সাকিব ফর্মে ফিরলে বাংলাদেশেরই লাভ
সাকিব ফর্মে ফিরলে বাংলাদেশেরই লাভ

‌‘কাউকে উত্তর দেওয়ার জন্য খেলি না’

টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ ১৯ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সেই ২০২১ সালে। প্রথম দুই ম্যাচে বোলিং করেছেন মাত্র ৪ ওভার। ব্যাটসম্যান সাকিব এমনই বিবর্ণ যেন ব্যাটিং করাই ভুলে গেছেন। চারপাশে ‘সাকিব শেষ, সাকিব শেষ’ বলে উঠে যাওয়া রব। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৪ রানের তাই অনেক মহিমা। যদি ভেবে থাকেন, সাকিব আল হাসান এ নিয়ে খুবই আপ্লুত, তাহলে ভুল করবেন।

মনে মনে আপ্লুত হলেও হতে পারেন। কিন্তু কথায় সেটির প্রকাশ থাকলে তিনি আর সাকিব কেন! এই বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর অনেক কথা হয়েছে, ছুটে এসেছে সমালোচনার তিরও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর বীরেন্দর শেবাগ অনেক কথা বলে সাকিবকে অবসর নিয়ে নেওয়ার একটা বিকল্প পথও বাতলে দিয়েছিলেন। এভাবে ফিরে আসা কি সেসবেরই উত্তর?

আমি কাউকে উত্তর দেওয়ার জন্য ক্রিকেট খেলি না। আমার মনে হয়, ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানদের কাজ ব্যাটিং করা, রান করা। বোলারদের কাজ উইকেট নেওয়া। ফিল্ডারদের কাজ ভালো ফিল্ডিং করা, ক্যাচ নেওয়া।
সাকিব আল হাসান

সাকিব প্রশ্নটাকে পাত্তাই দিলেন না, ‘আমি কাউকে উত্তর দেওয়ার জন্য ক্রিকেট খেলি না। আমার মনে হয়, ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানদের কাজ ব্যাটিং করা, রান করা। বোলারদের কাজ উইকেট নেওয়া। ফিল্ডারদের কাজ ভালো ফিল্ডিং করা, ক্যাচ নেওয়া।’

নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতেই রাজি নন। বৃহত্তর ছবিটাই যে তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করে গেলেন প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই। যেমন ‘টি-টোয়েন্টিতে কেউ ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে অতটা ভাবে না’, ‘দলে কতটা অবদান রাখা গেল, এটাই আসল কথা’, ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের কারও ১৬/১৭ ওভার ব্যাটিং করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আজ আমি তা করতে পেরেছি বলে খুশি’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪৬ বলে ৬৪ রান করেছেন সাকিব আল হাসান

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে যতবার প্রশ্ন করা হলো, প্রতিবারই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে একই উত্তর। ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্টের এই মাঠেই ক্রিকেটার সাকিবের নতুন অধ্যায়ের শুরু। মাশরাফি চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎই অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তৃতীয় বছর কাটাতে থাকা তরুণ সাকিব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। পরে ওয়ানডে সিরিজও। এই ম্যাচে খেলতে নামার আগে সেই সুখস্মৃতি কি মনে ছিল?

এই প্রশ্নেরও সরাসরি কোনো উত্তর নেই। শুধু সেন্ট ভিনসেন্টে আটকে না থেকে ব্যাপারটিকে পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ছড়িয়ে দিতে চাইলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিনি সব সময়ই ভালো করেন। এখানে খেলতে খুব পছন্দ, এটা তো আগে অনেকবারই বলেছেন।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪৮ রানের জুটি গড়ার পথে সাকিব আল হাসান ও তানজিদ হাসান

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে কি বিশ্বকাপে আরেকটি নেদারল্যান্ডস-ম্যাচের কোনো মিল খুঁজে পান? ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর প্রথম আলোতে অধিনায়ক সাকিবের একটা কলাম নিয়ে দেশে তখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। এরপরই চট্টগ্রামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ, যেটিতে সাকিব প্রচণ্ড চাপে। বিশ্বাস করবেন কি না, সাকিবের নাকি তা মনেই নেই! হেসে বললেন, ‘এত কিছু মনে রাখেন আপনারা! আমার মেমোরি খুব শর্ট।’

মেমোরি যত শর্টই হোক, এই অপরাজিত ৬৪ সাকিবের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আবার কে জানে, সাকিব তো, এটাও ভুলে যেতে পারেন।