বাংলাদেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান জালাল ইউনুস। অনেকের ধারণা পরিবর্তনের ঢেউ লাগতে পারে বাংলাদেশ দলের কোচিং প্যানেলেও। এমনও কৌতূহল আছে—বিসিবির পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এলে প্রধান কোচ থাকবেন তো চন্ডিকা হাথুরুসিংহে?
শ্রীলঙ্কান এই কোচ অবশ্য পুরো বিষয়টিকেই দেখছেন পেশাদারি দৃষ্টিতে। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমার ভবিষ্যতের কথা বললে, যত দিন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ আছে, আমি দায়িত্ব পালন করতে চাইব। তবে বোর্ড যদি বদলে যায় এবং তারা যদি পরিবর্তন চায়, আমার তাতেও সমস্যা নেই। তারা যদি আমাকে চালিয়ে নিতে বলে, আমাকে নিয়ে খুশি থাকে, আমিও খুশি মনে দায়িত্ব পালন করব।’
বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে তাঁর চুক্তি আছে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। তবে এ মুহূর্তে হাথুরুসিংহের সব মনোযোগ পাকিস্তানের বিপক্ষে বুধবার থেকে শুরু টেস্ট সিরিজের দিকে। তবে সে জায়গাতেও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ছুঁয়ে যাচ্ছে কোচকে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুতই বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভালো কিছু করে বাংলাদেশের মানুষকে অস্থির সময়ে কিছুটা স্বস্তি উপহার দেওয়ার ব্যাপারেও আত্মবিশ্বাসী হাথুরুসিংহে, ‘আমরা জানি, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার ও আশাবাদী করার ক্ষমতা আছে খেলাধুলার। এ ম্যাচটি ভালো খেলতে পারলে অবশ্যই সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মানসিকভাবে অনেক সাহায্য করবে।’
রাওয়ালপিন্ডির উইকেট-কন্ডিশন হবে পেস সহায়ক। ছয়জন বিশেষজ্ঞ পেসারে সাজানো পাকিস্তান দল দেখলতেই তা বোঝা যায়। হাথুরুসিংহে অবশ্য সব ধরনের উইকেটের জন্যই প্রস্তুত, ‘পিন্ডির উইকেট দেখে মনে হচ্ছে, তুলনামূলক পেস সহায়ক এবং ব্যাটিংয়ের জন্যও ভালো। তাদের স্কোয়াডেও দেখা যাচ্ছে, বেশি স্পিনার নেয়নি। বিষয়টা হলো, সম্প্রতি আমরাও ভালো ফাস্ট বোলার তৈরি করেছি। কন্ডিশন সাহায্য করলে আমাদের যথেষ্ট ভালো ফাস্ট বোলার আছে। দলে দুজন স্পিন অলরাউন্ডারও আছে। সাকিব আল হাসান ও মিরাজ—তারা বিশ্বমানের। আমাদের প্রায় সব দিকই ঠিক আছে এ মুহূর্তে।’
তবে হাথুরুসিংহে বেশি রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের পেসারদের নিয়েই। তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া পেস আক্রমণ পাকিস্তানের জন্য চমক হতে পারে, ‘আমি খুবই রোমাঞ্চিত (ফাস্ট বোলারদের নিয়ে)। তারা (পাকিস্তানিরা) হয়তো খুব বেশি দেখেনি এই বোলারদের। সর্বশেষ বিশ্বকাপে আমাদের ফাস্ট বোলাররা সহায়ক কন্ডিশনে খুব ভালো করেছে। এটি রাতারাতি হয়নি। প্রায় দুই বছর আমাদের এই ফাস্ট বোলিং গ্রুপটা একসঙ্গে আছে।’
অবশ্য পাকিস্তানের সঙ্গে পেস বোলিং বিভাগের অভিজ্ঞতার পার্থক্যটাও তুলে ধরেছেন হাথুরুসিংহে, ‘তারা একসঙ্গে হয়তো ২০টি টেস্টও খেলেনি। পাকিস্তানিদের তুলনায় তারা তরুণ ফাস্ট বোলার। তবু আমি খুবই রোমাঞ্চিত, দেখতে চাই ওরা কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।’
অন্য দুই সংস্করণের মতো বাংলাদেশের টেস্ট দলেরও মূল দুশ্চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। তবে পাকিস্তানের মাটিতে ব্যাটসম্যানদের কাছেও ভালো কিছুর প্রত্যাশা প্রধান কোচের, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং নিয়ে একটু চিন্তা করতেই হচ্ছে। কারণ, দেশের উইকেটে ২৫০ রানও জেতার মতো স্কোর। সেখানে ব্যাটসম্যানদের কাজটা কঠিন। পাকিস্তানের উইকেট সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক হয়। ব্যাট-বলে দারুণ লড়াই হয়। এখানে আরও ভালো ব্যাটিং করতে পারব।’
দুশ্চিন্তা ছিল সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ফর্ম নিয়েও। গত অক্টোবর থেকেই চোখের সমস্যা ভোগাচ্ছে তাঁকে। তবে গত কয়েক দিন অনুশীলনে সাকিবের ব্যাটিং দেখে সন্তুষ্ট কোচ, ‘সাকিব ভালো ব্যাটিং করছে। তাকে আরও ফিট মনে হচ্ছে। আমি জানি না, অনেকেই হয়তো জানে না, সে চক্ষুও পরীক্ষা করিয়েছে। সেটি তাকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে।’
পরশু থেকে শুরু সিরিজের পাকিস্তান দল থেকে ডানহাতি পেসার আমের জামালকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২৮ বছর বয়সী জামালকে দলে রাখা হয়েছিল ফিট হয়ে ওঠা সাপেক্ষে। ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে খেলার সময় পিঠের চোটে পড়েন এ ডানহাতি পেসার। কিন্তু সময়মতো সুস্থ না হওয়ায় তাঁকে সিরিজের আগে বাদ পড়তে হলো। প্রথম টেস্টের দল থেকে এর আগেই ছেড়ে দেওয়া হয় লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ ও টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান কামরান গুলামকে। দুজনেরই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে পাকিস্তান শাহিনসের হয়ে খেলার কথা।