পিসিবির মেডিকেল বিভাগের ভুলে ফাস্ট বোলার ইহসানউল্লাহর ছোটখাটো চোট বড় হয়ে ক্যারিয়ারকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিল, এমন অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের মার্চ-এপ্রিলে পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে অভিষেক হয় ইহসানউল্লাহর। এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকের ম্যাচে কনুইয়ে চোট পাওয়ার পর থেকে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে এ ২১ বছর বয়সী। গত পিএসএলে ১৫.৭৭ গড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২টি উইকেট নেওয়ার পর ইহসানউল্লাহকে জাতীয় দলে ডাকা হয়।
ইহসানউল্লাহর কনুইয়ের হাড়ে যে চিড় আছে, পিসিবির করানো স্ক্যানে শুরুতে নাকি সেটি ধরাই পড়েনি। পিএসএলে এ পেসার যে দলে খেলেছেন, সেই মুলতান সুলতানসের মালিক আলী তারিন ইএসপিএনক্রিকইনফোর কাছে এমন অভিযোগ করেছেন। কনুইয়ের ওই চিড় নিয়েই ইহসানউল্লাহ জিম করেছেন, এমনকি সে সময় বোলিংও করেছেন।
তবে ব্যথা দূর না হওয়ায় আবারও স্ক্যান করানোর পর ইহসানউল্লাহর হাড়ে চিড় ধরা পড়ে। পিসিবির বাইরের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ চোট ইহসানউল্লাহর ক্যারিয়ারকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারত। সেটি না হলেও আগের মতো গতিতে বোলিং করতে পারবেন না—হতে পারত এমনও।
অবশ্য ইহসানউল্লাহর চোট নিয়ে গাফিলতি করেছেন, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান ডাক্তার সোহেল সেলিম। ক্রিকইনফোকে তিনি বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে কোনো অব্যবস্থাপনা হয়নি। দেরি হয়েছে (শুরুতে স্ক্যান ধরতে) সেটি স্বীকার করব, তবে অব্যবস্থাপনা হয়নি।’
তাঁর দাবি, ‘আমি বলেছিলাম যে নতুন করে পরীক্ষা করানো হোক। কারণ, সাধারণ ওয়ার্কলোডের লক্ষণের চেয়ে বড় মনে হচ্ছিল। এটি তখনকার পিসিবির চিকিৎসকেরা করেছিলেন, আমার দল নয়। একটি ল্যাব আমাদের যে এমআরআই স্ক্যান রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে ভুল বোঝা গিয়েছিল। একই স্ক্যান আবার করানোর নির্দেশ দিই আমি, এরপর স্ক্যানে ধরা পড়ে।’
ইহসানউল্লাহ প্রথম যেদিন বোলিং করতে যান, তখনোই তাঁর সন্দেহ হয় বলেও দাবি করেছেন সেলিম। তাঁর পরামর্শে এরপর বাইরে থেকে একজন শল্যবিদ এনে অস্ত্রোপচারও করানো হয় ইহসানউল্লাহর। তবে এরপরও এখনো কনুই পুরোপুরি সোজা করতে পারছেন না এ ফাস্ট বোলার। তবে সেলিম বলছেন, এটা ব্যতিক্রমী কিছু নয়, অস্ত্রোপচারের পর সবার ক্ষেত্রেই এমন হয়। তাঁর দাবি, ‘এমন গুরুতর চোট থেকে তিন মাসে সেরে ওঠা যায় না, অনেক বেশি সময় লাগে।’
সেলিম পাল্টা এমন অভিযোগও করেছেন, লাহোরে পিসিবির ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে থাকেননি ইহসানউল্লাহ। এমনকি বাইরের কাউকে দিয়ে ফিজিওথেরাপিও নিয়েছেন। এদিকে মুলতানের মালিক তারিনের দাবি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন চিকিৎসকের মতে ইহসানউল্লাহর কাঁধেও চোট আছে। পিসিবি সেটিও খেয়াল করেনি, যেটিতে লাগতে পারে আরেকটি অস্ত্রোপচার।
এরই মধ্যে টুইটারে তিনি বলেছেন, সেরে ওঠার এই সময়ে ইহসানউল্লাহর খরচ বহন করেছে মুলতান। এ মাসে তাঁকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি। অবশ্য এমন মন্তব্যের পর পিসিবি চেয়ারম্যান তারিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন ইহসানউল্লাহর ইংল্যান্ডের সব খরচ পিসিবিই বহন করবে বলেও জানা গেছে।
ইহসানউল্লাহর চোট নিয়ে এই জটিলতা পিসিবির মেডিকেল বিভাগকে আরেকবার আলোচনায় আনল। ক্রিকইনফোর দাবি, পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এবং কোচিং ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফ ব্যক্তিগতভাবে তাদের বলেছেন—খেলোয়াড় ও ডাক্তার সেলিমের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
২০২১ সালে করোনাভাইরাসের সময় পিএসএল আয়োজনে ব্যর্থ হয়ে পিসিবি ছেড়েছিলেন সেলিম। তবে ২০২৩ সালে নাজাম শেঠি চেয়ারম্যান থাকার সময় আবার পিসিবিতে ফেরেন।
এর আগে শাহিন শাহ আফ্রিদির চোট ধরতেও ভুল করেছিল পিসিবির মেডিকেল বিভাগ। হাঁটুর লিগামেন্টের চোট থাকার পরও সে সময় দলের সঙ্গে ভ্রমণ ও ক্যাম্প করেছিলেন শাহিন। এরপর নিজ উদ্যোগে ইংল্যান্ড গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। সে সময় এ ব্যাপারে পিসিবির সমালোচনাও করেছিলেন শাহিনের পরবর্তীকালে শ্বশুর ও পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি।
অবশ্য আফ্রিদির চোটের সময় পিসিবিতে ছিলেন না ডাক্তার সেলিম। তবে পিসিবির মেডিকেল বিভাগের পক্ষে তাঁর যুক্তি, ‘যুক্তরাজ্যে থাকা মানুষ আমাকে পরামর্শ দেয়। আমিও তাদের পরামর্শ দেব, এখানে এসে কাজ করুক। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে আমি তাদের আমন্ত্রণ জানাই। কোনো খেলোয়াড়ের জন্য আমরা নিজেদের সেরাটি দিইনি, এমন কখনো হয়নি। আর যুক্তরাজ্যের ক্রীড়াবিজ্ঞান যদি এতই বিশেষ কিছু হতো, তাহলে বেন স্টোকস বিশ্বকাপে যেত (সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন স্টোকস)।’