সূর্যকুমার যাদব
সূর্যকুমার যাদব

অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি

যে কারণে বড় বাউন্ডারি পছন্দ সূর্যকুমারের

ছোট মাঠ পছন্দ নয় সূর্যকুমার যাদবের। তাঁর পছন্দ বড় মাঠে খেলা। রোহিত শর্মার চিন্তা তাতে অর্ধেক কমে গেল। অ্যাডিলেড ওভালে সোজা বাউন্ডারি একদিকে ৭৯ মিটার, আরেক দিকে ৮০ মিটার। অস্ট্রেলিয়ার অন্য যেকোনো মাঠের তুলনায় বড় এই মাঠে বাউন্ডারি মারার আগে যেখানে সবাই দুবার চিন্তা করেন, সেখানে সূর্যকুমারের অ্যাডিলেড ওভাল পছন্দই করার কথা!

এটা মনে হচ্ছে আজ অ্যাডিলেড ওভালের সংবাদ সম্মেলনে সূর্যকুমার সম্পর্কে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার কথা শুনে, ‘সে বড় মাঠে খেলতেই বেশি পছন্দ করে। একবার সে আমাকে বলেছে, ছোট বাউন্ডারির মাঠে খেলা তার পছন্দ নয়। কারণ, সে তখন মাঠে ফাঁকা জায়গা বের করতে পারে না। আমার বিশ্বাস, ও এখানে যথেষ্ট বড় ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাবে, ওটাই ওর শক্তি।’

সূর্যকুমারের সঙ্গে রোহিতের একটা মিল, রোহিতও সম্ভবত ‘বড়’ পছন্দ করেন। আর কিছু না হোক, অ্যাডিলেড ওভালের সংবাদ সম্মেলনে সব প্রশ্নের উত্তরই তিনি বেশ বড় করে দিলেন, বিস্তারিত বললেন। ধীরস্থির বাচনভঙ্গির রোহিত যেন চান সবাই যেন তাঁর কথার সব ভালোভাবে বুঝতে পারে। যেন কোথাও কোনো অস্পষ্টতা না থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা

সূর্যকুমারকে নিয়ে প্রশ্নটাও অবশ্য হলো যথেষ্ট বড়। এক প্রশ্নে কত না কৌতূহল! হওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন সূর্যকুমার। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট এখন পর্যন্ত তাঁরই। ৫ ম্যাচে ২২৫ রান করেছেন ৭৫ গড়ে। সূর্যকুমারের ভয়ডরহীন ক্রিকেট ভারতীয় দলের সবারই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু কোথা থেকে আসে এত সাহস?

রোহিত উত্তরটা দিলেন বেশ মজা করে, ‘এটাই হয়তো ওর অভ্যাস, সেখান থেকেই এটা আসে। ও কোনো ব্যাগেজ নিয়ে ঘোরে না। আমি স্যুটকেসের কথা বলছি না। সত্যি বলতে কী, ওর অনেক স্যুটকেসই আছে। শপিং করতে ভালোবাসে সে। কিন্তু বাড়তি চাপ নেওয়ার কথা যদি বলেন, ওরকম বাড়তি ব্যাগেজ, আমার মনে হয় না এটা তার মধ্যে আছে।’

সূর্যকুমারের অধিনায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, সূর্যকুমার শুধু এই বিশ্বকাপেই মারকাটারি ব্যাটিং করছেন না। এমন ব্যাটিং তাঁর মজ্জাগত। ২০২১ সালের মার্চে অভিষেক হওয়ার পর থেকেই সবাই এই সূর্যকুমারকেই দেখে আসছে। ‘এ থেকেই আপনারা ওর চরিত্রটা বুঝে নিতে পারেন। ও এভাবে খেলতেই পছন্দ করে। আমরা ২ উইকেটে ১০ রান করি বা ২ উইকেটে ১০০, ও এভাবেই ব্যাটিং করবে। সম্ভবত এ কারণেই ও গত বিশ্বকাপের দলেও ছিল’, বলেন রোহিত।

অ্যাকশনে সূর্যকুমার

পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনোরকমে জয়। ভারত যে খুব ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এসেছে, তা নয়। সূর্যকুমারের পারফরম্যান্স আবার এর বিপরীত। রোহিত সেটাকে বলছেন অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার, ‘ওকে দারুণ পরিণত দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে সে অন্যদের ওপর থেকেও চাপ সরিয়ে দিচ্ছে।’

ভালো কথা, এই বিশ্বকাপে সূর্যকুমারের স্ট্রাইক রেট দেখে যদি কারও চোখ কপালে ওঠে, তাদের জন্য বাড়তি তথ্য। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু আরও ভয়ংকর ব্যাটসম্যান তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৬টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ১৯৫.৪৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ২৬০। টি-টোয়েন্টিতে নিজের একমাত্র সেঞ্চুরিটিও (৫৫ বলে ১১৭) ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ বছরের জুলাইয়ে নটিংহামে করা।

সেমিফাইনালে কি জ্বলে উঠতে পারবেন সূর্যকুমার

তবে ট্রেন্টব্রিজের সেই সেঞ্চুরি নিশ্চিতভাবেই খুব বেশি আনন্দ দেয়নি সূর্যকুমারকে। এ মাঠের সর্বোচ্চ সীমানাই যে ৭০ মিটার, এক দিকে তো ৬০ মিটারও আছে! সূর্যকুমার এত ছোট মাঠের বড় তারকা হতে চান না। তাঁর পছন্দ বড় মাঠে বড় শট, বড় শটে বড় ইনিংস এবং বড় ইনিংসে বড় সাফল্য।

কাল তো এই সবকিছুই করে দেখানোর বড় উপলক্ষ তাঁর সামনে!