতে তো আইপিএলের সেরা অধিনায়ক তিনি। মুম্বাইকে জিতিয়েছেন ৫টি শিরোপা। আইপিএলে এর চেয়ে বেশি শিরোপা কোনো অধিনায়ক জেতেননি, ধোনিও জিতেছেন সমান ৫টি। তবে সেই রোহিতই বছরের পর বছর ধরে আইপিএলে ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন।

আইপিএলে ব্যাট হাতে সফল নন রোহিতও

প্রমাণ চান? আইপিএলে ২০১৬ সালের পর থেকে ২০২৩ সালের আইপিএল পর্যন্ত হওয়া ৭ মৌসুমে কখনো ৩০ গড়েও রান করতে পারেননি। এই সময়ে গড়ের হিসাবে তাঁর সেরা মৌসুম ছিল ২০২১ সালে। সেবার ১৩ ম্যাচে ২৯ গড়ে ৩৮১ রান করেছিলেন রোহিত। এরপর ২০২২ মৌসুমে ব্যাটিং করেছেন ১৯ গড়ে আর ২০২৩ সালে ২০.৭৫ গড়ে। তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর পেছনে নিশ্চয়ই এমন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের ভূমিকা ছিল। অর্থাৎ মুম্বাইকে এই আইপিএলের আগের ৭ আইপিএলে মুম্বাই অধিনায়ক পারফর্ম করতে পারেননি।

এবার নির্ভার হয়েও যে রোহিত খুব বেশি কিছু করতে পেরেছেন তা নয়। চেন্নাইয়ের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি করেছেন, এরপরও ১১ ইনিংসে মোট রান ৩২৬। আগের চেয়ে ভালো হলেও রোহিতের মান আর এবারের আইপিএলে যে রান উঠছে, সেই বিবেচনায় এমন পারফরম্যান্সকে খুব ভালো বলার সুযোগ নেই।

রোহিত মুম্বাইয়ের অধিনায়ক হন ২০১৩ সালে। তাঁর অধিনায়ক হওয়ার পেছনেও ছিল এর আগের অধিনায়কের ব্যর্থতা। তখনকার মুম্বাই অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের অফ ফর্মেই ২০১৩ সালে টুর্নামেন্টের মাঝপথে নেতৃত্ব পান রোহিত।

অধিনায়ক হিসেবে রান পেয়েছেন শুধু শচীন

সেই মৌসুমে ৫ ইনিংসে মাত্র ৫২ রান করতে পারেন পন্টিং, সেটাও ৭০-এর কম স্ট্রাইকরেটে। একাদশ থেকে বাদ পড়েন তিনি, নেতৃত্ব পান রোহিত। ভারত অধিনায়ক রোহিত অবশ্য সেই মৌসুমে সেরা ফর্মে ছিলেন। সেবার রান করেছিলেন ৫৩৮, যা আইপিএল তাঁর সর্বোচ্চ। দলকে দেন প্রথমবার আইপিএল জেতার স্বাদ।

পন্টিংয়ের আগে মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং। ২০১২ সালে অধিনায়ক হিসেবে খেলে হরভজন ১৭ ম্যাচে উইকেট পান মাত্র ৬টি। যেখানে এর আগের মৌসুমেই এই স্পিনার উইকেট পেয়েছিলেন ১৪টি। ২০১০ সালে ১৭টি। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, অধিনায়ক হওয়ার পর হরভজনের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিচের দিকে গেছে।

আগেই বলা হয়েছে, একজন ছিল ব্যতিক্রম। তিনি শচীন টেন্ডুলকার। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শচীন। এই সময়ে ব্যাট হাতে তিনি তাঁর কাজটা করে গেছেন। ২০১০ সালে ছিলেন আইপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। ১৫ ম্যাচে করেছিলেন ৬১৮ রান। মজার ব্যাপার হলো, এই ৬১৮ রান করতে শচীন ছক্কা মেরেছিলেন মাত্র ৩টি! পরের মৌসুমে ২০১১ সালেও করেছিলেন ৫৫৩ রান। তবে এই সময়ে মুম্বাই দল হিসেবে শিরোপা জিততে পারেনি। শিরোপা জয়ের শুরু রোহিতের হাত ধরেই।

এবার মুম্বাই পান্ডিয়াকে বেশ ঘটা করেই অধিনায়কত্ব দিয়েছিল। তবে কেন যেন পান্ডিয়াও এবার পারলেন না! তিনি এবার রান করেছেন ২০-এর কম গড়ে। ১১ ম্যাচে রান করেছেন মাত্র ১৯৮, উইকেট নিয়েছেন ৮টি। দলও ১১ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৩টিতে।

কাকতাল হোক কিংবা বড় হওয়ার চাপে হোক শচীন ছাড়া এর আগে স্থায়ীভাবে যাঁরাই মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউই নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। এই তালিকার নতুন সংযোজনই হচ্ছেন পান্ডিয়া।