গত ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান—দুই দলেরই প্রথম ম্যাচ ছিল বিশ্বকাপে। আফগানদের সে ম্যাচে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দলের বিশ্বকাপের শুরুটা হয়েছিল দারুণ আর আফগানদের ছিল পুরো বিপরীত। বাংলাদেশের পর ভারতের কাছেও হারে মনে হচ্ছিল, আগের দুবারের মতোই বিশ্বকাপে শুধু ব্যর্থতার গল্পই লিখতে চলেছে আফগানিস্তান। তবে বিশ্বকাপ থেকে শেষ পর্যন্ত দুই দল ফিরেছে পুরো বিপরীত অবস্থানে থেকে।
আগের দুই আসরে ১৫টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টি জেতা আফগানিস্তান প্রথম চমক দেয় দিল্লিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। এরপর চলে স্বপ্নযাত্রা। গত মাসে শেষ হওয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের খুব কাছেই চলে গিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ৪ জয়ে ছয়ে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের পর সাবেক আরও দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকেও হারায় তারা। জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও। কিন্তু হাতের মুঠোয় থাকা জয় ছিনিয়ে নিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে উড়ে যাওয়াও আফগানিস্তানের সেমিফাইনালের স্বপ্নের পথে হয়ে দাঁড়ায় বড় বাধা।
সেই বাংলাদেশের কাছে কেন হেরেছিলেন, সেটির একটি কারণ তুলে ধরেছেন আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট। সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি বাজে ছিল। আমরা হয়তো প্রথম ম্যাচ বলে নিজেদের ওপর বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছিলাম। ব্যর্থও হই পুরোপুরি।’
দিল্লিতে ভারতের কাছে পরের ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারলেও ব্যাটিংয়ে উন্নতি হয়েছিল আফগানদের। একই ভেন্যুতে পরের ম্যাচ খেলা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অঘটন ঘটাতে সহায়তা করেছে বলেও মনে করেন সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান, ‘দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে একটু উন্নতি দেখেছি। (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) ম্যাচের আগে দিল্লিতে খেলেছি বলে কীভাবে খেলতে হবে, সে ব্যাপারে একটু তথ্য পেয়েছিলাম।’
মাঝে চার ম্যাচের মধ্যে আফগানিস্তান হারায় সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে। সেমিফাইনালের স্বপ্নটাও উঁকি দিতে থাকে তখন। ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় সে পথ অনেকটাই পরিষ্কার করে দিতে পারত তাদের। তবে ৯১ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে পার করান ম্যাক্সওয়েল।
সে ম্যাচের দিকে ফিরে তাকিয়ে ট্রট বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচটি কঠিন ছিল। আর আমাদের হারাতে ম্যাক্সওয়েলকে খুব, খুব বিশেষ কিছু করতে দেখেছি। আমাদের হারাতে গেলে যদি মানুষকে এভাবেই খেলতে হয়, তাহলে যতক্ষণ আমরা সামর্থ্যের সব দিয়ে চেষ্টা করছি, ততক্ষণ আমি কিছু মনে করব না। কিন্তু আমি এখনো অনেক কিছুই মনে করি (ওই ম্যাচ নিয়ে)!’
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যেতে না পারলেও ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ আফগানিস্তান ঠিকই করে নিয়েছে। সামনে তাকিয়ে ট্রট বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে, সেরা কোচদের অধীনে থেকে, সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলে আমাদের খেলোয়াড়দের নিউক্লিয়াসের একটা ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এ দল এখান থেকে শুধু ভালোই করতে পারে। এখন তাই এটি রোমাঞ্চকর। আফগানিস্তান সেসব খেলোয়াড়কে একসঙ্গে পাচ্ছে, অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছে। এখন নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্বমঞ্চে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারি।’
আগামী বছরের জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলেও মনে করেন ট্রট, ‘একটা জিনিসই বলব, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতে যাতে এবার যা শিখেছি, সেই ইতিবাচক ব্যাপারগুলো কাজে লাগাই, চাপ এবং কী হতে চলেছে—এ ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিই। হুট করেই পাদপ্রদীপের আলো এসে পড়েছে খেলোয়াড়দের ওপর। ফলে নিশ্চিত করতে হবে, এবারের বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ জিতেছি এবং ভালো করেছি বলেই যাতে আমরা সেখানে গিয়ে হাজির না হই।’