বেন স্টোকসের জন্য পরিস্থিতিটা খুব একটা পরিচিত নয়। অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের ভাগ্য ঝুলছে, অথচ স্টোকসের মাঠে কিছু করার নেই। ২০১৯ সালের মতোই আবারও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে হেডিংলি টেস্ট, তবে এবার আর চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান তাড়ার নায়ক নন স্টোকস। ড্রেসিংরুমে এতটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন, ইংল্যান্ডের শেষের ২০ রান তিনি দেখেনইনি। ম্যাচের শেষ আধা ঘণ্টায় প্রায় ২ কিলোমিটার সমান পথ নাকি পায়চারিই করেছেন স্টোকস!
চাপের মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভরসার নাম যে স্টোকস, সেটি এখন জানা কথাই। প্রথম ইনিংসে যখন অস্ট্রেলিয়াকে উঁকি দিচ্ছিল বড় লিড, আবারও দাঁড়িয়ে যান স্টোকস। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়ায় তেমন কিছু করতে পারেননি, ছয়ে নেমে ১৫ বলে ১৩ রান করেই আউট হয়ে যান। স্টোকসের অভিষেকের পর থেকে রান তাড়া করে ৩ বা এর কম উইকেটে ইংল্যান্ড জিতল এ নিয়ে তিনবার। ২০১৯ অ্যাশেজে হেডিংলিতে ১ উইকেটে জেতা ম্যাচে তো স্টোকসই ছিলেন মূল নায়ক। এর বাইরে ২০২০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেবার অবশ্য ষষ্ঠ উইকেট জুটিতেই অনেকটা এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
এবার স্টোকস যখন আউট হন, জয়ের জন্য তখনো ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৯০ রান। হ্যারি ব্রুক ও ক্রিস ওকসের জুটি ইংল্যান্ডকে এরপর এগিয়ে নেয় অনেকটাই। তবে জয়ের জন্য ২১ রান বাকি থাকতে থামেন ব্রুক, এরপরই আর খেলা দেখার সাহস করেননি স্টোকস। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক নিজেই বলেছেন, ‘মিথ্যা বলব না, শেষের দিকে স্নায়ুচাপে ভুগছিলাম। আমরা জানতাম অ্যাশেজ সিরিজ জেতার আশা টিকিয়ে রাখতে গেলে এ ম্যাচ জিততেই হবে।’
বাইরে থেকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে স্টোকস বলেছেন, ‘শেষ আধ ঘণ্টায় হেডিংলি ড্রেসিংরুমে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটেছি, আসলে শেষ ২০ রান হতে দেখিনি। যখন আপনি কিছু করতে পারবেন না, ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারবেন না, তখন এটি পুরোই ভিন্ন একটা পরিস্থিতি। আপনি শুধু দেখতে পারেন, আর আশা করতে পারেন যাতে সব কিছু আপনার পক্ষে আসে। এ ম্যাচের আগে সিরিজ যেখানে ছিল, এরপর ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবার অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা ছিল।’
ব্রুকের সঙ্গে ওকস ও মার্ক উডের ব্যাটিং পার করিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ৭৫ রানের ইনিংসের পথে বলের হিসাবে দ্রুততম ১ হাজার রানের মালিক হয়ে গেছেন ব্রুক। স্টোকস দারুণ প্রশংসা করেছেন ২৪ বছর বয়সী ইয়র্কশায়ার ব্যাটসম্যানের, ‘সিরিজে যে অবস্থানে, যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, তাতে ইনিংসটি দারুণ চাপের মুখে খেলতে হয়েছে। ম্যাচ জেতাতে এমন অবদান রাখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রুক বেশ ক্ষুরধার মস্তিস্কের ছেলে, মেধাবী ছেলে। আমার ধারণা ব্যাট হাতে তার মেধাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিয়েছি আমরা।’
সিরিজে আগের দুই ম্যাচেও জয়ের সম্ভাবনা বেশ ভালোভাবেই তৈরি করেছিল ইংল্যান্ড। তবে শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে তাদের। সে দিক থেকেও এ জয়টি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন স্টোকস, ‘প্রথম দুই ম্যাচ আমাদের পক্ষে আসেনি। যদি এ ম্যাচটিও খুব কাছে গিয়ে না জিততাম, তাহলে মনে হতে পারত, “হয়তো হবে না আর”। অবশ্যই আমরা দারুণ খুশি এ ম্যাচ জিতে। তবে আমরা যা জানি, আমাদের যা করতে হবে—এটি তার শুরু কেবল।’