নবম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন সাকিব আল হাসান
নবম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছেন সাকিব আল হাসান

উৎপল শুভ্রর লেখা

কথার কথা নাকি সাকিব আসলেই সিরিয়াস

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে টুকরো টুকরো অনেক ভিডিও বানাচ্ছে আইসিসি। ইতিহাস-রেকর্ড এসব দিয়ে নানা রকম গ্রাফিকসও। সেসব ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই দর্শক আগ্রহ বাড়ানো।

নতুন কিছু নয়। সব বিশ্বকাপের আগেই আইসিসি এমন করে থাকে। ক্রিকেটের সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিলাষ থেকে এবার হয়তো একটু বেশিই করছে। আমেরিকানদের ক্রিকেট চেনাতে হবে না?

যেসব দেখতে দেখতে মনে হলো, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাস জানাতে আইসিসি ছোট্ট একটা ভিডিও বানালেই তো পারত! কাজটা এমন কঠিনও ছিল না। সাকিব আল হাসান আর রোহিত শর্মাকে একসঙ্গে বসিয়ে দিলেই হয়ে যেত।

বিশ্বকাপের ২০ দলে ৩০০ ক্রিকেটার, বাকি ২৯৮ জনের চেয়ে এই দুজন আলাদা। যাঁরা ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন, আছেন ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। ছিলেন মাঝের সাতটি আসরেও। এই দুজনকে তাই বলতে পারেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূর্তিমান ইতিহাস।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুজনের শুরুটা একসঙ্গে, শেষটাও তা-ই। মানে এত দিন এমনই ভাবা হয়েছিল আরকি! রোহিত শর্মার এটা শেষ বিশ্বকাপ, এ নিয়ে কারও দ্বিমত দেখছি না। সাকিব আল হাসানের শেষ নিয়ে আরও বেশি নিঃসন্দেহ ছিলেন সবাই। নিজেই তো সেই কবে বলে দিয়েছেন, ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেই বিদায় জানাবেন ক্রিকেটকে। তার মানে তো এটাই সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ। পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬ সালে। তত দিনে সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে সাকিবের প্রথম বছরটা কাটিয়ে ফেলার কথা।

এখন তো দেখছি, বলতে হচ্ছে ‘কথা ছিল’। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগ এবার দারুণ একটা কাজ করেছে। বাংলাদেশ দলের ১৫ জন ক্রিকেটারের ছোট্ট ভিডিও ইন্টারভিউ করে একটা-একটা করে তা ছেড়েছে সংবাদমাধ্যমের জন্য। এটাই সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ কি না—এ নিয়ে প্রশ্নটার উদ্ভবও সেখান থেকেই।

বিসিবির ভিডিওতে এখন পর্যন্ত সব কটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার তৃপ্তির কথা জানানোর পর সাকিব যা বলেছেন, তার অর্থ আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে পারলে মন্দ হয় না! তার মানে কি সাকিব ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দেখছেন নিজেকে? সরাসরিই যেখানে বলেছেন, তখন প্রশ্নবোধক চিহ্নটার কী দরকার? দরকার আছে, কারণ সাকিব আসলেই সিরিয়াস, নাকি কথার কথা হিসেবে এমন বলেছেন, এই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারছেন না। সাকিব নিজেও নিরুত্তর।

উত্তর হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। আবার সাকিবকে যতটুকু চিনি, না-ও পাওয়া যেতে পারে। কথাবার্তায় স্ট্রেট কাট হলেও মাঝেমধ্যে তাঁরও হেঁয়ালি করতে ইচ্ছা করে। অবসর নিয়েও তা করলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই যদি এটা সাকিবের চাওয়া হয়, তাহলে চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মেলাতে আরও অনেক কিছুর মিলতে হবে। বয়সের ব্যাপার আছে, ফর্মেরও। ২০২১ সালেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‌‘বয়স ৩৪ হয়ে গেছে। আর বড়জোর তিন-চার বছর খেলব।’ পরে হিসাবটা ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সঙ্গে মিলে গিয়েছিল।

এমনও হতে পারে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা তাঁর জীবনের এমন অপরিহার্য একটা অংশ হয়ে গেছে যে পরের বিশ্বকাপে না থাকার কথা সাকিব ভাবতেই পারছেন না। টি-টোয়েন্টির সব বিশ্বকাপ খেলায় সাকিবের সঙ্গী রোহিত শর্মা প্রথম বিশ্বকাপেই শিরোপার স্বাদ পেয়ে গেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড টেন্ডুলকার-সৌরভ-দ্রাবিড়দের বিশ্রাম দিয়ে তরুণ প্রকল্প হাতে না নিলে যা হতো না।

সাকিবের এমন কোনো দলীয় অর্জন নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় কোনো সাফল্য বলতে এখনো ফিরে যেতে হয় ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেটিই বাংলাদেশের অভিষেক। আশরাফুলের ব্যাটের ছটায় সেই ম্যাচে বাকি সবাই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি ৬২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে ফেরা আফতাব আহমেদও। এটা তাই খুবই স্বাভাবিক যে সেই ম্যাচে সাকিবের পারফরম্যান্সও হয়তো কারও মনে নেই। ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৩ রান। তবে বোলিংয়ে ৩৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিবই ছিলেন বাংলাদেশের সফলতম বোলার।

ব্যক্তিগত অর্জনের ডালা ভালোই ভরেছে এরপর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেট তাঁর। আর ৩টি উইকেট পেলেই উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি হয়ে যাবে। এই বিশ্বকাপেই তা না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এসব ব্যক্তিগত অর্জন কি সাকিবের বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসও বের করে আনে না?
ক্রিকেট তো শেষ পর্যন্ত দলের খেলা। সেখানে যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সফলতম বোলারের অর্জনে ধু ধু বালুচর। শেষ বিশ্বকাপটাতে কি অন্য কোনো গল্প লিখতে পারবেন সাকিব?

শেষ বিশ্বকাপ? কে বলল! সাকিব নিজেই না অন্য কথা বলছেন!